- রাজনীতি
- বিএনপির কাণ্ডারি এখন সাবেক ছাত্রদল নেতারা
বিএনপির কাণ্ডারি এখন সাবেক ছাত্রদল নেতারা

আগামী জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন সময় মোকাবিলা করতে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের ওপরেই 'আস্থা' রাখছে বিএনপি। বিগত চার দশকে কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়া, নেতাদের দলত্যাগ, আন্দোলনে 'যথাযথ' ভূমিকা না রাখা এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে 'আঁতাত' করার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এমন কৌশল গ্রহণ করেছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের আসীন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সারাদেশে দলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫২টিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা 'কাণ্ডারি'র ভূমিকায় বসছেন। চলমান দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় এসব জেলা ও মহানগরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব পদে 'অনুগত' ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের বসানো হয়েছে। এসব জেলা ও মহানগরের সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে রাজনীতিতে নিষ্ফ্ক্রিয় রয়েছেন। আবার অনেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, যোগ্য ও মেধাবীদের নেতৃত্বে না আনলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক আইনে ক্ষমতাসীন থেকেই রাজনৈতিক দল গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেন তা-ই অল্পদিন পরে বিএনপির জন্ম দেয়। তখন বাম-ডান-মধ্য বিভিন্ন চরিত্রের অন্যান্য দল থেকে অনেক লোক এসে বিএনপিতে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী চার দশকে একাধিকবার রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় ছাত্রদল ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে অনেক তরুণ পোড় খাওয়া রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গড়ে ওঠেন। এখন দলটি তীব্র নির্যাতনের মুখে থাকলেও সারাদেশে বিএনপির যে কমিটিগুলো হচ্ছে সেখানে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের প্রাধান্য থাকায় দলটি একমুখী নতুন চরিত্র লাভ করছে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া 'কার্যত গৃহবন্দি' থাকা অবস্থায় সুদূর লন্ডনে বসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এই দল পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
দলের হাইকমান্ড, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও জেলার নতুন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা বলছেন, বর্তমান সাংগঠনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিগত সময়ে ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন- যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলে নেতৃত্ব দিয়ে যাঁরা তৈরি হয়েছেন তাঁরা মূল দলে আসছেন। ফলে দল রাজপথের আন্দোলনের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী দিনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
আবার বিদায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বলছেন, অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সমন্বয়ে প্রতিটি কমিটি গঠন হলে, দল বেশি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে তাঁরা স্বীকার করেছেন, বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশালসহ বেশ কিছু স্থানে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন স্থানীয় নেতাকর্মীরা মেনে নেননি। প্রতিবাদে বরিশালের একটি আহ্বায়ক কমিটি থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সমকালকে বলেন, আমি মনে করি, সাবেক ছাত্রদল নেতাদের বিএনপির নেতৃত্বে আসার বিষয়টি ইতিবাচক। ছাত্রদল নেতারা রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। দলের প্রতিও তাঁরা অনুগত। ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে আগামী দিনে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিষ্ফ্ক্রিয়- এটা বলা যাবে না। অনেকে বয়স্ক ও অসুস্থ। তাঁরাও তাঁদের বর্তমান অবস্থান থেকে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে দলকে শক্তি জোগাচ্ছেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ চার দশকে জেনারেল এরশাদের আমলসহ বেশ কয়েকবার ভাঙনের কবলে পড়েছিল দলটি। প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারা এবং সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির মতো দলের জন্ম হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে আরেক দফা ভাঙনের কবলে পড়ে। সেই বিভেদের রেখা এখনও মুছে যায়নি। বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য দলে পদহীন অবস্থায় রয়েছেন। এভাবে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও আসে দলটি।
