ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

ইসলাম ও সমাজ

রজবে রমজানের আগমনী বার্তা

রজবে রমজানের আগমনী বার্তা

ফাইল ছবি

মো. শাহজাহান কবীর

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০:৫৮

রাসুলে আকরাম (সা.)-এর হাদিস সূত্রে জানা যায়, যখন রজব মাস শুরু হতো, তখন মহানবী (সা.) দু’হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে এই দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদের পড়তে বলতেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরি রামাদান’ (মুসনাদে আহমদ)। 

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। সম্মানিত রজব মাস আমাদের রমজানের ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলে পাক (সা.)কে রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি যে, রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত অধিক রোজা রাখতে দেখিনি। 

রাসুলে পাক (সা.) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করতেন। হাদিসে বর্ণিত– হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, রাসুলে পাক (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। 

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজির (সা.) আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’ কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসুলে পাক (সা.) রজব মাসে ১০টি রোজা, শাবান মাসে ২০টি রোজা এবং রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।

অপর হাদিসে বর্ণিত– রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস’ (তিরমিজি)। ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) জমি চাষ করল না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) জমি আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)।

রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষত প্রতি সোম, বৃহস্পতি, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ২০, ২৯, ৩০ তারিখ রোজা রাখা। অধিক হারে নফল নামাজ আদায় করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আউয়াবিন, তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি নামাজ আদায় করা।

এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরও আমল হলো অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত; কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া; যারা কোরআন তিলাওয়াত জানেন তাদের জন্য সহিহ্-শুদ্ধ করা এবং অর্থসহ শেখা জরুরি। হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। 

হজরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) বলেন, অতি মহান চারটি রাত হলো– রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবেবরাত), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত), জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের রাত)। 
রজব ও শাবান মাস হলো রমজান মাসের প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক অর্থাৎ সার্বিক বা সামগ্রিক। রমজান মাসে যেহেতু ইবাদতের সময়সূচির পরিবর্তন হবে, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং রমজান মাসের শেষ দশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ রয়েছে। তাই আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

তাই আমরাও যদি এ রজব মাস থেকে পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিই এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ রাখো আমি যেন আগামী রমজানে আগের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত, কোরআন পাঠসহ পুণ্য কর্ম বেশি বেশি করতে পারি। 
এ ছাড়া আমরা যদি মনের সব দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের সব ইবাদত-বন্দেগি হবে প্রশান্তিময়। তাই আসুন, পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে এ রজব মাস থেকেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করি।
 
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা। 

আরও পড়ুন

×