- রাজনীতি
- এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি
স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত
এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

শিগগির সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। রাজপথের কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে আগামী সপ্তাহকে উপযুক্ত সময় মনে করছে দলটির হাইকমান্ড। এর আগে রাজপথের সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে তারা। গত বৃহস্পতিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার রাতে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর এ জরুরি বৈঠক ডাকে বিরোধী দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে দলটি। এতে সরকার চাপে পড়েছে বলে মনে করছে তারা। এ পরিস্থিতিতেই সরকারবিরোধী এক দফা আন্দোলনের মোক্ষম সময় বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো আন্দোলনে রয়েছে। সময় হলে সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। দিনক্ষণ দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলন হয় না। নিজেদের ভোটাধিকার আদায়ে জনগণই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার এখন নানামুখী চাপে আছে। অভ্যন্তরীণভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ওপর দমন-পীড়নে জনগণ অতিষ্ঠ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তাঁদের চলমান আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার মোক্ষম সময় এটাই। এ অবস্থাকে বিবেচনা করে নেতারা এখনই এক দফার আন্দোলনে যেতে চাইছেন।
সূত্র আরও জানায়, আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে এক দফার আন্দোলন শুরু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এ আন্দোলন শুরু করতে হবে। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহের শেষ ভাগে এ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। এর আগে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনের প্রক্রিয়া ও ধরন চূড়ান্ত করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও জাতীয় পার্টির (জাফর) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এতে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং অপরদিকে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মোস্তফা জামাল হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
গত জুলাই থেকে দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদসহ বিভিন্ন জনইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে দলটি। ডিসেম্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন করে। ঈদুল ফিতরের পর আবারও ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে চার পর্বে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এককভাবে এ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি, যা আজ শনিবার শেষ হবে। দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচিকে চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে বৈঠক করেন নেতারা।
জানা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেন দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। আন্দোলনের শেষ সময়ে সাংগঠনিক শক্তিকে যাচাই করে নিতে সারাদেশে জেলা মহানগরে সফল সমাবেশ করছে দলটি। এতে দলটির শীর্ষ নেতারা আশান্বিত হয়ে উঠেছেন। এবার তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা জানান, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছরে তাদের বিভাগীয় সমাবেশ থেকে শুরু করে প্রত্যেক কর্মসূচিতে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা, হামলা-মামলা দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, তাঁদের ১৭ জন নেতাকে হত্যা করা হয়, অস্যংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতেও তাঁরা হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে, আহত করে। সারাদেশে অহরহ মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এর সঙ্গে পুরোনো মামলায়ও নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি থাকলেও এবার তা অনেক আগেই শুরু করা হয়েছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে জ্যামিতিক হারে আরও অনেক গুণ বেড়ে যাবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। নেতাকর্মীর ওপর এ দমন-পীড়নকে সামনে রেখে তাঁরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সমকালকে বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই।
মন্তব্য করুন