আগামী ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের প্রথমে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির ওপর আবার 'চাপ' তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে দলটির হাইকমান্ড। দাবি আদায় না হলে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচিও দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অতীতের মতো ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিএনপির একটি অংশকে নানা উপায়ে 'বিভ্রান্ত' করার বিষয়টি মাথায় রাখছেন তাঁরা।
এ পরিস্থিতিতে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বিএনপিকে। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন করেও তা আদায় করতে পারেনি দলটি। একবার বর্জন এবং বাধ্য হয়ে আরেকবার আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েও 'ফল বিপর্যয়' ঘটে। এমন অবস্থায় এবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলটি বলছে, সংবিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচন হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না। বিএনপিও নির্বাচনে আসবে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের মতে, সরকারের এই অনমনীয় অবস্থানে বিএনপির সামনে 'অগ্নিপরীক্ষা'। যদিও নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করতে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দাবি আদায়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে তৃণমূল থেকে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। পাশাপাশি একই ইস্যুতে সরকারবিরোধী সমমনা ডান-বাম-ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে 'যুগপৎ আন্দোলন' করতে 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' গঠনে সংলাপও চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দলের দুই শীর্ষ নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের 'সক্রিয়' রাজনীতিতে অনুপস্থিতিতে তা কতটুকু 'সফল' হবে- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
বিএনপির অন্দর মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার 'ডু অর ডাই' নীতি গ্রহণ করছে দলটি। পরপর দুটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ 'কারচুপি'র মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হলেও এবার তা হতে দেবে না তারা। এ ধরনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে দলকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা, যাতে বিগত দিনের মতো আন্দোলন ব্যর্থ না হয়। দলকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী করা হচ্ছে। নেতৃত্বের আসনে আনা হচ্ছে দলের বিশ্বস্ত, ত্যাগী ও সাহসী সাবেক ছাত্রদল নেতাদের। প্রতিটি মহানগর ও জেলায় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের দুটি পদেই সাবেক ছাত্রদল নেতাদের আনার চেষ্টা হচ্ছে। যোগ্য দু'জন না পেলে, অন্তত একটি পদে হলেও সাবেক ছাত্রনেতাকে বসানো হচ্ছে। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তরুণ নেতৃত্ব আনা হচ্ছে। মূল দলের পাশাপাশি বর্তমানে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সবাই ছাত্রদলের সাবেক নেতা। এর আগে যুবদল ও কৃষক দলের শীর্ষ নেতৃত্বে বেশিরভাগই অন্য দল থেকে আসা ব্যক্তিদের আনা হয়েছিল।
এবার টার্গেটে পৌঁছবে বিএনপি: ছাত্রদল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস নির্বাচিত খায়রুল কবীর খোকন বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলার আহ্বায়ক হয়েছেন। তিনি বলেন, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে দলের হাইকমান্ড ত্যাগী ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মূল দলের নেতৃত্বে আনছেন। বিশেষ করে দলের সংকটময় মুহূর্তে অনেকে আদর্শচ্যুত হয়েছেন। দলকে বেকায়দায় ফেলে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই অতীতের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রনেতাদের ওপর দলের হাইকমান্ড অনেকটা আস্থা রাখছেন। নির্ভর করে তাদের নেতৃত্বের আসনে আনছেন। তিনি আশা করেন, '৮০ ও '৯০ দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতো আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবির আন্দোলনে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারবেন।
