ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

পাক-আফগান সীমান্ত সংকট

পাক-আফগান সীমান্ত সংকট

প্রতীকী ছবি

ইসমাইল খান

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:৪৪

পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার সদরদপ্তরের একটি ছোট, তবে মনোমুগ্ধকর অডিটোরিয়ামে নির্বাচিত দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জেনারেল ফয়েজ হামিদ। বর্তমানে নিন্দিত হলেও অতীতে তিনি ছিলেন গোয়েন্দাপ্রধান। জেনারেল ফয়েজ আফগান তালেবানদের বিদ্রোহ প্রতিষ্ঠার জন্য দুটি বিশাল এলসিডি স্ক্রিনে একের পর এক স্লাইড দেখিয়ে যাচ্ছেন। স্লাইডগুলো ছিল দুই সপ্তাহ আগে কাবুল থেকে ধারণকৃত। বস্তুত এটি ছিল ‘পশতুন জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ’। 

তাঁর একক দীর্ঘ বক্তৃতার সারাংশ টানা এবং উন্মুক্ত প্রশ্নের সূচনার কিছুক্ষণ আগে, ফয়েজ আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের ব্যাপারে তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতার পুরোপুরি বিপরীতে কিছু একটা বলেছিলেন। ‘অনেক লোক আমার সঙ্গে একমত নয়; তবে আমি বিশ্বাস করি, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও আফগান তালেবান একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। 
পাকিস্তানের পশ্চিমের প্রতিবেশীরা একটি সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন তালেবান আবারও টিটিপি সমস্যার সমাধানের জন্য সময় চেয়েছে। এ সময় তারা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাদের পরিবারকে সীমান্ত এলাকা থেকে মধ্য 

আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেছেন। সূত্র অনুসারে, বাড়ি নির্মাণ ও স্থানান্তরের খরচ সাত অঙ্কের ডলারের শর্ত একটি বন্ধুরাষ্ট্র বহন করেছিল।
ইসলামাবাদ অন্তর্বর্তী তালেবান প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অবশ্যই টিটিপি নিয়ন্ত্রণ করে লাগাম টেনে ধরতে হবে। কাবুল তার পক্ষ থেকে বাণিজ্য ও ভিসা ব্যবস্থায় কিছু ছাড় চেয়েছে এবং তারা কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। ইসলামাবাদ তালেবান নেতাদের বলেছে, তারা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ব্যাপারটি ভাবার আগে সামনের সপ্তাহগুলোতে তাদের উদ্বেগ নিয়ে কাবুলের সাড়া বিচার করে দেখবে।  
পাকিস্তান আফগান তালেবানদের টিটিপির কাছ থেকে অত্যাধুনিক আমেরিকান অস্ত্র উদ্ধার করতে অনুরোধ জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করতে তাদের নিরুৎসাহিত করা এবং অতিক্রমকারীদের গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, আফগানরা সীমান্তে অবাধ চলাচলের অনুমতি দেয় এবং যারা এটি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই’-এর রাজনৈতিক মালিকানার বিষয়টি বা এর অভাব প্রাদেশিক সরকারের দ্বিমুখী মনোভাবের মধ্যে সাম্প্রতিক শীর্ষ কমিটির বৈঠকগুলোর একটিতে উত্তপ্তভাবে বিতর্কিত হয়েছিল। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, কেপির মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এটি স্পষ্ট করা হয়েছিল সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রাদেশিক সরকারের অনুরোধে সশস্ত্র বাহিনী প্রদেশে ছিল এবং তাদের উচিত পদক্ষেপ নিয়ে সম্পূর্ণ মালিকানা ও দায়িত্বভার গ্রহণ করা। 

লড়াইকে আরও জটিল করে তুলেছে জাতীয় পর্যায়ে সামগ্রিক রাজনৈতিক মেরূকরণ। এই দ্বিবিভক্তি শুধু কেপিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলেনি, বরং সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করার জন্য উত্তপ্ত এলাকাগুলোতেও ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি অনানুষ্ঠানিক জোট সৃষ্টি করেছে।
দাপ্তরিক ও বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, রাজ্যের বেশির ভাগ প্রচেষ্টা যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদনের পরিবর্তে দমনের ওপর মনোযোগ দিয়েছিল এবং পর্যাপ্তসংখ্যক বাহিনী মোতায়েন করা হলে সমস্যাটি যথেষ্টভাবে সমাধান করা যেতে পারে। যখন পর্যায়ক্রমে কয়েকটি অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য একটি সাধারণ চুক্তি রয়েছে, তখন 
জনসাধারণও রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব এবং অন্য দফা বাস্তুচ্যুত ঘটানোর ক্ষুধা সমস্যাটিকে জটিল করে তুলছে।
দাপ্তরিক ও বিশ্লেষকদের মতে, এখন সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলটি ফের খতিয়ে দেখার সময়। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক, আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারে সর্বত্র চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষণ, নজরদারিও দমন করতে প্রযুক্তির ব্যবহারে আরও মনোযোগ দেওয়ার এখনই সময়।

ইসমাইল খান: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও পেশোয়ারে ডনের সম্পাদক; ডন থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।
 

আরও পড়ুন

×