- রাজনীতি
- বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারও খাবে: সেতুমন্ত্রী
আ.লীগের সমাবেশ
বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারও খাবে: সেতুমন্ত্রী

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছবি: ফোকাস বাংলা
ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও সন্ত্রাসবাদ-নাশকতার অপচেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত বোমা হামলা ও সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি কায়েম করতে চায়। তাই শপথ নিতে হবে, বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। যেখানেই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসবাদ-নাশকতা করবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বুধবার দেশজুড়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে বিশাল সমাবেশে নেতারা এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশের পরে রাজধানীতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিলও হয়েছে।
এই সমাবেশ ও মিছিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ কিছুদিন পর রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করেছে। সমাবেশের পূর্বনির্ধারিত সময় বিকেল ৪টা থাকলেও দুপুরের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুুন নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতে শুরু করে শাহবাগ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল এলাকা পর্যন্ত। বিকেলের আগেই নেতাকর্মীদের ভিড়ে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের ঠিকানা, পৃষ্ঠপোষক ও কারখানা। এদের রুখতে হবে, মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের শপথ নিতে হবে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না। আর আগামী নির্বাচনে মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে এ দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারও ধরা খাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্দুকের নলে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগের জন্ম এ দেশের মাটিতে। কাজেই আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আন্দোলনেই আওয়ামী লীগের জন্ম। বিএনপিকে 'বাংলাদেশ নালিশ পার্টি' আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, এই নালিশ পার্টির কাজই হচ্ছে, চোখের পানি ও নাকের পানি এক করে বিদেশিদের কাছে নালিশ করা। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার রঙিন খোয়াব কোনোদিনই পূর্ণ হবে না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুত তো? খেলা হবে। রাজপথে, আন্দোলনে ও নির্বাচনে খেলা হবে। সেই খেলায় আমরাই জয়লাভ করব। এ জন্য প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশ কোনোদিন শ্রীলঙ্কা হবে না। পাকিস্তান হবে না। বাংলাদেশ কখনও দেউলিয়া হবে না। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০-৪২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে নিয়ে শেখ হাসিনা ভাবেন। তিনি জেগে আছেন, যেন আমরা ঘুমাতে পারি।’
সমাবেশ মঞ্চে নেতাকর্মী বেশি বসায় বিরক্তি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মঞ্চে এত নেতা? কোথায় থেকে এলো এত নেতা? নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা দায়। সবাই নেতা। নেতারা কর্মীদের সঙ্গে বসবেন। নেতা একজনই। তিনি শেখ হাসিনা। আমরা সবাই কর্মী।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ভেবেছিল- সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই খালেদা-তারেকের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করছে। এই দেশ সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের দেশ নয়। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপির জঙ্গিবাদ কায়েম করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছিল। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বাংলা ভাইয়ের নেতা দণ্ডিত তারেক রহমান দেশকে অস্থিতিশীল করার স্বপ্ন দেখেন। দেশের শান্তি বিঘ্নিত করতে চান। কিন্তু সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করা হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী বলে তারা জানে না আওয়ামী লীগের জন্ম এই মাটিতেই হয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের পরাজিত করে ছাড়বে। তিনি বলেন, বিএনপি বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে তারা নির্বাচনে আসবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনও অসাংবিধানিক পন্থা আনতে দিতে পারে না।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিরোধ করবে।’
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নামের আগুনসন্ত্রাসীরা আবারও মাঠে নেমেছে। এদের প্রতিরোধ করতে আজ থেকে আওয়ামী লীগও মাঠে নামল।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন ও শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন