কলকারখানার দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে 'জাতীয় মানদণ্ড আইন' প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কোম্পানির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত-আহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানানোর পাশাপাশি দলটি এ প্রস্তাব উত্থাপন করে।

বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ দাবি উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, একটা জাতীয় মানদণ্ড আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার- এ ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা, আহত ও নিহতরা কী ক্ষতিপূরণ পাবেন, মালিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে এবং যারা এটার পরিদর্শনের দায়িত্বে জড়িত, তাদের কোনো অবহেলা থাকলে কী ব্যবস্থা হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ এবং ১৯৫৮ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ও রানা প্লাজার (সাভার) দৃষ্টান্ত অনুযায়ী জাতীয় মানদণ্ড আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, মনে রাখতে হবে, মানুষ কাজ করতে যায় জীবন বাঁচানোর জন্য, জীবিকা অর্জনের জন্য। সেখানে কাজ করতে গিয়ে যদি জীবন দিতে হয়, তাহলে সেটা কারখানা নয়, মৃত্যুকূপ।

তিনি বলেন, হাসেম ফুডস কোম্পানির ৯৯৩ কোটি টাকাসহ পুরো সজীব গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এই কারখানার শ্রমিকরা দুই মাস ধরে বেতন ও ওভারটাইম ভাতা না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় গত ৫ জুলাই আংশিক পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এ অবস্থায় শ্রমিকরা অকালে নিহত হলেন এবং তাদের স্বজনরা খালি হাতে ফিরে গেছেন। এমন অমানবিক ঘটনা নিন্দনীয় এবং বিচারযোগ্য অপরাধ। অবিলম্বে সব শ্রমিকের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

গত মঙ্গলবার রূপগঞ্জের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ভবন নীতিমালা অনুযায়ী এই আয়তনের ভবনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা জরুরি ছিল। অথচ ছিল মাত্র দুটি। পুড়ে নিহত হওয়া ৪৯টি লাশই পাওয়া গেছে ভবনের চতুর্থ তলায়। ১১ বছর ৪ মাস বয়সের হাসনাইন, ১২ বছর বয়সের শান্তা, ১৪ বছর বয়সের মুন্না, ১৫ বছর বয়সের শাহানা ও নাজমুল, ১৬ বছর বয়সের ফয়সাল, ১৭ বছর বয়সের ইউসুফ ও আল আমীনের মতো শিশু-কিশোরসহ ১৬ নারী ও ২৩ জন পুরুষ শ্রমিকের অগ্নিদগ্ধ হয়ে এমন মর্মান্তিক ও অকাল মৃত্যুতে এবং ১২ বছরের রুমা ও ১৫ বছরের নাদিয়ার মতো অসংখ্য আহতের শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনার ভাষা আমাদের নেই।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মীয়স্বজনরা এলে মালিকপক্ষ থেকে নাকি বলা হয়েছে, তাদের কার্ড দেখান। কিন্তু যারা মারা গেছেন, তারা তো কার্ডসহ জ্বলে-পুড়ে চলে গেছেন।