- রাজনীতি
- আরপিও সংশোধন প্রস্তাবে সাড়া নেই, মন্ত্রণালয়কে ইসির শেষ চিঠি
আরপিও সংশোধন প্রস্তাবে সাড়া নেই, মন্ত্রণালয়কে ইসির শেষ চিঠি

ফাইল ছবি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)’ কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু তিন মাসের বেশি সময়ে এ বিষয়ে ইসিকে কিছু জানায়নি আইন মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায় এ বিষয়ে অগ্রগতি আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে ‘শেষবারের মতো’ চিঠি দিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
আজ রোববার ইসির উপসচিব মো. আব্দুল হালিম খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
ইসি গত ৮ আগস্ট আরপিওর সংশোধনী সংক্রান্ত খসড়া বিল প্রস্তুত করে প্রথম চিঠিটি পাঠিয়েছিল। দীর্ঘ সময় পার হলেও পাঠানো বিলের বিষয়ে ইসিকে অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়নি। ফলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবর লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগকে জরুরি চিঠি দিয়ে অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। তা সত্বেও এ পর্যন্ত ওই খসড়া বিলের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি।
আজকের চিঠিতেও এসব তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘আরপিওর সংশোধন সংক্রান্ত খসড়া বিলের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অবগত করার জন্য শেষবারের মতো বিশেষভাবে সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হচ্ছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান মতে, দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর লেজেসটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ রাষ্ট্র ও সরকারের নির্বাহী বিভাগের একাংশ। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা এর সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন মনে করে, সংবিধান ও আইনের সুষ্পষ্ট বিধানের ব্যত্যয়ে কমিশনের যাচিত অনুরোধ ও চাহিদা উপেক্ষিত হলে কমিশন স্বীয় দায়িত্ব পালনে আবশ্যক সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না। এতে নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের সক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নে জনমনে অনাকাঙ্খিত সংশয়ের উদ্রেক হতে পারে।’
আর রিকোয়েস্ট করা হবে না: সিইসি
প্রধান নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সময় বেঁধে দিয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা, তারা রেসপন্স নিশ্চয় করবেন। এই চিঠির পর আর রিকোয়েস্ট করা হবে না।’
জবাব না এলে, আইনি সংস্কারও না হলে ভোট কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরের পরে সেই সিদ্ধান্ত নেব।’
আরপিওতে যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব
ইসি সূত্র জানায়, বিদ্যমান আরপিওতে যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোট বাতিলে ইসির ক্ষমতা ও ভোট বন্ধে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়ানো, প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে বা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে শাস্তির বিধান, সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে শাস্তি, দলের সর্বস্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া, দায়িত্বে অবহেলায় কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতা বাড়ানো, প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ভোট গণনার বিবরণী প্রার্থী ও তাঁর এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি) পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব ইত্যাদি।
গত আগস্টে এসব প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর গত ৪ অক্টোবর ইভিএম সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার অনুমতি (কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে) দিতে পারবেন।
ইসির এসব প্রস্তাব আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে জাতীয় সংসদে এগুলো পাস হতে হবে। এর আগে ইসির প্রস্তাবগুলো প্রথমে খতিয়ে দেখবে আইন মন্ত্রণালয়। এরপর তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেতে হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা জাতীয় সংসদে তোলা হয়।
মন্তব্য করুন