এক সময়ে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। তিনি সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ও জেলার রাজনীতির শীর্ষ পদে সাবেক ছাত্রদল নেতারা আসছেন- এটি রাজনীতির ধারাবাহিকতার অংশ। তিনি আশা করেন, ছাত্রনেতাদের রাজনীতির অভিজ্ঞতার কারণে সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাঁরা 'টার্গেটে' পৌঁছতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কখনও ভাঙেনি। কিছু উচ্চাভিলাষী দল থেকে বেরিয়ে গেছেন। এতে দলের ক্ষতি হয়নি বরং তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তা ছাড়া আন্দোলনে সব সময় সফল হওয়া যায় না। সময় লাগবে। যেমন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ৯ বছর লেগেছিল। আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।
ছাত্রদলের আরেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বর্তমানে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। ছাত্ররাজনীতির পর মূল দলের নেতৃত্ব বিষয়ে সমকালকে বলেন, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মাধ্যমে সাবেক ছাত্রদল নেতারা বিএনপির নেতৃত্বে আসছেন। তিনিও ছাত্রদলের পর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে আসছেন। দলের এক নেতার এক পদ নীতির কারণে কেন্দ্রীয় ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটি শুভ লক্ষণ। বার্ধক্যজনিত কারণে সিনিয়র নেতাদের শূন্যস্থান সাবেক ছাত্রনেতারা পূরণ করছেন। সংগত কারণে এসব অনুগত নেতার মাধ্যমে সামনে আন্দোলন-সংগ্রাম আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে। বিশ্বস্ততার পরীক্ষায়ও তাঁরা উত্তীর্ণ।
দল শক্তিশালী হওয়া নিয়ে সন্দিহান: বরিশাল মহানগরের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার। বর্তমানে তিনি দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে রয়েছেন। বরিশালের সাবেক মেয়র সরোয়ার সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন যাঁরা বিএনপিতে নিষ্ফ্ক্রিয় ছিলেন তাঁদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির কিছু নেতা দলের ত্যাগী নেতাদের নানাভাবে উপহাস ও অবজ্ঞা করছেন। আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, দলের চেয়ে তাঁদের কাছে ব্যক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি। তাঁরা দলকে কুক্ষিগত করতে চাইছেন।
বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ বলেন, উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটিতে দলের অনেক যোগ্য নেতা বাদ পড়েছেন। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর গত ৮ মাসে কমিটি একটি পরিচিতি সভা ছাড়া আর কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে পারেনি। একটি উপজেলা কমিটির সঙ্গেও তাঁরা এখন পর্যন্ত সভা করতে পারেননি। ফলে এই আহ্বায়ক কমিটি দলকে কতটুকু শক্তিশালী করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন সম্পর্কে মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি সমকালকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় বিষয় এটা এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সে জন্য এটা নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। তবে এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা- এমন প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রশাসনে রদবদল করছে। তারা দল গোছাচ্ছে। আমাদেরও দল গোছানো এবং দলকে শক্তিশালী করা উচিত।
যোগ্য ও মেধাবীদের নেতৃত্বে আনা উচিত: রাজনৈতিক বিশ্নেষক ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অনেক মেধাবীকে রাজনীতিতে যুক্ত করেছিলেন। এতে তাঁর দলটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ দলে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এখনকার রাজনীতিতে মেধাবীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যোগ্য, আদর্শবান, নৈতিকভাবে সৎ চরিত্রের অধিকারীদের দলের নেতৃত্বে আনা উচিত। কিন্তু বর্তমানে তরুণ রাজনৈতিক নেতারা অধিকাংশই মেধাবী নন। রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও করতে পারলেই নেতা হওয়া যায়। রাজনৈতিক দলগুলো সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এবং মানুষকে আকৃষ্ট করতে আধুনিক ও মেধাবী রাজনীতিবিদ প্রয়োজন। বিএনপিকে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্নেষক ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, তরুণ নেতৃত্ব ভালো। তবে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে সঠিক, যোগ্যতা সম্পন্নদের নেতৃত্বে আনা উচিত। ২০০১ সালে বিএনপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে অনেক তরুণ নেতাকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী এবং এমপি বানিয়েছিল। ২০০১-০৬ সালের শাসনামলে বিএনপি যেসব ভুলত্রুটির কারণে ব্যর্থ হয়েছিল তা ওইসব তরুণ নেতার কারণেই হয়েছিল। যোগ্যতা ও দক্ষতা যাচাই-বাছাই না করলে ভবিষ্যতে হিতে বিপরীত হবে।
(এ রিপোর্ট তৈরিতে সমকালের ব্যুরো, অফিস ও জেলা প্রতিনিধিরা সহায়তা করেছেন)
মন্তব্য করুন