স্বাস্থ্যগত ও মানবিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেবেন বলে তারা আশা করছেন। যদি না দেন, আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই তাদের।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় নেতারা এসব বলেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে ত্রাস ও ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে নারীদের কোনো সম্মান নেই, মানুষের কোনো সম্মান নেই, জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।

তিনি বলেন, 'দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম খারাপ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরার জন্য বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাকে থানার মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এ রকম ঘটনা আগে কখনও শুনতে পাইনি।'

মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থনীতি সুপরিকল্পিভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশ একটা পরনির্ভরশীল দেশ হয়ে থাকে। দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে ১১০ কোটি টাকা দিয়ে বেসিক ব্যাংকের এক এমডি বাড়ি কিনেছেন। আজকে খালেদা জিয়ার বিচার হয়, সাজা হয় দুই কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলার জন্য। অথচ যিনি ১১০ কোটি টাকার বাড়ি বানিয়েছেন, শত শত কোটি টাকা যিনি লুটপাট করেছেন, তাকে দুদক দেখতে পায় না, এখন পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে একটা নোটিশ পর্যন্ত করা হয়নি। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।

সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারে না, পানি সমস্যার সমাধান হয় না। সীমান্তে মানুষ হত্যা হয়, তার কোনো বিচার হয় না এবং এ নিয়ে একটা কথা বলতে পর্যন্ত সাহস পায় না।

তিনি বলেন, 'এ অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে চাই, অতীতে উঠে দাঁড়িয়েছি। এ দেশের মানুষ বারবার জেলে গেছে। এই সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির সমস্যা। সমগ্র জাতি আজকে পরাধীন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে, সোচ্চার হতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনের মতো বিভিন্ন সংকটে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষ ওই সময়ের ছাত্র নেতারা। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশে কী হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, 'কে ভোট দিল, কে ভোট দিল না- এটা আমাদের দেখার বিষয় না। আওয়ামী লীগ এগুলো কেয়ার করে না।' এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতিবাদের মনোভাব নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এটা একটা অমানবিক সরকার। অনেক কর্তৃত্ববাদ সরকার আছে যারা এতটা অমানবিক নয়। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা- কোনো কিছুতে তারা বিশ্বাস করে না। প্রত্যেকটি জিনিস তারা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে এই সরকার।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান।