বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়ে বিএনপি বহিষ্কার করলেও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন নির্বাচন থেকে সরবেন না। তা তিনি নিজেই সমকালকে জানিয়ে বলেছেন, ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই আসে না। কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া ১৮ নেতাকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি। পক্ষান্তের তাঁরা বলেছেন, নির্বাচনে থাকছেন।
বরিশালের সাবেক মেয়র (প্রয়াত) আহসান হাবীব কামালের ছেলে রূপন ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। তবে বিএনপিতে তাঁর পদ ছিল না। তাই তাঁকে কীভাবে বহিষ্কার করা হলো, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেছেন, রূপন ছাত্রদল নেতা ছিলেন। প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তাঁর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিল। আজীবন বহিষ্কারের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক ছিন্ন হলো। বহিষ্কারের অর্থ– তিনি আর প্রাথমিক সদস্যও নন।
কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে যে ১৮ নেতা বহিষ্কার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির ৩ জন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪ সদস্য। বাকিরা বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা। কয়েকজনের দলীয় পদ নেই; তাঁরা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গত ১ জুন বরিশালের ১৯ প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়েছিল বিএনপি। জবাবে নিজেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সদস্য পরিচয় দিয়ে রূপন বলেছিলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হতে বরিশাল বিএনপির কেউ তাঁকে বারণ করেননি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকলেও দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা মেনে নেবেন।
তবে গতকাল বহিষ্কারাদেশ পাওয়া কামরুল আহসান রূপন সমকালকে বলেছেন, বরিশালের বাইরে রয়েছেন। তিনি নির্বাচন থেকে সরছেন না। বরিশালে ফিরে ভোটের প্রচার শুরু করবেন।
রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ১৯ নেতার বহিষ্কারের চিঠিতে বলা হয়েছে, কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটে প্রার্থী হওয়া নেতারা খুন-গুমের শিকার পরিবারসহ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে তাঁদের নাম বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।
মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন– ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হাবিবুর রহমান টিপু, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন। মহানগর কমিটির সদস্যরা হলেন– ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদার, সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিনা বেগম, সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রাশিদা পারভীন।
বহিষ্কৃত অন্য নেতারা হলেন– ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক, মহানগর যুবদলের সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর লিংকু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউল হক মাসুম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ জাবির, জেলা তাঁতীদলের সাবেক সভাপতি কাজী মো. শাহিন, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক ইসলাম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সামাদ শিল্পী, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফিরোজ আহমেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ২৮ নম্বরে মহানগর বিএনপির সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. হুমায়ন কবীর। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ভোটের প্রচারে তাঁদের পক্ষে দলের কেউ নামতে পারবেন না।
এর আগে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ২৯ নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। খুলনায় বহিষ্কার করা হয়েছে ৯ জনকে।
মন্তব্য করুন