সারা শরীরে ব্লেডের পোঁচে ক্ষতবিক্ষত ছোট্ট তানিয়া
শিশু তানিয়ার শরীরে ব্লেডের পোঁচ, ছবি: সমকাল
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৬:৩০ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৬:৩০
ফুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে আট বছরের শিশু তানিয়া আক্তার। তার সারা শরীরে ব্যাথা। একটু পর পরই আঁতকে উঠছে। চিৎকার দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরছে। তার সারা শরীরে ব্লেডের পোঁচ। ক্ষতবিক্ষত শরীরে তাকালেই অন্তত কয়েকশ’ ব্লেডের আঘাত চোখে পড়বে।
মেয়েটি একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করত। সেই বাসাতেই গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে এ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। শিশুটি জানায়, প্রায় পাঁচ মাস বিনা পারিশ্রমিকে গৃহপরিচারিকার কাজ করিয়ে টাকা তো দেয়ইনি, উল্টা তাকে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক করেছেন আসমা নামে ওই গৃহকত্রী। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরমাণু বিভাগের কর্মচারী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের চরপাড়ার বাসায় তানিয়াকে নির্যাতন করা হয়।
তানিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের পানের ভিটা গ্রামের হতদরিদ্র চা বিক্রেতা তমিজউদ্দিনের মেয়ে। সে বলে, যখন খুশি তখনই আমাকে মারধর করতেন। মারার সময় হাতে একটা ব্লেড নিয়ে আমাকে আঘাত করতেন। আবার বলতেন, ‘তোকে মজা দেব, আমাকে আঘাত করতে দে’। এভাবে আসমা আপা ও তার মেয়ে আমাকে নির্যাতন করেছেন। গোপন জায়গায়ও তারা ব্লেড দিয়ে আঘাত করেছেন। এমনকি ঠিকমতো খাইতেও দেন নাই তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় শিশু তানিয়াকে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে পালিয়ে যান এ দম্পতি। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তানিয়ার বাবা-মাকে খবর দেয়। এরপর ট্রিপল নাইনে ফোন করলে ফুলবাড়িয়া পুলিশ এসে অসুস্থ অবস্থায় তানিয়েকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
রাত ১০টার দিকে ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা শিশুটিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
ডা. সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা বলেন, রাত প্রায় ১০টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় তানিয়াকে ফুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তার শরীরে ব্লেডের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠি। মানসিকভাবে প্রচণ্ড রকম ট্রমায় রয়েছে মেয়েটি। তার সারা শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হতভম্ব হয়ে যাই। এছাড়া তার যৌনাঙ্গের পাশেও ব্লেডের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ফুলবাড়িয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জ্যোতিষ চন্দ্র দেব সমকালকে বলেন, ঘটনাটি খুব হৃদয়বিদারক। মেনে নেওয়া যায় না। কাল যখন ট্রিপল নাইনে ফোন করা হয়, তখন আমি গিয়ে শিশু তানিয়াকে উদ্ধার করে সবার আগে হাসপাতালে পাঠাই। মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং ঘটনাটি বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছি। নির্যাতনকারীদের খুঁজে বের করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। এছাড়া তানিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
- বিষয় :
- ফুলবাড়িয়া
- শিশু নির্যাতন