- রাজনীতি
- ১৫ আগস্টকে স্বাগত জানিয়েও তারা এখন আওয়ামী জোটে
বিশেষ সাক্ষাৎকার : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
১৫ আগস্টকে স্বাগত জানিয়েও তারা এখন আওয়ামী জোটে
সরকার করোনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। মহামারি মোকাবিলার মানসিকতা নেই

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তার ওপর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের দায় চাপানোর অপচেষ্টা চলছে। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল। খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতায় ছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ পরে আওয়ামী লীগের এমপি হন। যারা ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল, তাদের অনেকেই বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোটের শরিক।
সমকালের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার করোনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। বিরোধী দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব আরও বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম দরকার 'জাতীয় ঐক্য'। অথচ পূর্বপরিকল্পনা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ মহামারি মোকাবিলার মানসিকতা তাদের নেই। সংকট উত্তরণে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউন দিলে 'দিন আনে দিন খায়' মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে। প্রয়োজনে 'মেগা প্রজেক্ট' স্থগিত করে হলেও সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকা আনতে হবে।
তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই।
সমকাল :করোনাকালে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে? কোনো সংকট দেখছেন কি?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর :সরকার করোনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। কোনোরকম পূর্বপরিকল্পনা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা মোকাবিলা করার কোনো মানসিকতা আমরা সরকারের মধ্যে লক্ষ্য করিনি। আমরা রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞ, এনজিও, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে 'জাতীয় ঐক্য' গড়ে সংকট মোকাবিলা করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সরকার করোনা পরিস্থিতিকে একাই সমাধান করার চেষ্টা করেছে, যা এরই মধ্যে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বিরোধী দলের সব কার্যক্রম বন্ধ করে সরকারি দল রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব আরও বেড়েছে।
সমকাল :করোনা সংকটে মানুষের জীবন-জীবিকা একরকম স্থবির হয়ে আছে। এ সময় রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কী হতে পারে বলে মনে করেন?
মির্জা ফখরুল :করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপি একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জনগণের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে বিএনপি প্রাথমিক পর্যায়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার প্রস্তাব করেছে। যার মধ্যে দিন আনে দিন খায় মানুষ, সব শ্রেণির শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী এবং মালিকদের প্রণোদনা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও পোশাকশিল্পকে সচল রাখার জন্যও প্রণোদনা প্রস্তাব করেছে বিএনপি। বিশেষ করে অতিদরিদ্রদের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। এসব প্রস্তাব সরকার সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করেছে।
সমকাল :রাজনৈতিক দলগুলো এই ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারছে কি? না পারলে এ ক্ষেত্রে কী কী অন্তরায় দেখা দিচ্ছে?
মির্জা ফখরুল :বিভিন্ন সময় সরকারের নানা ভুল সিদ্ধান্ত, অপরিকল্পিত লকডাউনের সিদ্ধান্ত ও বাধার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে চাইলেও পারেনি। বিশেষ করে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ, করোনা হেলথ সেন্টারসহ সব কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছ থেকে কাজ করার কোনো সহযোগিতাই পাইনি এবং কোনো সুযোগই দেওয়া হয়নি।
সমকাল :করোনায় দরিদ্র মানুষের পাশে এবার তুলনামূলকভাবে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কম দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল :করোনা শুরুর পর থেকে অনেক রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল। সরকারের নির্লিপ্ততা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভ্রান্ত নীতির কারণে তাদের উৎসাহ কমে গেছে। অন্যদিকে, অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। এসব বিষয়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের আন্তরিকতা, আগ্রহ এবং যোগ্যতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যক্রমে সব বিশেষজ্ঞ, এমনকি কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শকেও উপেক্ষা করে সরকার অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। টিকা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সমকাল :করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই সংকট মোকাবিলায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব পদক্ষেপ কি যথেষ্ট?
