খুলনা মহানগরীকে স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে গড়ে তুলতে গত বছর কাজ শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি), স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলবে এই কার্যক্রম। তবে স্বাস্থ্যকর শহর গড়ার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ নগরীর বাতাসের মান। নগরীর বয়রা মোড়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্র (ক্যামস) থেকে সার্বক্ষণিক শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়, যা প্রতিদিন রিপোর্ট আকারে প্রকাশ হয় ক্যামসের ওয়েবসাইটে। ক্যামসের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- দুই মাস এবং গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খুলনার বাতাস ছিল পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে জানুয়ারির ২২ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত বাতাসের মান ছিল মারাত্মক খারাপ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো স্থানের বাতাসে বস্তুকণার স্বাভাবিক মান বা পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ ঘনমিটার। ক্যামসের রিপোর্ট বিশ্নেষণে দেখা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে খুলনার বাতাসে বস্তুকণা রয়েছে ২৫০ ঘনমিটারের ওপরে। এর মধ্যে কিছু দিন এই কণার উপস্থিতি ৪০০ থেকে ৪৫০ ঘনমিটার ছাড়ায়। একইভাবে স্বাভাবিক বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় দশমিক ১৪ পিপিএম থাকার কথা। কিন্তু খুলনার বাতাসে বর্তমানে সালফারের পরিমাণ ১.৭ পিপিবির (পার্টস পার বিলিয়ন) ওপরে। ওজন থাকার কথা ঘণ্টায় দশমিক ১২ পিপিএম; কিন্তু রয়েছে ৩.৫০ পিপিবির ওপরে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে।

নগরীতে চলাচলের সময়ও দুষণের বিষয়টি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে শহরের অধিকাংশ সড়ক এখন ধুলায় ধূসর। মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে জোড়াগেট, আহসান আহমেদ রোড, শামসুর রহমান রোড, বিআইডিসি রোড, খানজাহান আলী সড়ক, শিপইয়ার্ড রোড, মুজগুন্নী মহাসড়ক, বাস টার্মিনাল থেকে বয়রা, নতুন রাস্তা, বাস টার্মিনাল সংযোগ সড়ক এড়িয়ে চলে মানুষ।

পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার সিনিয়র কেমিস্ট তানভীর হায়দার বলেন, নির্মাণকাজের ধুলাবালুর কারণে বাতাসে ভারি বস্তুকণা বাড়ছে। আর পরিবহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, ক্ষতিকর জ্বালানি থেকে বাড়ছে সালফার ডাই-অক্সাইড। ওজনসহ বাতাসে এসব উপাদান বেশি থাকায় কাশি, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার বলেন, বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ বাড়লে অল্পতেই মানুষ কাশি ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। স্বাস্থ্যকর শহরের পরবর্তী সভায় বিষয়টি উত্থাপনের পাশাপাশি বায়ুমান বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, শুস্ক মৌসুম হচ্ছে উন্নয়ন কাজের সময়। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় সড়ক, ড্রেনের কাজ চলছে। এ কারণে ধুলাবালু বেড়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ ও বর্ষা মৌসুমে আবার বায়ুমান সহনীয় হয়ে আসবে।