দেবর-ভাবির ‘ঐক্যমতে’ রংপুরে জাপার মেয়র প্রার্থী

জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ছবি- সংগৃহীত।
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ১০:২৭ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ | ১০:২৭
জি এম কাদেরের সঙ্গে বিরোধ চললেও রংপুর সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে সমর্থন করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। গুঞ্জন ছিল জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী দেবেন রওশন। দুজনের ‘ঐক্যমতের’ কারণে লাঙ্গল নিয়ে সম্ভাব্য আইনি লড়াইয়ের শঙ্কা কেটেছে।
আজ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে রওশনের দেখা করেন মোস্তফা। দীর্ঘ পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসার পর গতকাল রোববার দেশে ফিরে সেখানে থাকছেন বিরোধীদলীয় নেতা। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে মোস্তফা সমকালকে বলেছেন, ‘ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) ডেকেছেন।’
২৭ ডিসেম্বরের রংপুর সিটি নির্বাচনে ফের প্রার্থী হতে মেয়রের পদ ছেড়ে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন মোস্তফা। তিনি জানান, রওশন এরশাদ বলেছেন- ‘আমি দেশে আসলাম, মোস্তফা দেখা করতে এলো না! আমি ওকে মনোনয়ন দিতে বসে আছি। ওকে (মোস্তফা) আসতে বলো।’
রওশনপন্থিদের মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞায় জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না জি এম কাদের। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর স্বাক্ষরে লাঙ্গলের প্রার্থী হয়েছেন মোস্তফা। রওশন পাল্টা প্রার্থী দিলে ‘লাঙ্গল’ কে পাবে- তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা ছিল।
লাঙ্গল চেয়েছিলেন বিলুপ্ত রংপুর পৌরসভার সর্বশেষ মেয়র আবদুর রউফ মানিকও। তিনি রওশনের পক্ষ নিয়ে জাপা থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। রওশনপন্থিরা জানিয়েছিলেন, তাঁকে পাল্টা প্রার্থী করে ‘লাঙ্গল’ চেয়ে আদালতে যাওয়া হবে। রওশনের পক্ষ নিয়ে জাপা থেকে বহিষ্কার হওয়া মসিউর রহমান রাঙ্গাও সমর্থন দিয়েছিলেন মানিককে। দেশে এসে মানিকের নাম ঘোষণা করবেন রওশন- এমনই দাবি ছিল জি এম কাদের বিরোধীদের।
কিন্তু বিমানবন্দরে নেমে রওশন বলেন, রংপুর এরশাদের ঘাঁটি। রংপুর হাতছাড়া করা যাবে না। যোগ্য ও দক্ষ কাউকে মেয়র প্রার্থী করা হবে।
রাঙ্গার বিরোধিতার বিষয়ে মোস্তফা বলেছেন, যে কাউকে প্রার্থী করলেই তো হবে না। জিততেও হবে। রংপুরে লাঙ্গল নিয়ে জেতার মতো প্রার্থী আমি। তাই রওশন এরশাদও সমর্থন দিয়েছেন। তবে নিজেকে জি এম কাদের তথা জাপার প্রার্থী হিসেবেই আখ্যা দেন মোস্তফা।
২০১২ সালে রংপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে জাপার সমর্থন পান রাঙ্গা। মোস্তফা ও মানিক দুজনেই বিদ্রোহী প্রার্থী হন। রাঙ্গা ভোট থেকে সরে গেলেও মোস্তফা ৭৯ হাজার এবং মানিক ৩০ হাজার ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এক লাখ দুই হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন। পরের নির্বাচনে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারান মোস্তফা।
রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ সমকালকে বলেছেন, পাল্টা প্রার্থী দিলে ২০১২ সালের পরিণতি হতো। দলের খারাপ চান না রওশন এরশাদ। সে কারণে মোস্তফাকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বিরোধ চান না। কেউ কেউ তা তৈরি করে।
জি এম কাদের সরকারের সমালোচনায় মুখর হওয়ায় তাঁকে জাপার নেতৃত্ব থেকে সরাতে গত আগস্টে রওশন কাউন্সিলের ডাক দেন। তাতে দেবর-ভাবির বিরোধ চরমে পৌঁছায়। রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে দলের ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে স্পিকারকে ১ সেপ্টেম্বর চিঠি দেন জি এম কাদের। তবে তিন মাসেও স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি। জি এম কাদেরকে সমর্থন করা তিন এমপি রোববার রওশনকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। কাদেরপন্থি এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, দেশে ফিরে নমনীয় রওশন। দেবর-ভাবির বিরোধ মেটাতে আলোচনা চলছে।