ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

শুক্র-শনিবার বিএনপির গণমিছিল ও পদযাত্রা

শুক্র-শনিবার বিএনপির গণমিছিল ও পদযাত্রা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০৬:১৩

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে খুব শিগগির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলনের রোডম্যাপ আরও এগিয়ে এনেছে দলটি। আগামী মাসের শুরু থেকেই রাজপথের কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় তারা। অবশ্য এর আগে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শুক্র ও শনিবার ফের গণমিছিল, পদযাত্রা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাল-পরশু নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। পর্যায়ক্রমে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা  মামলা, হয়রানি, সাজার রায় ঘোষণার প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকার প্রবেশমুখে আবারও অবস্থানের মতো কর্মসূচিতে যেতে চাইছে দলের হাইকমান্ড।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, মানুষ যখন দিন দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথের মিছিলে শরিক হচ্ছে, ঠিক সেই সময় সরকার তার পুরোনো কায়দায় গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ২৮ জুলাই মহাসমাবেশের পর থেকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে। অবৈধ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একদিকে দেশের নিরীহ গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর তার নিজস্ব বাহিনী দ্বারা গুলি করে হত্যা, গুম, খুনসহ সব ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে। বিরোধী মতের আন্দোলনে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তবে এত নির্যাতনের পরও জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ঢাকায় প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই চাপে রয়েছে বিএনপি। ওই দিনের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলায় সক্রিয় নেতাকর্মীর নাম উঠে এসেছে। সাদা পোশাকের পুলিশ ভিডিও, ছবি দেখে নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ অনেক দায়িত্বশীল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অনেকে আছেন পুলিশের তালিকায়। বেশির ভাগ গ্রেপ্তারের সঙ্গে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ জড়িত থাকায় নেতাকর্মীর মধ্যে ডিবি আতঙ্ক ভর করেছে। দলের তৃণমূল পর্যন্ত গ্রেপ্তারভীতি কাজ করছে। অনেকেই বাসাবাড়ি ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন।

ওই দিনের ঘটনা ছাড়াও বিএনপির চলমান আন্দোলন নিয়ে সরকারের হঠাৎ শক্ত অবস্থানে চিন্তিত নেতাকর্মী। মাঝখানে যেভাবে সভা-সমাবেশ আর পদযাত্রার মতো কর্মসূচি নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হয়েছে সেখানে এখন প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি কর্মসূচির মধ্য থেকে দায়িত্বশীল নেতাদের উঠিয়ে নেওয়ার মতো চেষ্টাও চলছে বলে জানান নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, সরকার সব দিক থেকে একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেখানে আগামী দিনে করণীয় বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে উল্টো চাপে ফেলতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত আন্দোলন
শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কিন্তু কার্যকর কর্মসূচি নিয়েই আলোচনা করেন সমমনা নেতারা। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও বা অবস্থান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও বা অবস্থান, সচিবালয় ঘেরাও বা অবস্থান কর্মসূচি যেমন রয়েছে, তেমনি ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি, চলো চলো ঢাকা চলো এবং আবারও মহাসমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। তবে কোনো কর্মসূচিই চূড়ান্ত করা হয়নি। গতকাল রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

এ ছাড়া এক দফার আন্দোলনকে সফল করতে বিভিন্ন পেশাজীবী, ছাত্র, শ্রমিক সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সমমনা অন্যান্য দল ও সংগঠনের সঙ্গে কীভাবে ঐক্য করা যায়– সেসব নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা।

দলের নেতারা জানান, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেভাবে দলীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, যেভাবে একজোট হয়ে আবারও বিরোধী নেতাকর্মীকে নির্যাতন শুরু করেছে, তাতে সমসাময়িক হলেও নেতাকর্মীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন। তবে এটাও সাময়িক। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর মনোভাবের কারণে, সঠিক দিকনির্দেশনায় আর সামনে সুদিনের আশায় এখন আর কোনো নেতাকর্মী এসব ভয়ডরে ঘরে থাকছেন না। এসবের মধ্যেও মনোবল না হারিয়ে নিয়মিত কর্মসূচিতে হাজির হচ্ছেন। আর এটাকেই দলের হাইকমান্ড আশার আলো হিসেবে দেখছে।

জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য আগামী ২৩ আগস্ট স্ত্রীসহ সিঙ্গাপুর যেতে পারেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে চিকিৎসা শেষে আগামী ৩০ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে তাঁর। এ সময়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছে দলটি। এর মাধ্যমে একদিকে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা, অন্যদিকে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্থার চাপে বেশ কয়েক মাস সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সচেষ্ট ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সে অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষত আগামী দিনে ঢাকার আন্দোলনকে টার্গেট করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের তুলে নেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের জামিনও বন্ধ রয়েছে। অনেক নেতা জামিন পেলেও কারাফটক থেকে একাধিকবার আটক করে পেন্ডিং মামলায় ফের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মোসাব্বির অন্যতম। মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের ক্ষেত্রেই চলছে এসব গ্রেপ্তার মামলা আর কারা নির্যাতন। এখন বাইরে যারা রয়েছেন, তারা দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার ভয়ে অনেকটা গুটিয়ে রয়েছেন। এ অবস্থার পরিবর্তনে দলের হাইকমান্ড কাজ করছে। ভিন্ন ভিন্ন নেতৃত্ব তৈরি করছে, যাতে একজন গ্রেপ্তার হলে দ্বিতীয় কেউ হাল ধরতে পারেন।

মহানগর বিএনপির একজন নেতা জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান কয়েক দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হবেন। মামলার রায়ে সাজা ঘোষণায় তাঁকে কারাগারে যেতে হবে। আন্দোলনকালীন তাঁর মতো ডাকসাইটে নেতার অনুপস্থিতি পুরো দলের নেতাকর্মীর মধ্যে বিরাজ করবে। এমন প্রেক্ষাপটে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পদেও নতুন কাউকে দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন– চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী ছাড়াও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী।

বিএনপি নেতারা জানান, আন্দোলনে সক্রিয় নেতাদের উৎসাহিত করতে অনেককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনেকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে এসব সিদ্ধান্ত আগামী আন্দোলনে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন

×