- রাজনীতি
- গুলি ছুড়েছে কারা জানে না পুলিশ হয়নি মামলাও
নরসিংদীতে ছাত্রদলের দু’পক্ষে সংঘর্ষ
গুলি ছুড়েছে কারা জানে না পুলিশ হয়নি মামলাও

প্রতীকী ছবি
নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় গোলাগুলির ঘটনায় আরেকজন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশরাফুল ইসলাম নামে ওই ছাত্রদল কর্মী মারা যান। তিনি নরসিংদী পৌর শহরের সাটিরপাড়া এলাকার নাজমুল হকের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই সংঘর্ষের ঘটনায় সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান মারা যান। সাদেক নরসিংদীর বাদুয়ারচর গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।
সাদেক ও আশরাফুল খুনের ঘটনায় নরসিংদীর স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। গুলিবর্ষণের ঘটনায় কারা জড়িত, সে বিষয়েও কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। ফলে খুনের সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে আটকও করতে পারেনি তারা।
চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি, মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে সিনিয়র সহসভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তবে কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পাওয়া মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তাঁর কর্মী-সমর্থকরা এর আগেও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ করেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলারও ঘটনা ঘটে। যার জেরে পরদিন মাইন উদ্দিনসহ তিনজনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এতেও ক্ষান্ত থাকেননি পদবঞ্চিতরা। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ চলছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ মিছিলে প্রতিপক্ষ গুলিবর্ষণ করে। এতে সাদেক মাথায় ও আশরাফুল পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় প্রতিপক্ষের গ্রুপটি পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের ব্যাপক মারধর করে।
এদিকে অন্তত ৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা কীভাবে শহরে মিছিল করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কোনো মিছিল যেখানে চিনিশপুর থেকে জেলখানা মোড় অতিক্রম করতে পারেনি, সেখানে পদবঞ্চিত ছাত্র নেতারা মোটরসাইকেল নিয়ে শহর দাবড়ে বেড়িয়েছেন। পুলিশ তাদের কোনো বাধাই দেয়নি।
জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা ও সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নির্দেশে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। আমরা সাদেক ও আশরাফুল হত্যার বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকন ফোনে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমি সারাদিন ঢাকায় মিটিংয়ে ছিলাম। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। এখন তারা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে।’
নিহত সাদেকের বড় ভাই আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা সবে দাফন-কাফন শেষ করেছি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে মামলার প্রস্তুতি নেব।
ঘটনার সার্বিক বিষয়ে জানতে নরসিংদী সদর থানার ওসি আবুল কাশেমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে পরিদর্শক (তদন্ত) হারুণ অর রশিদ বলেন, তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যে জায়গায় গুলির ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় ফুটেজ পাওয়া যায়নি। কেউ মামলাও করেনি। তার পরও পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তদন্ত বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে রাজি হননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে হলে সদর থানার ওসির কাছে জানতে হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফজল-ই-খুদা বলেন, এ ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানি না। যাঁরা বিষয়টি তদন্ত করছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। একই বিষয়ে নরসিংদী পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মন্তব্য করুন