সকালে ঘুম না ভাঙতেই আঙ্গুর মিয়ার বাড়িতে হানা দেয় কয়েকজন লোক। তারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আসার কথা বলে বাড়িওয়ালাকে ডাকতে থাকে। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই শুরু করে কিল-ঘুষি আর লাথি। টেনে হেঁচড়ে নিয়ে তোলে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায়। তাকে ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নিয়ে শুরু করে আরেক দফা নির্যাতন। তিনি রোজা রেখেছেন, এটা জানা সত্ত্বেও নির্মমভাবে দিনভর পেটান চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। পরিবারের লোকজন গিয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তাদের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার নরসিংদীর মনোহরদীর খিদিরপুর ইউনিয়নে এ নির্মমতার শিকার হন দরিদ্র কৃষক আঙ্গুর মিয়া। তবে দিনভর পেটানো ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কাউছার রশিদ বিপ্লব।

জানা যায়, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া আচরণ করছেন চেয়ারম্যান বিপ্লব। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। এর আগে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাত ইউপি সদস্য তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছিলেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফজলুল হকের মধ্যস্থতায় ওই অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন তারা।

স্থানীয় মোস্তফা কামাল বলেন, পাড়াতলা গ্রামের আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাকিব স্থানীয় একজনের ছাগল চুরি করেছেন বলে অভিযোগ পান চেয়ারম্যান বিপ্লব। এ জন্য তাকে ধরে আনতে বাড়িতে লোক পাঠানো হয়। কিন্তু তাকে না পাওয়ায় তার বাবাকেই ধরে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের লোকজন। সাকিব আমাদের গ্রামেরই ছেলে। সে মাঝমধ্যে ছোটখাট জিনিস চুরি করত। তাকে আমরা ছিচকে চোর হিসেবে চিনি। কিন্তু যে ঘটনায় তার বাবাকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তাতে সাকিব জড়িত বলে কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। সন্দেহের বসেই সাকিবকে চোর বলা হচ্ছে।

নির্যাতনের শিকার কৃষকের স্বজনরা বলেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই মঙ্গলবার সকালে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের বাড়িতে হানা দেয় চেয়ারম্যানের লোকজন। তারা আঙ্গুর মিয়াকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি রোজা রেখেছেন বলে তাকে মারধর না করতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তাতেও তারা কর্ণপাত করেনি। উল্টো আমরা চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে আঙ্গুর মিয়াকে আনতে গেলে আমাদের কাছে টাকা চাওয়া হয়। না দেওয়ায় নির্যাতন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও অসদাচরণ করা হয়। ঘটনাটি এলাকায় চাউরও হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রাত ১টার দিকে আঙ্গুর মিয়াকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যান বিপ্লব। এ সময় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আদালতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

নির্যাতনের শিকার কৃষকের স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, চুরির মিথ্যা অভিযোগে আমার ছেলের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তাকে না পেয়ে আঙ্গুর মিয়াকে দিনভর আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন চেয়ারম্যান বিপ্লব। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কিন্তু আমার নিরপরাধ স্বামীকে তুলে নিয়ে এভাবে নির্যাতন করা সন্ত্রাসীপণা ছাড়া কিছুই নয়। বিপ্লবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বিপ্লব বলেন, আঙ্গুর মিয়ার ছেলে সাকিব এ পর্যন্ত শতাধিক গরু ছাগল চুরি করেছে। মাহমুদুল হাসান নামে তার এক সহযোগীকেও আমরা আটক করেছি। আঙ্গুর মিয়া তার চোর ছেলেকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করায় তাকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মারধর ও টাকা চাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

মনোহরদী থানার ওসি ফরিদ উদ্দীন বলেন, ছেলেকে বাড়িতে না পেয়ে তার বাবাকে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, চেয়ারম্যান বিপ্লব এক কৃষককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।