রাজধানীর পাড়া-মহল্লা 'দখলে' রাখবে আ'লীগ

শাহেদ চৌধুরী
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ১৩:৪৫
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন রাজধানীতে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ওই দিন রাজধানীর অদূরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে জনসভার মাধ্যমে বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সমকালকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসসহ জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির পাশাপাশি দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে প্রস্তুত থাকবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে জনসভা করার কথাও জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বলেছেন, যে কোনো ধরনের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ১০ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে নেতাকর্মীরা। এ জন্য ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাভুক্ত ২৬টি থানা, ৬৪টি ওয়ার্ড, ১টি ইউনিয়ন ও ৮০২টি ইউনিট কমিটির নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় একই ধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতির তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাভুক্ত ২৪টি থানা, ৭৫টি ওয়ার্ড ও ৬০৫টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা। রাজনীতির নামে অপ্রিয় কোনো ঘটনা কিংবা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপচেষ্টা হলে তারা উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেছেন, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকার নেতাকর্মীরা ১০ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে স্থানীয় মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ মাঠের জনসভায় অংশ নেবেন। এই জনসভার মাধ্যমে বড় ধরনের সমাবেশ-শক্তি দেখানোর ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওই জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ ছাড়া বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন রাজধানীতে আরও নানা কর্মসূচি পালনের চিন্তাভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এস এম মান্নান কচি জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ওই দিন ঢাকা মহানগরের উত্তরে বড় আয়োজনে শান্তি সমাবেশ করার প্রস্তুতি রয়েছে। হুমায়ুন কবির বলেছেন, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণেও দলীয় কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
এ অবস্থায় ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে আগামী দিনগুলোতে, বিশেষ করে নভেম্বরের শেষের দিক থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পরস্পরবিরোধী আক্রমণাত্মক বক্তব্যে রাজনীতির মাঠ অশান্ত হয়ে ওঠার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে না। তবে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রাজনীতির নামে জনগণের সম্পদ ধ্বংসের অপচেষ্টা অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীর উপস্থিতি বিএনপির গণসমাবেশকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ কোথায় হবে :বিএনপি ১০ ডিসেম্বর কোন স্থানে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে- সেটা এখনও ঘোষণা করেনি। তবে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে।
রাজধানীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নয়াপল্টন একটি বাণিজ্যিক এলাকা। ১০ ডিসেম্বর শনিবার ওই এলাকার বেসরকারি অফিস খোলা থাকবে। তা ছাড়া ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে গণসমাবেশ করলে জনদুর্ভোগও বাড়বে।
এ অবস্থায় বিএনপিকে নয়াপল্টনের বিকল্প জায়গায় গণসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। তবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মঞ্চে মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। এ ছাড়া সেখানে ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগ, ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ এবং ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হবে। প্রতিটি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন।
- বিষয় :
- আ'লীগ