ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

নির্বাচন নিয়ে চিঠি ও বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় আ’লীগ নেতারা

দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কাম্য নয়

দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কাম্য নয়

অমরেশ রায়

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় এমপি ও ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের পৃথক চিঠি এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি বলছে, এসব চিঠি ও বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও সরকারের বিষয়ে গুরুতর আপত্তিকর বক্তব্য তুলে আনা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমপিদের চিঠিতে আদালতের নির্দেশে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবির সপক্ষে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এভাবে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মোটেই কাম্য নয়।

ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা আন্তর্জাতিক এসব মহলের এমন তৎপরতার পেছনে বিএনপির লবিং-তদবিরকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিএনপি চাইছে নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারকে চাপে রেখে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে। এ কারণে তারা বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছে ধরনা দেয়। এ জন্য লবিস্টও নিয়োগ করেছে তারা।

তবে এসব তৎপরতাকে গুরুত্ব দেওয়ার তেমন কিছু নেই বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাঁদের মতে, যাঁরা এসব চিঠি চালাচালি করছেন, তাঁরা বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব রাখার ক্ষমতা রাখেন– সেটাও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব মহলের এমন অপতৎপরতা দেখা যায়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নামে তাদের এমন দৌড়ঝাঁপ দেখা গেছে, যা এ দেশের সরকার ও জনগণের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন একটি ইস্যু। তাই এ নিয়ে সময় নষ্ট না করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার বিষয়েই মনোযোগী হওয়া দরকার।

গত সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টের ছয়জন এমপি এক চিঠিতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, স্বচ্ছ এবং পক্ষপাতহীন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখতে সংস্থাটির কাছে আহ্বান জানান। ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা দপ্তরের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বরেলকে দেওয়া ওই চিঠিতে একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চলমান সংকটে সরকার, বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে টেকসই ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

একই দিন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে র‍্যাবসহ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জিন

পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে এ নিয়ে উদ্বেগ জানানোর আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটি আরও বলেছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই বাড়াতে হবে। র‍্যাবের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শান্তিরক্ষা মিশনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধের দাবি করা হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেওয়া একটি চিঠিতে কংগ্রেসের ছয় সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বন্ধ এবং বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, এ ধরনের চিঠি ও বিবৃতি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। এটি খুবই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন হবে এ দেশের সংবিধান, আইন ও প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন কংগ্রেস বা মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে বলার কে? তারা নিজেদের এত বড়-ই বা মনে করে কেন? এক প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, এদের এসব চিঠি বা বিবৃতি আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু পয়েন্টটা হচ্ছে– এ ধরনের চিঠি বা বিবৃতি দেবে কেন? আশা করব, এগুলো থেকে তারা নিবৃত্ত হবেন এবং তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ওই সব সংস্থা বা ব্যক্তির কথা বলার কোনো এখতিয়ারই নেই। এরপরও তারা যেসব কথাবার্তা বলছে, সেগুলো বাস্তবতাবিবর্জিত ও একেবারেই ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণা নেই, তারাই হুট করে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছে। এগুলোতে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সরকার এগুলো নিয়ে মাথাও ঘামাবে না।

আরও পড়ুন

×