- রাজনীতি
- বছরজুড়েই অনুষ্ঠানমালা, আজ লাল পতাকা মিছিল
সিপিবি প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর
বছরজুড়েই অনুষ্ঠানমালা, আজ লাল পতাকা মিছিল

সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেন্দ্রিক দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে বাম ধারার শক্তি কেন্দ্র গড়ে তুলতে চায় দলটি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দলের দ্বাদশ কংগ্রেসে এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এর আগের কয়েকটি কংগ্রেসেও এমন অঙ্গীকার ছিল তাদের।
তবে সর্বশেষ কংগ্রেসে এই বিকল্প গড়ে তোলার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে দলে এসেছে তারুণ্যনির্ভর নতুন নেতৃত্ব। নতুন কমিটি এরই মধ্যে তাদের মেয়াদের এক বছর পার করেছে। এ অবস্থায় দেশের অন্যতম বৃহৎ বামপন্থি দল সিপিবির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ সোমবার উদযাপিত হবে।
গৌরবের ৭৫ বছর উপলক্ষে দেশজুড়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হচ্ছে আজ। সূচনা দিনে আজ সারাদেশে পতাকা উত্তোলন, দলীয় সমাবেশ, শোভাযাত্রাসহ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ৮টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কার্যালয় মুক্তিভবনে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরানা পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ ও লাল পতাকা মিছিল হবে।
সিপিবি নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারসহ দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাঁরা। দেশ ও জাতির কাঙ্ক্ষিত মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধনই তাঁদের মূল লক্ষ্য। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্যেই দ্বিদলীয় মেরূকরণের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিবলয় গড়ে তুলতে কাজ করছেন তাঁরা।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমকালকে বলেছেন, তাঁদের এই বিকল্প গড়ার সংগ্রাম অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। তবে এটা রাতারাতি অর্জনের বিষয় নয়। সব মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করেই বিকল্প গড়ে তোলা যায়। সেই লক্ষ্যে তাঁরা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তুলছেন। বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইটা আরও অগ্রসর হচ্ছে। এই লড়াই-সংগ্রামের পথে প্রবল প্রতিকূলতার মুখে তাঁদের একেকটি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বৈরী আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, প্রচারমাধ্যমের এক ধরনের বয়কট ও অপপ্রচার ইত্যাদি প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তারপরও জনগণের ভেতরে বিকল্প গড়ার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিবৃতিতে শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, মেহনতি মানুষসহ দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিগত দিনে দলের পতাকা সমুন্নত রাখতে গিয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং অতীত ও বর্তমানে নানাভাবে যাঁরা দলে অবদান রেখেছেন ও রাখছেন, তাঁদের সকলকে অভিনন্দন জানান তাঁরা।
ভারতবর্ষের বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ কলকাতা সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। একই সম্মেলনে খোকা রায়কে সম্পাদক করে কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ব বাংলা আঞ্চলিক কমিটি তথা পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি গঠন করা হয়। স্বাধীনতার পর দলটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সংক্ষেপে সিপিবি নামে পরিচিত হয়। তবে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। ১৯২০ সালে এই ভূখণ্ডে এ আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ১৯২৫ সালে ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। সিপিআইর দ্বিতীয় কংগ্রেসে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি গঠিত হয়েছিল।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে দলের নেতাকর্মীরা অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সৃষ্টিতেও তাঁদের ভূমিকা ছিল অনন্য। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জেল-জুলুম-নির্যাতন অগ্রাহ্য করে সিপিবি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজপথে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
চলার পথে আন্দোলন-সংগ্রামে সিপিবির অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলা হলে পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হন। তবে দীর্ঘ যাত্রাপথে কয়েক দফা ভাঙনের শিকার হয়েছে দলটি। দলের অসংখ্য নেতাকর্মী বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন ও কমিউনিস্ট শাসনের পতনের পর সংস্কারের কথা বলে অনেক নেতা ভিন্ন দলে শামিল হয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত দলটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে ছিল। পরে নানা গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল জোটে যুক্ত হয়। বর্তমানে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে তারা।
মন্তব্য করুন