- রাজনীতি
- প্রচারণা তুঙ্গে, নারী প্রার্থীরা বিপাকে
খুলনা সিটি নির্বাচন
প্রচারণা তুঙ্গে, নারী প্রার্থীরা বিপাকে

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রুমা খাতুনের গণসংযোগ। শনিবারের ছবি- সমকাল
খুলনা নগরীর হাদিস পার্কের সামনের দোকান ‘মিডিয়া মাইক অ্যান্ড সাউন্ড’। শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টায় দেখা যায়, সারি সারি ইজিবাইকে লাগানো হচ্ছে মাইক। দোকান কর্মীদের সঙ্গে ব্যস্ত প্রার্থীর লোকজন। দোকানটির ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানালেন, ভোট তাঁর ব্যবসা জমিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি মাইক ভাড়ায় যাচ্ছে। ভোট ঘিরে স্লোগান, গান ও প্রার্থীর বক্তব্য রেকর্ড করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড়ে ‘গ্লোরি আর্ট প্রেস’। এখানে সবাই ব্যস্ত। কারও কথা বলার ফুরসত নেই। ছাপাখানা থেকে সমানে বের হচ্ছে পোস্টার ও লিফলেট। শ্রমিক-কর্মচারীদের কেউ সেগুলো সঠিক মাপে কাটছেন, কেউ করছেন বান্ডিল। ব্যস্ততার ফাঁকে প্রেসটির মালিক জাহিদ হাবিব জানালেন, ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রার্থীদের চাহিদা মেটাতে সবাই বাড়তি কাজ করছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নগরীর অর্ধশত মাইকের দোকান এবং শতাধিক ছাপাখানায় বেড়েছে ব্যস্ততা। দুপুর ২টার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নগরীর প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে চলছে মাইকিং। পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে নির্বাচনী প্রতীকের পোস্টার।
খুলনা মুদ্রণশিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুন্সী মাহাবুব আলম সোহাগ জানালেন, নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় সব প্রেসই পোস্টার-লিফলেট ছাপছে। কিছু প্রেসে সারারাত কাজ হচ্ছে। শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিয়ে কাজ করাচ্ছেন মালিকরা।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেয়র পদে ৫ জন, কাউন্সিলর পদে ১৩৪ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন। প্রার্থীরা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ করছেন। তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। তবে প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী। তীব্র গরমের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের পুরুষ প্রার্থীদের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেশি এলাকা ঘুরতে হচ্ছে তাঁদের। গণসংযোগ করতে গিয়ে নারী প্রার্থীরা হাঁপিয়ে উঠছেন। সব ওয়ার্ডেই বর্তমান কাউন্সিলরকে ঘিরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।
সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হালিমা ইসলাম শুক্রবার নগরীর নতুন বাজার চর বস্তি এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘প্রচারে হিমশিম খাচ্ছি। ভোটাররা সবাই প্রার্থীকে এক নজর হলেও দেখতে চান। ভ্যাপসা গরম ও কড়া রোদে গণসংযোগে কষ্ট হচ্ছে।’ এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কনিকা সাহা নগরীর রেলওয়ে হাসপাতাল সড়কে গণসংযোগ করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘তিনটি ওয়ার্ডে ছুটতে গিয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যা– তিনটি ওয়ার্ড ভাগ করে প্রচার চালাচ্ছি।’
সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মামনুরা জাকির খুকুমনি শুক্রবার রাত ১১টায় নগরীর বসুপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘চারটি ওয়ার্ডে নির্বাচন করা নারী প্রার্থীর জন্য কষ্টকর। প্রচারে সময় পাওয়া যাচ্ছে কম। স্বল্পসময়ে ওয়ার্ডগুলোর সব ভোটারের কাছে যাওয়া কঠিন।’
সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রুমা খাতুন বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকা অনেক বড়। এত অল্প সময়ে সব এলাকা ও ভোটারের কাছে যাওয়া অসম্ভব। তার পরও সবার দ্বারে যাওয়ার চেষ্টা করছি। পোস্টারিং-মাইকিংয়ের পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকরাও বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।’
নগরীর রূপসা ঘাট এলাকায় সড়কদ্বীপে বিশাল কাঠের নৌকা বসিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খেলাফত হাওলাদার। তিনি জানান, বরিশাল থেকে ১৬ হাত লম্বা ও ৩ হাত চওড়া নৌকা কিনে এনেছেন তিনি। ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার হচ্ছে একটি গাড়ি। সেটির চারপাশে প্রার্থীর প্রতীক বিশালাকৃতির চারটি ‘হাতপাখা’ শোভা পাচ্ছে।
মন্তব্য করুন