ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শয়নের অনুসারীদের সম্মিলিত পক্ষ এবং ঢাবি সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। পরে হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমের কক্ষ (২০১) ভাঙচুর করা হয়। 

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটায় শুরু হয়ে রাত দেড়টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহতরা হলেন, সৈকতের অনুসারী হল ছাত্রলীগ নেতা ইমামুল হাসান, মাহমুদুল হাসান, পারভেজ রেদোয়ানুর, শাহরিয়ার হাসান কল্লোল, সাদমান রিসান, হাসিবুল হাসান শাহেদ। অন্যদিকে সম্মিলিত গ্রুপের তানজিন আলম, সাদেক হোসেন, সাব্বির হোসেন, ফিরোজ কবীর, ফুয়াদ বিন রায়হান, মো. জালাল মিয়া, সিয়াম হোসেন, কামরুল আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৩টি আবাসিক হল রয়েছে। এসব হলে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। হলগুলোতে বিভিন্ন পক্ষের ছাত্রলীগের নেতারা আসন ভাগাভাগি করে থাকেন।  দেড় মাস আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর শীর্ষ চারজন নেতাকে কেন্দ্র করে হলগুলোতেও নতুন নতুন পক্ষ তৈরি হয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে নিয়মিতই দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে পক্ষগুলো।

ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হলের দক্ষিণ ভবনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারীরা। অন্য তিন পক্ষের অনুসারীদের অভিযোগ, সৈকতের অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় প্রতিনিয়তই তারা বিভিন্ন কক্ষে অন্য গ্রুপের অনুসারীদের সিট থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে নিজেদের কর্মীদের সিটে তুলে দিচ্ছেন। তাই বাকি তিন গ্রুপের অনুসারীরা একত্র হয়ে সোমবার রাতে ৫০০৬ নম্বর রুমে সৈকতের গ্রুপের কর্মী সাব্বির অনিককে সিট থেকে নামিয়ে দেয়। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয় সংঘর্ষ। পরে হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম সমাধানের চেষ্টা করলে তার কক্ষে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে সৈকতের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

হলের একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তারা জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দুই পক্ষই তাদের কর্মীদের হলের নিচের তলায় নামিয়ে আনে। এ সময় হলের বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল থেকে সৈকতের অনুসারীরা এসে এ ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ ওঠেছে।  

এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন নাঈম বলেন, বিভিন্ন হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আমি একটি ‘হাস পার্টির’ আয়োজন করেছিলাম। রাত দেড়টার দিকে আমার কক্ষে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে চার নেতাকে জানাই। 

হল ছাত্রলীগের নেতা শাওন চৌধুরী, জিহাদুল ইসলাম, আসাদুল্লাহ আসাদ, মাহিদুর রহমান বাঁধন ও সানজিদ হোসেন হলে সৈকতের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। 

ঘটনার বিষয়ে সানজিদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘তারা পূর্বপরিকল্পিভাবে ৫০০৬ নং কক্ষে ঝামেলা শুরু করে। এরপর আমাদের অনুসারীরা সেখানে যায়। পরে আমরা গিয়ে দেখি, আমাদের ছোট ভাইদের মারধর করা হয়েছে, কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে আমাদের কয়েকজন মূল ভবনে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে। তারা সমাধানে না এসে আমাদের অনুসারীকে মারধর করে সিট ফেলে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে আমরা নাঈম ভাইয়ের কক্ষ ভাঙচুর করিনি।’  

অন্যদিকে হল ছাত্রলীগের নেতা ফিরোজ কবির, মাসুদ রানা, শাফিনুর রহমান, ফয়সাল হক জামি ও জাহিদ হাসান রুবেল হলে শেখ ইনানের গ্রুপের এবং রবিউল ইসলাম রবি, হুমায়ুন কবির সবুজ এবং মাকফুর রহমান সাদ্দাম হোসেনের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন।   

জাহিদ হাসান রুবেল, রবিউল ইসলাম রবি ও হলে শয়নের অনুসারী মাইনুদ্দিন চৌধুরী বাপ্পীর সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তারা বলেন, নতুন কমিটির পর সৈকতের অনুসারীরা ৩০১০ নম্বর কক্ষ থেকে আমাদের ছোট ভাইকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আরও কয়েকটি কক্ষে একই ঘটনা ঘটেছে। তাই তারা সমাধান করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ওপর হামলা করা হয়। 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সমকালকে বলেন, কেউ যদি বিভাজনের রাজনীতি করে, সাংগঠনিক নিয়ম পরিপন্থীকাজে জড়িত হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, রাতের সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যেন একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক ।

তানভীর হাসান সৈকত বলেন, সংঘর্ষে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মুহাম্মদ মাসুম বলেন, আমরা আবাসিক শিক্ষকদের বৈঠক ডেকেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, রাতেই বিষয়টি জেনেছি। প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা বিষয়টি দেখবেন।