কী হবে ১০ ডিসেম্বর
সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা হলে উপযুক্ত জবাব

শাহেদ চৌধুরী
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৭:৪৬
মতলব খারাপ বলেই বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ওই সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কাও করছেন। তাঁর ভাষায়, সরকার ইতিবাচক বলেই নয়াপল্টনের মতো ছোট জায়গার পরিবর্তে বড় পরিসরের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এটি কি মগের মুল্লুক, যে জোর করে সমাবেশ করবে? তিনি আরও বলেছেন, বিএনপি গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধাতে চাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে ঝগড়া করবে না। বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী রাজধানীজুড়ে সতর্ক পাহারায় থাকবে, যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, জনগণের সম্পদ নষ্ট করতে না পারে।
সমকালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সমকাল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টিকে ফাঁদ হিসেবে দেখছে বিএনপি। আপনি কী মনে করেন?
ওবায়দুল কাদের: ফাঁদ হবে কেন? নয়াপল্টনের চাইতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনেক বড় জায়গা। সরকার ইতিবাচক বলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ৮-৯ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বরে এগিয়ে আনা হয়েছে। সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার নমনীয় ভূমিকা পালন করছে। অথচ বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের পার্টি অফিসের সামনে প্রায় ৩৫ হাজার স্কয়ার ফুটের মতো ছোট জায়গা বেছে নিল। নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য বিএনপির এত দৃঢ়তা কেন? এখানে কি তাদের কোনো বদ উদ্দেশ্য আছে? আসলে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তারা গন্ডগোল পাকাতে চাচ্ছে।
সমকাল: বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলে কী করবেন?
ওবায়দুল কাদের: এটি কি মগের মুল্লুক, যে জোর করে সমাবেশ করবে? অবশ্য খারাপ উদ্দেশ্য না থাকলে বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে কেন? তারা তো গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা কেন মানুষকে কষ্ট দেবে? নয়াপল্টনের চাইতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনেক বড় জায়গা। সেখানে সমাবেশ করলে মানুষের কষ্ট হবে না। তবুও বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনে সরকার অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সমকাল: বিএনপি কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাচ্ছে না?
ওবায়দুল কাদের: আমারও জিজ্ঞাসা- বিএনপি কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে চায় না? সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন তাদের অপছন্দ? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আসলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার বেলায় গড়িমসির মধ্য দিয়ে বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছে।
সমকাল: ১০ ডিসেম্বরের বিএনপি সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন?
ওবায়দুল কাদের: বিএনপি কি বাংলাদেশের ইতিহাস জানে না? ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ওই দিন আলবদর বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন ও সাংবাদিক সৈয়দ নজমুল হককে উঠিয়ে নিয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো নৃশংসতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। সেই বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা শুরুর দিন ১০ ডিসেম্বরকেই বিএনপি কেন সমাবেশের জন্য বেছে নিল- সেটিই বড় প্রশ্ন। তবে কি তারা বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে চায়?
সমকাল: বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি কী?
ওবায়দুল কাদের: বিএনপি তাদের অফিসকে কেন্দ্র করে সেই পুরোনো কায়দায় অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা চালাবে- আমরা এমন খবর পাচ্ছি। তাদের মতলব খারাপ বলে জেনেছি। তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধাতে চাচ্ছে। কিন্তু এর পরিণাম কারও জন্যই সুখকর হবে না। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে ঝগড়া করবে না। তবে কথিত আন্দোলনের নামে সমাবেশ ঘিরে বিএনপি যদি সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি দেবে না। তবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী রাজধানীজুড়ে সতর্ক পাহারায় থাকবে, যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, জনগণের সম্পদ নষ্ট করতে না পারে।
সমকাল: সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কিনা?
ওবায়দুল কাদের: বিএনপি সংঘাতের সৃষ্টি করতে পারে। নয়াপল্টনে সমাবেশ মানেই সংঘাত চায় বিএনপি। তারা সংঘাতেরই আভাস দিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাসী। আমাদের নেতাকর্মীকে ধৈর্য ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে চাইলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
সমকাল: বিএনপির কয়েকটি বিভাগীয় গণসমাবেশ কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
ওবায়দুল কাদের: এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের কিছুই করার ছিল না। তা ছাড়া পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোতে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ রয়েছেন। তবে এক ধরনের ভয় থেকেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট করেছেন বলে শুনেছি। আবার আতঙ্ক থেকেও পরিবহন ধর্মঘট করার কথা শুনেছি।
সমকাল: গণসমাবেশ ঘিরে গায়েবি মামলার অভিযোগ করছে বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের: কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ থেকে ৭১টি মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। এ নিয়ে থানায় ৭১টি জিডি হয়েছে। এগুলো কি মামলা নয়? তা ছাড়া কেউ যদি অপরাধী হয়, তাকে কী করতে হবে? আমাদের স্পষ্ট কথা, অপকর্মকারী কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এই জন্যই যাদের বিরুদ্ধে খুন ও মাদকের মামলা আছে, তাদের জেলে নেওয়া হয়েছে।
সমকাল: ২০১৮ সালে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করেছেন। ভবিষ্যতেও সংলাপের সম্ভাবনা আছে কিনা?
ওবায়দুল কাদের: বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নেই। তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কীভাবে? বিএনপি যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, সেখানে তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশ্বই বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিরূপ পরিস্থিতি সফলভাবেই সামাল দিচ্ছেন। সেই সরকারের পদত্যাগ চাচ্ছে বিএনপি।
সমকাল: দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে?
ওবায়দুল কাদের: এটা মীমাংসিত বিষয়। সংবিধানের বাইরে একচুলও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সমকাল: বিএনপি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি করছে, কী বলবেন?
ওবায়দুল কাদের: লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো হচ্ছেই। বিএনপি তো নিয়মিতভাবেই সভা-সমাবেশ করছে। তাদের নেতারা অশ্নীল ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকেও গালমন্দ করছেন। নিরাপদে ঘরে থাকছেন। কাউকে তো গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিএনপির শাসনামলে কী ছিল? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পেরেছিলেন? নির্যাতন-নিপীড়ন কাকে বলে এবং কত প্রকার, সেটি আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে বুঝিয়ে দিয়েছিল বিএনপি।
সমকাল: আপনি বলছেন, খেলা হবে। কার সঙ্গে খেলা হবে?
ওবায়দুল কাদের: এটি রাজনৈতিক স্লোগান। তবে কেউ সহিংসতার সৃষ্টি করলে, আগুন আর লাঠি নিয়ে এলে, খেলা কাকে বলে দেখিয়ে দেওয়া হবে। খেলা হবে গণতন্ত্রবিরোধীদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে আন্দোলনের নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের বিরুদ্ধে।