- রাজনীতি
- নির্বাচন কমিশনে দাগ লাগা লোক আনা যাবে না
সুজনের গোলটেবিলে বিশিষ্টজন
নির্বাচন কমিশনে দাগ লাগা লোক আনা যাবে না

ফাইল ছবি
স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চাইলে কমিশনার হিসেবে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে যাদের গায়ে কোনো দাগ নেই। আইনের মাধ্যমে একটি ভালো নির্বাচন কমিশন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হওয়াটাও জরুরি।
বুধবার সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় এমন মত দেন বিশিষ্টজন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে। কোনো আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে কে এম নূরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই এ আইন করা হচ্ছে। সরকার প্রস্তাবিত আইনে কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনো বিধান নেই। ফলে সরকারের সুবিধাভোগী এবং নিজেদের লোক দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন হবে।
সুজন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতই মূল বিষয় ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ওই প্রস্তাবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং একটি অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ছিল। সার্চ কমিটির কার্যাবলির স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নামের তালিকা প্রকাশ এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণশুনানির বিধানও রাখা হয়েছিল।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো আইন করা যায় না। কমিশনারদের কারও বিরুদ্ধে লিখিত-অলিখিত যে কোনো অভিযোগ থাকলেই তাকে বিবেচনা থেকে বাদ দিতে হবে। একটি ভালো কমিশন করতে হলে কোনো দাগ লাগা লোক আনা যাবে না। অভিযোগ এসেছিল, আবার ছাড়াও পেয়েছেন, এমন লোক ইসিতে আনতে হবে কেন?
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা দুটি- নিরপেক্ষতা এবং আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ও সাহস। নির্বাচনে শতাধিক লোক মারা যাওয়ার পরও কমিশনাররা বলছেন তাদের কোনো দায় নেই। এ রকম ব্যক্তি এলে যে রকম চলছে সে রকমই থাকবে। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি শুনানির বিষয়টি না থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আন্তর্জাতিক আইন আছে। তার প্রথমটি হচ্ছে রাজনৈতিক ঐকমত্য। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইসি নিয়োগ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটি হচ্ছে সরকারের ইছাপূরণের আইন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে শুধু নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। যত ভালো আইনই হোক না কেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য নেপালে সাংবিধানিক কাউন্সিল আছে। ভুটানে উচ্চ কক্ষ ন্যাশনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং বিরোধী দলের নেতার সমন্বয়ে একটা পর্ষদ আছে। পাকিস্তানে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটা সংসদীয় কমিটি আছে। কমিটির সদস্যরা অর্ধেক সরকারি দলের এবং অর্ধেক বিরোধী দলের। এই অভিজ্ঞতাগুলোকে সামনে রেখেই সুজনের আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়।
আলোচনার সঞ্চালক ড. রওনক জাহান বলেন, সবার আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বচ্ছতা। এটা না থাকলে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মধ্যে ঐকমত্য আসবে না।
আলোচনায় সুজনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক সিকান্দর খান, শফিউদ্দিন আহমেদ, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারসহ সুজনের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
মন্তব্য করুন