মির্জা ফখরুল :সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া প্রায় সব পদক্ষেপই ব্যর্থ হয়েছে। সময়মতো জেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ও ওষুধ এবং আইসিইউ বেড সরবরাহ না করায়, সর্বোপরি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সরকারের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে গণটিকা অভিযান সংক্রমণকে আরও বাড়িয়েছে।
সমকাল :করোনাকালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে নানা অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল :করোনাকালে প্রমাণিত হয়েছে- সরকার স্বাস্থ্য খাতে কোনো বিনিয়োগ তো করেইনি- উপরন্তু নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পুরো স্বাস্থ্য খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তাই এ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়েছে।
সমকাল :করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সরকারের টিকাদান কার্যক্রম সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মির্জা ফখরুল :শুধু একটি উৎস থেকে এবং দলীয় ব্যক্তিকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে- একটি কোম্পানি থেকে টিকা সংগ্রহ করার চেষ্টায় গোটা প্রক্রিয়াই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনেশন করতে হলে ২৬ কোটি টিকা দরকার। ভারতের সঙ্গে তিন কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার চুক্তি ও অগ্রিম টাকা দেওয়ার পারও টিকা মিলেছে মাত্র ৭০ লাখ। সে সময় চীন ও রাশিয়ার আগ্রহ থাকার পরও তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়নি। পরে চার মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকের সহযোগিতায় কয়েক লাখ টিকা পাওয়া গেলেও তা অপ্রতুল। আমরা টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছিলাম, সরকার সেটা করতে পারত।
সমকাল :করোনা সংকট উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
মির্জা ফখরুল :সর্বপ্রথম 'জাতীয় ঐক্য' গড়ে তোলা দরকার। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউন দেওয়ার ক্ষেত্রে দিন আনে দিন খায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাছে ক্যাশ ট্রান্সফার নিশ্চিত করতে হবে। টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে 'মেগা প্রজেক্ট' স্থগিত করে হলেও সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। দ্রুত দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টিকা উৎপাদন জরুরি।
সমকাল :বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গৃহীত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কি সঠিক?
মির্জা ফখরুল :শিক্ষা ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থাকে চালু করার প্রশ্নে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে 'জাতীয় কমিশন' গঠন করা প্রয়োজন।
সমকাল :করোনা মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি লিডাররা পিছিয়ে আছেন। তাদের কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়?
মির্জা ফখরুল :সরকার অযোগ্য আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করছে। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি এবং কমিউনিটি লিডারদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব এবং টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।
সমকাল :এবার রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আসা যাক- দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর চার মাস বাকি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কি?
মির্জা ফখরুল :বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে হলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন অপরিহার্য। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের চিন্তা অবাস্তব; যা বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে।
সমকাল :বিএনপির এই প্রধান দাবি সরকারের কাছ থেকে কীভাবে আদায় করা সম্ভব?
মির্জা ফখরুল :আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশে কখনও দাবি আদায় হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করেনি। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে কঠোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
সমকাল :বিএনপি কি সাংগঠনিকভাবে কঠোর আন্দোলন করার মতো এতটা শক্তিশালী হয়েছে?
মির্জা ফখরুল :বিএনপি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। সাংগঠনিকভাবেও অত্যন্ত শক্তিশালী। ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত এ সংগঠনের কমিটি রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্যাতন ও নিপীড়ন করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করতে চায়। প্রায় ৩৫ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাঁচ শতাধিক গুম এবং সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় কারাদ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করার পরও বিএনপি তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রাম থেকে সরে যায়নি। এই সংগ্রাম ভবিষ্যতে আরও তীব্র হবে।
সমকাল :যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন আলোচিত হচ্ছে। সর্বশেষ কী অবস্থা?
মির্জা ফখরুল :২০ দলীয় জোট অটুট রয়েছে। কোনো দলকে বাদ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সমকাল :'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' গড়ার অগ্রগতি কতদূর?
মির্জা ফখরুল :বিএনপি বিশ্বাস করে, 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' ছাড়া স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী এ সরকারকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই সকল রাজনৈতিক দল ও সচেতন ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
সমকাল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ ও সাজাপ্রাপ্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় গেলে সরকারপ্রধান কে হবেন? তার নাম নির্বাচনের আগে ঘোষণা করা হবে কি?
মির্জা ফখরুল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণের বিজয় সূচিত হবে।
সমকাল :জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত বলে আওয়ামী লীগের নেতারা সম্প্রতি আবারও অভিযোগ তুলছেন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
মির্জা ফখরুল :প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এ ধরনের পরিকল্পিত উদ্ভট অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ১৫ আগস্ট হত্যাকাে র পরে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল। খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতায় ছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ পরে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছেন। যারা ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল তাদের অনেকেই বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোটের শরিক।
সমকাল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কি?
