ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

কী হবে ১০ ডিসেম্বর

সংযত হোন, সংঘাত হলে দায় নিতে হবে

সংযত হোন, সংঘাত হলে দায় নিতে হবে

লোটন একরাম

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৭:৪৭

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে কোনো সংঘাত ও সহিংসতা ঘটলে তার দায়ভার সরকার ও আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে বলে সাফ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ভয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কিছু নেই। অন্যান্য বিভাগের মতো ঢাকায়ও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নয়াপল্টনেই সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে সংঘাতের ইঙ্গিত রয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, দয়া করে সংযত হোন। এমন কিছু করবেন না, যাতে সংঘাতমূলক ঘটনা ঘটতে পারে। ভীত হয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করবেন না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে নয়াপল্টনেই অনুমতি দিয়ে সহযোগিতা করুন। সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ও দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে; অন্য কিছু নয়।

ডেটলাইন ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি খোলামেলা এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্ভাব্য কোনো সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে সংলাপ অর্থহীন।

সমকাল: আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নয়াপল্টনেই করতে হবে- সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে কেন নয়?

মির্জা ফখরুল: আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আমরা একটি বিভাগীয় গণসমাবেশ করব। নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে অনেক আগেই ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আগ বাড়িয়ে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যোনে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়াটা ঠিক বোধগম্য নয়! সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান সুবিধাজনক নয়। সেখানে একটি মাত্র গেট। যেটা দিয়ে মাত্র একজন করে মানুষ প্রবেশ করতে পারে। অন্যান্য গেট বন্ধ। চারদিক দেয়াল দিয়ে ঘেরা। যে কোনো সময় নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া আমরা নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে প্রচুর সমাবেশ ও মহাসমাবেশ করেছি।

যৌক্তিক কারণে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চাই।

সমকাল: যদি শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দেয়, তাহলে কী করবেন?

মির্জা ফখরুল: যদি বলে তো কোনো কথা নেই। চিঠি প্রত্যাহার করতে পুলিশ কমিশনারকে আবারও অনুরোধ করেছি। আমরা আশা করব, সরকার যদি সহযোগিতা করতে চায়, তাহলে নয়াপল্টনেই শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সমকাল: ঢাকা অচল, সরকার পতনে লাগাতার অবস্থান এবং খালেদা জিয়াকে সমাবেশে নেওয়া, তাঁর কথায় দেশ চলাসহ দলের নেতারা নানা হুমকিধমকি দিচ্ছেন। আসলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী?

মির্জা ফখরুল: কোনো দায়িত্বশীল নেতা এসব কথা বলেননি- এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। এটাও বিভাগীয় গণসমাবেশ। এখান থেকে সরকার পড়ে যাবে- এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্যকে ছুতা বা অজুহাত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যেসব কথাবার্তা বলছেন, তা সম্পূর্ণ উস্কানিমূলক। যেভাবে কথা বলছেন- দেখে নেব, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এতে প্রমাণ হয়, তাঁরাই সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। কোথায় অগ্নিসন্ত্রাস দেখছেন? কেউ দেখেনি ও শোনেনি। অথচ শত শত ককটেল বিস্ম্ফোরণের হাস্যকর মামলা দিচ্ছেন। সহযোগিতার কথা বলে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কাজ করছেন কেন? ইতোমধ্যে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে রাজধানীতে গণগ্রেপ্তার শুরু করেছেন কেন?

সমকাল: এ সমাবেশকে আন্দোলনের 'টার্নিং পয়েন্ট' বলে মনে করছেন অনেকে। ওই দিন কী ধরনের কর্মসূচি দেবেন এবং যুগপৎ আন্দোলন বা রাষ্ট্র সংস্কারের কোনো রূপরেখা ঘোষণা করবেন?

মির্জা ফখরুল: যেহেতু ঢাকায় শেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ, সেহেতু এখান থেকে একটা কর্মসূচি দেব। যুগপৎ আন্দোলন ও রূপরেখার বিষয়টি এখনই বলতে পারছি না। আলোচনা শেষ পর্যায়ে। তা ছাড়া প্রতিটি সমাবেশই টার্নিং পয়েন্ট।

সমকাল: সমাবেশে কি ২০ দলীয় জোটের শরিক, গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ৭ দল এবং জামায়াতের নেতাকর্মী যোগ দেবেন?

