- রাজনীতি
- সব সূচকে শীর্ষে যেতে চায় শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক
সাক্ষাৎকার
সব সূচকে শীর্ষে যেতে চায় শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক

মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ২০০১ সালের ১০ মে কার্যক্রম শুরু করে। ২২ বছর পেরিয়ে আজ ২৩ বছরে পদার্পণ করছে ব্যাংকটি। শাহ্জালাল ব্যাংক ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি
সমকাল : শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন।
মোসলেহ্ উদ্দীন : শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক তৃতীয় প্রজন্মের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। এখানে একক কোনো মালিকানা নেই। শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর মধ্যে সব ধরনের আর্থিক সূচকে আমরা এগিয়ে আছি। যাঁরা ইসলামী ব্যাংকিং করতে চান, তাঁদের অনেকে আমানত এ ব্যাংকে স্থানান্তর করছেন। এর প্রতিফলন হিসেবে এ সময়েও ব্যাংকটির ৩২শ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত এখন ৮০ শতাংশ। বর্তমানে আমানত রয়েছে ২৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সমকাল : অর্থনীতিতে নানা চাপ রয়েছে। আপনাদের ওপর এর কতটুকু প্রভাব পড়েছে?
মোসলেহ্ উদ্দীন : ব্যাংক খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিলে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কম। আইএমএফের বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। এ সময়েও আমাদের সর্বশেষ প্রান্তিকের মুনাফা, ইপিএস ও সমন্বিত আর্থিক লেনদেন বেড়েছে। আমরা টেকসই থাকার দিকে জোর দিচ্ছি। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রভিশন রাখছি। আস্থার জায়গায় যেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নাম সবার আগে থাকে, তা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। সব সূচক বিবেচনায় দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে থাকার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত বছর এ ব্যাংক চারটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। ভালো হওয়া যত পরিশ্রমের, তার চেয়ে ধরে রাখা আরও পরিশ্রমের। এখানে এমন একটি পদ্ধতি গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে যে, কেউ চাইলেই ঋণ অনুমোদন করাতে পারবে না। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে আসতে হবে। রিটেইল ঋণ বিশেষ করে ভোক্তা ঋণ ডিজিটাইজ করার চেষ্টা চলছে। সে লক্ষ্যে টেকসইভাবে এ ব্যাংক এগোতে চায়। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে ব্যাংকের আওতায় আনতে কাজ করছে শাহ্জালাল ব্যাংক। শাখার পাশাপাশি এজেন্ট আউটলেট, এটিএম বুথ, সিআরএমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সমকাল : ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আপনারা কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?
মোসলেহ্ উদ্দীন : বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের মোট ঋণের অন্তত ২৫ শতাংশ এসএমইতে বিতরণ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের মোট ঋণের ৩৮ শতাংশ রয়েছে এসএমইতে। ট্রেড ফাইন্যান্সে দেশের শীর্ষ তিনটি ব্যাংকের মধ্যে সম্ভবত এ ব্যাংক রয়েছে। গত বছর শাহ্জালাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি এবং ২৭ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য হয়েছে। বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এ ব্যাংকের করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং রিলেশনশিপ নেই। ব্যাংকটি ভালো মুনাফা করতে পারার অন্যতম কারণ ট্রেড ফাইন্যান্স এবং আমানত সংগ্রহ ব্যয় অনেক কম থাকা। এবার হজযাত্রীদের ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার এ ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানান্তর হয়েছে। হজের টাকা নিলেও ডলার সংকটের কারণে সৌদি আরবে অর্থ স্থানান্তর করতে পারছে না– এমন কয়েকটি ব্যাংকের টাকা শাহ্জালাল ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানান্তরের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সমকাল : শরিয়াহ মেনে কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো সমস্যা দেখেন কি?
মোসলেহ্ উদ্দীন : ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য একটি কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড দরকার। সব ব্যাংক সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হবে। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
সমকাল : ডলার সংকটের এ সময়ে ব্যাংকগুলোকে কোন দিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
মোসলেহ্ উদ্দীন : রপ্তানি এবং প্রবাসী আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। বেশি প্রবাসী থাকেন– এ রকম ৮ থেকে ১০টি দেশ আছে। এসব দেশে ব্যাংকগুলো নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস খুলতে পারে। অ্যাপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিকে জোর দিতে হবে। এ সময়ে এলসি খোলার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কোনোভাবে যাতে সংকটে না পড়ে, খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে নতুন কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ থাকতে হবে। কোনো ব্যাংক যেন বিদেশি দেনা পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা কোনো ব্যাংক যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো ব্যাংক খাতের ওপর তার প্রভাব পড়ে।
মন্তব্য করুন