কাউকে খাটো করতে চাই না: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস। একই সঙ্গে ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার যে ঘোষণা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল- এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনোটাই অস্বীকার করা যাবে না। এ জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়; ২ মার্চ, ৩ মার্চও পালন করছি। মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা রুখে দিতে এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপি ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে।

শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির উদ্যোগে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে এ মতবিনিময় সভা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২ মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম আবদুর রব। এটা ইতিহাসের একটা অংশ। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ। এটাকে অস্বীকার করব কী করে? ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তার সম্মান, মর্যাদা তাকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন, তখন বলবেন ৭ মার্চের ডাকে দেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল। সেটা তো আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সব বই থেকে আসবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় বা কোনো গোষ্ঠী বা দলেরও সম্পত্তি নয়। স্বাধীনতা এ দেশের লক্ষ-কোটি, সব মানুষের সম্পত্তি; এর মালিক জনগণ। কাউকেই খাটো করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই এবং সেটা উচিতও নয়। বিশেষ করে স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে।

জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। প্রায় ৪০০ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, অনেককে জেল খাটতে হয়েছে। সাংবাদিক কাজল, তার আগে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম- তারা সবাই। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের অপরাধ শুধু লেখার জন্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমার প্রশ্ন এই জায়গায় যে, এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি, এ জন্য আমরা স্বাধীনতা চাইনি। আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য এ দেশ স্বাধীন করিনি।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও এ সময় তিনি জানান।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আমরা সারা বছরের কর্মসূচি নিয়েছি। অত্যন্ত বেদনাদায়ক- গত ১২ বছর দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার জন্য, নানাভাবে বিকৃত করার জন্য হেন চেষ্টা নেই, যা করা হয়নি।

মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।