শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানের এক সময় বিশ্বস্ত শিষ্য ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর। চট্টগ্রামে ২০০০ সালের চাঞ্চল্যকর এইট মার্ডার মামলার আসামি সাজ্জাদ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থেকে আকবরের মাধ্যমেই শহরের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তবে এবার সাজ্জাদের ওপরেই গুরুমারা বিদ্যার প্রয়োগ করেছেন আকবর।

সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে সম্প্রতি আকবর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বসেন। চাঁদা না দেওয়ায় পরে দলবল নিয়ে এসে সাজ্জাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেন। এসব অভিযোগে গতকাল বুধবার বায়েজিদ বোস্তামি থানায় আকবরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাজ্জাদের বড় ভাই ওসমান আলী। থানার ওসি ফেরদৌস জাহান জানিয়েছেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আকবর ফোন করে সাজ্জাদের বড় ভাই ওসমান আলীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরে গত মঙ্গলবার দুপুরে আকবরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন এসে সাজ্জাদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ঘরের ভেতরে ঢুকে গান পাউডার ছিটিয়ে আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তাঁরা ঘরে থাকা দেড় লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি, সাড়ে সাত লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও দুটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যান। এ সময় ওসমান আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম তাঁদের বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করা হয়।

সাজ্জাদের বড় ভাই ওসমান আলী বলেন, 'আমি একজন ঠিকাদার। ঘটনার দুই দিন আগে ঢাকাইয়া আকবর পরিচয়ে ফোন করে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। কেন চাঁদা দেব জানতে চাইলে আমাকে অনন্যা আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা করতে বলা হয়। আমি আমার ছোট ভাইকে নিয়ে অনন্যা আবাসিক এলাকায় যাই, কিন্তু সেখানে কাউকে পাইনি। পরে আবার আমাকে ফোন করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। দুই দিন পর আকবর দলবল নিয়ে গান পাউডার ও অকটেন ছিটিয়ে আমার ঘরে আগুন দিয়েছে। আমি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'

কে ঢাকাইয়া আকবর?

বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ জব্বার সওদাগর বাড়ির মোহাম্মদ মঞ্জুরের ছেলে আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর। সাজ্জাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহচর আকবর নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজিসহ ৬/৭টি মামলা রয়েছে। মূলত সারোয়ার ওরফে বাবলা ও নুরুন নবী ওরফে ম্যাপনের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন আকবর। সারোয়ার-ম্যাপন নিজেরা বাহিনী তৈরি করে চাঁদাবাজি শুরু করলে সাজ্জাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এই সুযোগে সাজ্জাদের কাছাকাছি চলে আসেন আকবর।

জানা গেছে, ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও ভবন মালিকদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিদেশে থাকা সাজ্জাদের কাছে পাঠাতেন আকবর। এরপর সাজ্জাদ ফোনে চাঁদা দাবি করতেন। টাকা না দিলে সহযোগীদের নিয়ে গুলি চালিয়ে ও পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে আতঙ্ক তৈরি করতেন আকবর। তাঁর তোলা চাঁদার একটি অংশ বিদেশে পৌঁছে যেত সাজ্জাদের কাছে। সর্বশেষ গত বছরের ১৯ জুলাই চাঁদা চেয়ে না পেয়ে চালিতাতলী এলাকায় ব্যবসায়ী তানভীর আলমের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আকবরের লোকজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হয়তো সাজ্জাদ ও আকবরের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাই গুরুর বাড়িতে আগুন দিয়েছেন আকবর।