অনেকে উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করায় তা জানেনও না। তাই ত্রিশোর্ধ্ব সবার উচিত বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করা। নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এই রোগের প্রভাব মানুষের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ একটু সচেতন থাকলে, শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে রোগটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপের সাধারণত কোনো লক্ষণ থাকে না, রোগীর কোনো শারীরিক কষ্ট থাকে না। তাই এই রোগে কেউ ভুগছেন কিনা, সেটা তিনি নিজে বুঝতে পারেন না।

যখন উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা যেমন– স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি নষ্ট হওয়া এর কোনোটি হয়, তখন রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ রোগ নির্ণয় করাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চ রক্তচাপ রোগীর ১ থেকে ৩ মাস পরপর কোনো সমস্যা না থাকলেও ফলোআপে আসতে হয়, চেক করতে হয় যে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আছে কি নেই। এ ছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও ওষুধ সারাজীবনের জন্য খেতে হয়।

লক্ষ : উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে–

lপ্রচণ্ড মাথাব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো, ঘাড় ব্যথা করা
lবমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
lঅল্পতেই রেগে যাওয়া
lরাতে ভালো ঘুম না হওয়া
l মাঝেমধ্যে কানে শব্দ হওয়া
lঅনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

lসাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে
lঅতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
lপরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
lনিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে
lপ্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে
lধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য বা পানীয় খেলে
lদীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
lশারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে

করণীয়: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বাদ দিতে হবে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সিগারেট ছাড়তে হবে। আর দুশ্চিন্তা যত কম করা যায়, ততই ভালো। ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখতে হবে। রক্তের কোলেস্টেরল যাতে না বাড়ে, সেজন্য ডিম, মাখন, পনির, খাসির মাংস, গরুর মাংস এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। শরীরে মেদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই ওজন কমানো দরকার। আসল যে কাজটি করতে হবে তা হলো, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, হাইপারটেনশনও আপনার সঙ্গে থাকবে। সুযোগ পেলেই তা আপনাকে আঘাত করবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে এবং চেকআপ করাতে হবে।

[মেডিসিন বিশেষজ্ঞ]