- রাজনীতি
- অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ভয় দেখানো হলো: মির্জা ফখরুল
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ভয় দেখানো হলো: মির্জা ফখরুল

ফাইল ছবি
সচিবালয়ে আটকে রেখে সাংবাদিক নির্যাতন ও মামলা দায়েরের ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটি কোনও তুচ্ছ বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কর্তৃত্ববাদী শাসনে সাংবাদিক দলন এবং ভিন্নমত, সত্য প্রকাশ ও সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি প্রচারে সরকারের প্রতিবন্ধকতার এটি একটি উদাহরণ মাত্র। সাহসী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা যাতে আর সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সংবাদ প্রকাশ করতে না পারে-এ ঘটনার মাধ্যমে তাদেরকে ভয় দেখানো হলো। দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা অবশিষ্ট নেই তা আবারও প্রমাণিত হলো।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে দীর্ঘ সময় আটক রাখা এবং পরে গ্রেপ্তার দেখানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সরকার ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে আড়াল করতে চায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকের ওপর নিষ্ঠুর আচরণের দায় সরকার এড়াতে পারে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব এ ঘটনা জানলেও তারা রোজিনা ইসলামকে উদ্ধারে কোনও পদক্ষেপ নেয় নাই। উল্টো তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। তাদের নির্দেশেই রোজিনা ইসলামের ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় প্রমাণ হয়-বাংলাদেশে এখন আর স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং তথ্য পাওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট নেই। রোজিনা ইসলাম একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তার অনেক অনুসন্ধানী ও সাহসী রিপোর্টে সরকারের বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনেক দুর্নীতি, অনিয়মের খবর জনগণ জানতে পেরেছে। সেজন্য সরকার তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং নজরদারী করছিলো।
তিনি বলেন, সোমবার পেশাগত কারণে রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে কতিপয় কর্মকর্তা- কর্মচারী অন্যায়ভাবে দীর্ঘ প্রায় ৬ ঘন্টা আটকে রেখে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় এবং গ্রেফতার করা হয়। একজন নারী সাংবাদিকদের ওপর সরকারী কর্মকর্তাদের এহেন আচরণ লজ্জাজনক এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
সাংবাদিকদের 'দলন-নিপীড়ন' বন্ধ করে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকারে 'সরকারি হস্তক্ষেপ' বন্ধের দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ তাকে 'নির্যাতন' করার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে ঠাকুরগাঁও নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা। আর এটাই ক্ষমতাসীনরা ক্রমাগত লঙ্ঘন করে চলেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সাংবাদিক ও মিডিয়ার কণ্ঠ চেপে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের হাত-পা ভেঙে দেয়া এমনকি খুন করা, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরা হচ্ছে সরকারের নিত্যদিনের কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির খবর ফাঁস করে দেয়ায় রোজিনা ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এভাবে দেশের যে মূল আত্মা তাকে আঘাত করা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হচ্ছে। সাংবাদিকসহ সর্বত্র কিছু চাটুকারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে এ সরকার। আর চামচারা হুক্কাহুয়া করে যাচ্ছে। রোজিনা ইসলাম ইস্যুতে সাংবাদিকসহ সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি মামুন উর
রশীদ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদসহ অন্যরা।
মন্তব্য করুন