লঘুচাপ এবং পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র। তীরে আছড়ে পড়ছে দানবীয় ঢেউ। এতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাবনী, সুগন্ধা পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি স্থানে। গত দু'দিনের তাণ্ডবে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে লাবনী, শৈবাল, ডায়াবেটিক পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি ও ঝাউবন। ঝুঁকির মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসনের নির্মিত সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চও। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সৈকতের নাজিরারটেক থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে প্রবল ঢেউয়ের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় লাবনী পয়েন্ট বিলীন হওয়ার পথে। বালিয়াড়িতে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সটিও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। পরে সেটি উদ্ধার করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা। বালু ধুয়ে যাওয়ায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে পুরো সৈকত। কয়েকটি জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিওটিউব দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও কোনো ফল হচ্ছে না।

সৈকতের লাইভ গার্ড কর্মীরা বলেন, ভয়াবহ এই ভাঙন অব্যাহত থাকলে ট্যুরিস্ট পুলিশ ভবন, সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ, ছাতা মার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ভাঙনের এত তীব্রতা আগে কখনও দেখা যায়নি। ঢেউয়ের তোড়ে চোখের সামনেই পুলিশ বক্সটি পড়ে যাচ্ছিল। কোনোমতে ঘরটি সাগরে বিলীন হওয়ার আগেই খুলে রক্ষা করা হয়েছে। চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। গতকাল সকালে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি এ তথ্য জানান।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সৈকতে ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিবের নির্দেশে সীমিত আকারে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। লাবনী পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে নুনিয়াছড়া নাজিরারটেক পর্যন্ত কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্পের সম্ভাব্যতাও যাচাইয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় কিছু এলাকায় জিও টিউব দিয়ে ২ কোটি টাকার অস্থায়ী মেরামত কাজ করে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই সৈকতের বিভিন্ন অংশ ভাঙছে। বিশেষ করে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা বর্ষা মৌসুমে ভাঙে। এ অবস্থায় পর্যটন শিল্প ও কক্সবাজার শহর বাঁচাতে স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিয়ে ভাবা হচ্ছে।