মির্জা ফখরুল :না, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেই। অথচ মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ রয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে।
সমকাল :বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
মির্জা ফখরুল :বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈরী পরিবেশের মধ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার মুক্ত করতে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করা। মুক্তির আন্দোলনকে সফল এবং দানবীয় শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সমকাল :দুই দশক পর আবার আফগানিস্তানে তালেবানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
মির্জা ফখরুল :তালেবানের পুনরুত্থানে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে উগ্রপন্থিদের রাজনীতিতে উত্থানের শঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলে উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা খুব বেশি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
সমকাল :আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল :আপনাকেও ধন্যবাদ।
সমকালের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার করোনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। বিরোধী দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব আরও বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম দরকার 'জাতীয় ঐক্য'। অথচ পূর্বপরিকল্পনা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ মহামারি মোকাবিলার মানসিকতা তাদের নেই। সংকট উত্তরণে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউন দিলে 'দিন আনে দিন খায়' মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে। প্রয়োজনে 'মেগা প্রজেক্ট' স্থগিত করে হলেও সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকা আনতে হবে।
তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই।
সমকাল :করোনাকালে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে? কোনো সংকট দেখছেন কি?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর :সরকার করোনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। কোনোরকম পূর্বপরিকল্পনা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা মোকাবিলা করার কোনো মানসিকতা আমরা সরকারের মধ্যে লক্ষ্য করিনি। আমরা রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞ, এনজিও, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে 'জাতীয় ঐক্য' গড়ে সংকট মোকাবিলা করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সরকার করোনা পরিস্থিতিকে একাই সমাধান করার চেষ্টা করেছে, যা এরই মধ্যে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বিরোধী দলের সব কার্যক্রম বন্ধ করে সরকারি দল রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব আরও বেড়েছে।
সমকাল :করোনা সংকটে মানুষের জীবন-জীবিকা একরকম স্থবির হয়ে আছে। এ সময় রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কী হতে পারে বলে মনে করেন?
মির্জা ফখরুল :করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপি একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জনগণের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে বিএনপি প্রাথমিক পর্যায়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার প্রস্তাব করেছে। যার মধ্যে দিন আনে দিন খায় মানুষ, সব শ্রেণির শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী এবং মালিকদের প্রণোদনা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও পোশাকশিল্পকে সচল রাখার জন্যও প্রণোদনা প্রস্তাব করেছে বিএনপি। বিশেষ করে অতিদরিদ্রদের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। এসব প্রস্তাব সরকার সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করেছে।
সমকাল :রাজনৈতিক দলগুলো এই ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারছে কি? না পারলে এ ক্ষেত্রে কী কী অন্তরায় দেখা দিচ্ছে?
মির্জা ফখরুল :বিভিন্ন সময় সরকারের নানা ভুল সিদ্ধান্ত, অপরিকল্পিত লকডাউনের সিদ্ধান্ত ও বাধার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে চাইলেও পারেনি। বিশেষ করে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ, করোনা হেলথ সেন্টারসহ সব কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছ থেকে কাজ করার কোনো সহযোগিতাই পাইনি এবং কোনো সুযোগই দেওয়া হয়নি।
সমকাল :করোনায় দরিদ্র মানুষের পাশে এবার তুলনামূলকভাবে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কম দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল :করোনা শুরুর পর থেকে অনেক রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল। সরকারের নির্লিপ্ততা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভ্রান্ত নীতির কারণে তাদের উৎসাহ কমে গেছে। অন্যদিকে, অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। এসব বিষয়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের আন্তরিকতা, আগ্রহ এবং যোগ্যতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যক্রমে সব বিশেষজ্ঞ, এমনকি কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শকেও উপেক্ষা করে সরকার অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। টিকা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সমকাল :করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই সংকট মোকাবিলায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব পদক্ষেপ কি যথেষ্ট?
