- রাজনীতি
- সংসারের হাল ধরা হলো না সেলিমের
সংসারের হাল ধরা হলো না সেলিমের

ভাতিজির সঙ্গে জাহান সরদার সেলিম। এ ছবিটি এখন শুধুই স্মৃতি ফাইল ফটো
সবজি বিক্রেতা বাবার রোজগার সামান্যই; টানাটানি লেগেই থাকে সংসারে। নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে তাই একটি দোকানে খণ্ডকালীন কাজ নিয়েছিলেন জাহান সরদার সেলিম (২০)। মা-বাবাকে বলেছিলেন, পড়ালেখা শেষে ভালো চাকরিতে ঢুকবেন। তখন আর এমন অভাব-অনটন থাকবে না। ছেলের কথা শুনে সুদিনের আশায় দিন গুনছিলেন মা-বাবা। তবে সব লন্ডভন্ড করে দেয় রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণ। সেদিন গুরুতর দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেলিম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ নিয়ে সিদ্দিকবাজারের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪। অন্যদিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আয়েশা আক্তার আশাও (২৬) গতকাল সকালে মারা গেছেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইউব হোসেন বলেন, শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় শুরু থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন সেলিম। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এরপর গতকাল বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান।
ছেলের মৃত্যুতে কাঁদতে কাঁদতে বারবার অচেতন হয়ে পড়ছিলেন মা সেলিনা বেগম। তিনি কিছুতেই এই নিষ্ঠুর সত্যকে মেনে নিতে পারছিলেন না। বারবার বলছিলেন, ‘আমার বাবার কিছু হইতে পারে না। বাবা আমার লগে বাড়ি যাইব।’
ছেলে আহত হওয়ার পর থেকে একবারের জন্যও হাসপাতাল ছেড়ে যাননি সেলিনা। ঠাঁই নিয়েছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের সিঁড়িতে। সারাক্ষণ ছেলের জন্য প্রার্থনা করেছেন। আশায় ছিলেন, তাঁর প্রার্থনা বিফলে যাবে না। খোঁজ নিতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও তিনি বলেছেন সন্তানের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে। তিনি সমকালকে জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জের একটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তেন সেলিম। ঘটনার দিন তিনি কলেজ থেকে যাত্রাবাড়ীর বাসায় ফিরছিলেন। বাস যানজটে আটকে থাকায় তিনি নেমে যান। এর পর হেঁটে যাওয়ার সময় ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেটের সামনে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। সেলিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভাবের সংসারেও কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলাম। সেলিম নিজেও যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশের দোকানে কাজ নিয়েছিল। পরিবারের সবাইকে খুব ভালোবাসত। এত অল্প বয়সে চলে যাবেন বলেই হয়তো সে সবাইকে এমন মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছিল।
স্বজনরা জানান, যাত্রাবাড়ীর রসুলপুরে শাহি মসজিদ এলাকায় বোন জান্নাতুন নেসা জাকিয়ার সঙ্গে থাকতেন সেলিম। তাঁর মা-বাবা যাত্রাবাড়ী এলাকাতেই আলাদা বাসায় ভাড়া থাকতেন।
এদিকে, সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণে আহত ছয়জন এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে লাইফ সাপোর্টে থাকা মো. হাসানের অবস্থা সংকটাপন্ন। আর হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) থাকা বাচ্চু মিয়াও শঙ্কামুক্ত নন। অন্য চারজনের শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তাঁদের রাখা হয়েছে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় আহত ১৪ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের একজন এখনও ঝুঁকিতে আছেন। বাকিদের মধ্যে কয়েকজনকে দ্রুতই ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
গত ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় এর আগে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক মানুষ।
দগ্ধ আয়েশার মৃত্যু: সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আয়েশা আক্তার আশা মারা গেছেন। গতকাল সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হলো।
চিকিৎসকরা জানান, শরীরের ৩৮ শতাংশ পুড়ে যাওয়া আয়েশা আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। সর্বশেষ তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বজনরা জানান, সায়েন্স ল্যাব এলাকার শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণের সময় তৃতীয় তলায় নিজের কর্মস্থল ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সে কাজ করছিলেন আয়েশা। তিন মাস আগেই তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। ঢাকার জিগাতলা এলাকায় তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
গত ৫ মার্চ সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এর আগে তিনজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় আহত হন অন্তত ১৫ জন। জমে থাকা গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের।
মন্তব্য করুন