দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে আহ্বায়ক এবং ১৫ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গণফোরামের ১০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করেছেন সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে আগামী ২৮ ও ২৯ মে ঢাকায় দু'দিনব্যাপী কাউন্সিলের ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার ড. কামাল হোসেন সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জানান, শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের কোনও বর্ধিত সভা নেই।

শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম একাংশের আয়োজিত বর্ধিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। বর্ধিত সভায় ২১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে আহ্বায়ক করে ২০১ সদস্যের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। 

সভায় ড. কামাল হোসেনকে সভাপতির পদ থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরে সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য মহসিন রশিদ বলেন, দলের মধ্যে অনেক বিভাজন চলছে। এই বিভাজন বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে সভাপতির পদ থেকে ড. কামাল হোসেনকে বাদ দেওয়া উচিত। কমিটির সাবেক সদস্য সত্তার পাঠানও একই প্রস্তাব করেন। পরে জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা তাদের প্রস্তাব সমর্থন করেন।

গণফোরামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত স্টিয়ারিং কমিটিতে বিবদমান দুই অংশের নেতাদের রাখা হলেও অপরাংশ তাদের এ তালিকা মানতে নারাজ। ঘোষিত কমিটির সদস্যরা হলেন-মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান, এমপি, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মহসিন রশিদ, আ ও ম শফিকউল্লাহ, মহিউদ্দিন কাদের, মোশতাক আহমদ, অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, আইয়ুব খান ফারুক, খান সিদ্দিকুর রহমান, হাসিব চৌধুরী, অ্যাড. মো. হেলাল উদ্দিন, আব্দুল বাতেন খান, আতাউর রহমান, অ্যাড. আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, লতিফুল বারী হামিম, সাইদুর রহমান, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী।

স্টিয়ারিং কমিটিতে নাম রাখার বিষয়ে মোকাব্বির খান বলেন, আমি তো এই কমিটিতে থাকবো না। এ ধরনের কমিটি করার কোনও অধিকার নেই। নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী ও অগণতান্ত্রিক। এটা নিয়ে দলের বৈঠকে আমরা আলোচনা করব।

বর্ধিত সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও ত্রাণ কার্যক্রমের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক। একাংশের নেতা লতিফুল বারী জানান, সারা দেশের ৫৬ জেলা থেকে ২৮১ জন প্রতিনিধি বর্ধিত সভায় অংশ নিয়েছেন।

সভায় দলের মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আমরা জাতি হিসেবে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এটা প্রত্যাশিত ছিল না। দুঃশাসনের এ বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। এই প্রেক্ষাপটে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব দলের ঐক্য চাই। রাতের ভোটে নির্বাচিত স্বঘোষিত সরকারের পদত্যাগ চাই। প্রয়োজনে দেশ রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের সরকার চাই।

সভাপতির পদ থেকে কামাল হোসেনকে অপসারণ প্রসঙ্গে মন্টু আরও বলেন, গণফোরাম গণতান্ত্রিক দল। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র আনতে হলে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়। কামাল হোসেনকে সভাপতি বানিয়েছিলেন কাউন্সিলররা। আগামী কাউন্সিলে তারাই (কাউন্সিলর) সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তী সভাপতি কে হবেন।

সভাপতির ভাষণে আবু সাইয়িদ বলেন, দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে জনগণের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জেলখানায় লেখক-সাংবাদিকদের মৃত্যু প্রমাণ করে বন্দি অবস্থায়ও কারও জীবনের নিরাপত্তা নেই।