গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দায়িত্ব পালনে ‘ব্যর্থ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। 

সোমবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তনে প্রেস কাউন্সিল দিবসের সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। গণতন্ত্রকে সংহত করা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংহত করা, বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে সংহত করা শুধুমাত্র সরকারি দলের দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের এবং যারা বিরোধী রাজনীতি করেন তাদেরও। সেই দায়িত্ব পালন করতে বিএনপি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপি গণতন্ত্রে ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে ‘বিশ্বাস করে না ’ বলে  প্রেস কাউন্সিলসহ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে বলেও যোগ করেন তিনি। 

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো, সরকারের সমালোচনা না করে তারা বিরোধীদল হিসেবে কতটা ব্যর্থ, তারা তাদের কর্মীদের কাছে কতটা ব্যর্থ, সেটি আয়নায় দেখার জন্য।’ 

নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানানো হলেও বিএনপি তাতে সায় দেয়নি। দলটির মহাসচিব 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সার্চ কমিটির বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে যখন একটি অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিএনপি তখন সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা করছে। তারা যখন দেখলো যে সার্চ কমিটি সমাজের সমস্ত মানুষের সাথে আলোচনা করছে এমনকি তাদের পক্ষে যারা কথা বলে তারাও সেখানে আলোচনায় গেছে, তখন মির্জা ফখরুল সাহেবরা হতাশা থেকে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বক্তব্য রাখছে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিমের সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো: মকবুল হোসেন পিএএ বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং প্রেস কাউন্সিল সদস্য দৈনিক প্রভাত সম্পাদক মুজাফফর হোসেন পল্টু, দ্য ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক সভায় বক্তব্য রাখেন।

প্রেস কাউন্সিলের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মনে করেন যে আমাদের এই বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিকাশে গণমাধ্যমের বিকাশ প্রয়োজন, স্বাধীনতা প্রয়োজন। একইসাথে প্রয়োজন দায়বদ্ধতারও। সেই দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছেন। প্রেস কাউন্সিল একটি জুডিশিয়াল বোর্ড, এর মুখ্য কাজ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা গোষ্ঠী যদি কোনো সংবাদের জন্য সংক্ষুব্ধ হয়, তখন প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করলে কাউন্সিল সেটি নিষ্পত্তি করবে। এছাড়া সাংবাদিকতার নীতিমালা নিয়েও কাউন্সিল কাজ করছে। এই কাউন্সিলকে আরো শক্তিশালী করতে প্রেস কাউন্সিল আইনকে যুগোপযোগী করে মন্ত্রণালয় খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। এটি পাস হলে কাউন্সিল আরও কার্যকর সেবা দিতে পারবে। 

এসময় গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে। পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর সেটি কমিটিতে যাবে, কমিটি চাইলে যেকোনো পরিবর্তন করতে পারে, ফেরত পাঠানোরও ক্ষমতা আছে। সাংবাদিকদের কল্যাণবৃদ্ধিতে যেটি দরকার সেটি অবশ্যই করা যাবে।