মির্জা ফখরুল: এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেই।

সমকাল: সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাদের হুমকিধমকিতে নগরবাসী উদ্বিগ্ন। আসলে কী হবে ১০ ডিসেম্বর?

মির্জা ফখরুল: বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো হুমকি-পাল্টা হুমকি দেওয়া হয়নি। সব হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরা এমন ভাষায় কথা বলছেন, যা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। ওই ভাষাগুলো সম্পূর্ণভাবে মাস্তানি ভাষা।

সমকাল: ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে বলে জানিয়েছে। এতে কি সংঘাতের আশঙ্কা করছেন?

মির্জা ফখরুল: তাঁদের ভাষাতেই সংঘাতের ইঙ্গিত দেওয়া আছে। সে জন্য আমরা বলছি, কোনো সংঘাত ঘটলে তার সব দায়দায়িত্ব সরকার ও আওয়ামী লীগের।

সমকাল: পৃথিবীর ইতিহাস বলে, অহিংস আন্দোলনেই বেশি জনগণ সম্পৃক্ত হয় এবং আন্দোলনও সফল হয়। আপনারা কোন পথে যাচ্ছেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা ওটা (অহিংস) পুরোপুরি বিশ্বাস করি বলেই জনসম্পৃক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। এখন পর্যন্ত হিংসামূলক কোনো কাজ করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিহিংসামূলক ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

সমকাল: একই দাবিতে আপনারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগে টানা হরতাল-অবরোধ করে ব্যর্থ। এবার কীভাবে আন্দোলনের সফলতা আশা করেন?

মির্জা ফখরুল: ওই আন্দোলনের সঙ্গে এবারের আন্দোলনের পার্থক্য আছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো হরতাল-অবরোধে যাইনি। শান্তিপূর্ণভাবেই গণসমাবেশ করছি। অত্যন্ত সচেতনভাবে কোনো রকমের সহিংসতার সুযোগ দিচ্ছি না, যা সরকার নিতে চায়। আমলা ও গোয়েন্দাদের ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। যত অত্যাচার-নির্যাতনই করুন; এবারের আন্দোলন একশ ভাগ সফল হবে বলে আমরা নিশ্চিত।

সমকাল: তাহলে কি অতীতের ভুল এবার সংশোধন করে নিয়েছেন?

মির্জা ফখরুল: এখানে সংশোধন হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ওই সময় আন্দোলন দমনের কূটকৌশলের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে বাসে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। এবারও সেই কৌশলে দমনের চেষ্টা করছে।

সমকাল: সংকট সমাধানে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে?

মির্জা ফখরুল: আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপের কোনো আহ্বান জানাইনি। তাঁর সঙ্গে সংলাপের যে অভিজ্ঞতা, তা ভালো নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপে যতগুলো কথা দিয়েছিলেন, তার একটি কথাও তিনি রাখেননি। তাঁর সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর সঙ্গে সংলাপ অর্থহীন। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি।

সমকাল: তাহলে কীভাবে সংকটের সমাধান চান?

মির্জা ফখরুল: গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সংকটের সমাধান চাই।

সমকাল: বিএনপি ক্ষমতায় যেতে বিদেশিদের 'দ্বারস্থ' হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ।

মির্জা ফখরুল: আমরা কোথায় সাহায্য চাইলাম! সাহায্য তো চেয়েছে আওয়ামী লীগই। ক্ষমতায় থাকতে ভারতের কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন তাঁদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁরা প্রায়ই রাষ্ট্রদূতদের ডেকে কথা বলছেন। আর রাষ্ট্রদূতরা আমাদের অফিসে এসে কথা বলছেন। আমরা মনে করি, কোনো বিদেশি নন, জনগণকেই গণতন্ত্র আদায় করে নিতে হবে।

সমকাল: অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

মির্জা ফখরুল: সরকারি দলের লোকদের লুটপাটের কারণে অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

আরও পড়ুন

×