মির্জা ফখরুল :সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া প্রায় সব পদক্ষেপই ব্যর্থ হয়েছে। সময়মতো জেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ও ওষুধ এবং আইসিইউ বেড সরবরাহ না করায়, সর্বোপরি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সরকারের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে গণটিকা অভিযান সংক্রমণকে আরও বাড়িয়েছে।
সমকাল :করোনাকালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে নানা অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল :করোনাকালে প্রমাণিত হয়েছে- সরকার স্বাস্থ্য খাতে কোনো বিনিয়োগ তো করেইনি- উপরন্তু নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পুরো স্বাস্থ্য খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তাই এ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়েছে।
সমকাল :করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সরকারের টিকাদান কার্যক্রম সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
মির্জা ফখরুল :শুধু একটি উৎস থেকে এবং দলীয় ব্যক্তিকে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে- একটি কোম্পানি থেকে টিকা সংগ্রহ করার চেষ্টায় গোটা প্রক্রিয়াই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনেশন করতে হলে ২৬ কোটি টিকা দরকার। ভারতের সঙ্গে তিন কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার চুক্তি ও অগ্রিম টাকা দেওয়ার পারও টিকা মিলেছে মাত্র ৭০ লাখ। সে সময় চীন ও রাশিয়ার আগ্রহ থাকার পরও তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়নি। পরে চার মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকের সহযোগিতায় কয়েক লাখ টিকা পাওয়া গেলেও তা অপ্রতুল। আমরা টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছিলাম, সরকার সেটা করতে পারত।
সমকাল :করোনা সংকট উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
মির্জা ফখরুল :সর্বপ্রথম 'জাতীয় ঐক্য' গড়ে তোলা দরকার। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউন দেওয়ার ক্ষেত্রে দিন আনে দিন খায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাছে ক্যাশ ট্রান্সফার নিশ্চিত করতে হবে। টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে 'মেগা প্রজেক্ট' স্থগিত করে হলেও সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। দ্রুত দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টিকা উৎপাদন জরুরি।
সমকাল :বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গৃহীত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কি সঠিক?
মির্জা ফখরুল :শিক্ষা ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থাকে চালু করার প্রশ্নে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে 'জাতীয় কমিশন' গঠন করা প্রয়োজন।
সমকাল :করোনা মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি লিডাররা পিছিয়ে আছেন। তাদের কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়?
মির্জা ফখরুল :সরকার অযোগ্য আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করছে। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি এবং কমিউনিটি লিডারদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব এবং টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।
সমকাল :এবার রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আসা যাক- দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর চার মাস বাকি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কি?
মির্জা ফখরুল :বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে হলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন অপরিহার্য। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের চিন্তা অবাস্তব; যা বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে।
সমকাল :বিএনপির এই প্রধান দাবি সরকারের কাছ থেকে কীভাবে আদায় করা সম্ভব?
মির্জা ফখরুল :আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশে কখনও দাবি আদায় হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করেনি। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে কঠোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
সমকাল :বিএনপি কি সাংগঠনিকভাবে কঠোর আন্দোলন করার মতো এতটা শক্তিশালী হয়েছে?
মির্জা ফখরুল :বিএনপি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। সাংগঠনিকভাবেও অত্যন্ত শক্তিশালী। ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত এ সংগঠনের কমিটি রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্যাতন ও নিপীড়ন করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করতে চায়। প্রায় ৩৫ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাঁচ শতাধিক গুম এবং সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় কারাদ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করার পরও বিএনপি তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রাম থেকে সরে যায়নি। এই সংগ্রাম ভবিষ্যতে আরও তীব্র হবে।
সমকাল :যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি অনেক দিন আলোচিত হচ্ছে। সর্বশেষ কী অবস্থা?
মির্জা ফখরুল :২০ দলীয় জোট অটুট রয়েছে। কোনো দলকে বাদ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সমকাল :'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' গড়ার অগ্রগতি কতদূর?
মির্জা ফখরুল :বিএনপি বিশ্বাস করে, 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' ছাড়া স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী এ সরকারকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই সকল রাজনৈতিক দল ও সচেতন ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
সমকাল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ ও সাজাপ্রাপ্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় গেলে সরকারপ্রধান কে হবেন? তার নাম নির্বাচনের আগে ঘোষণা করা হবে কি?
মির্জা ফখরুল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণের বিজয় সূচিত হবে।
সমকাল :জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জড়িত বলে আওয়ামী লীগের নেতারা সম্প্রতি আবারও অভিযোগ তুলছেন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
মির্জা ফখরুল :প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এ ধরনের পরিকল্পিত উদ্ভট অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ১৫ আগস্ট হত্যাকাে র পরে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল। খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতায় ছিলেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ পরে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছেন। যারা ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল তাদের অনেকেই বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোটের শরিক।
সমকাল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কি?
মির্জা ফখরুল :না, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেই। অথচ মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ রয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে।
সমকাল :বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
মির্জা ফখরুল :বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈরী পরিবেশের মধ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার মুক্ত করতে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করা। মুক্তির আন্দোলনকে সফল এবং দানবীয় শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সমকাল :দুই দশক পর আবার আফগানিস্তানে তালেবানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
মির্জা ফখরুল :তালেবানের পুনরুত্থানে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে উগ্রপন্থিদের রাজনীতিতে উত্থানের শঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলে উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করা খুব বেশি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
সমকাল :আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল :আপনাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন