সম্প্রতি রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানের পাশ থেকে আব্দুর রশীদ খাঁ নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সমকালে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে সন্তানদের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। বৃদ্ধ আব্দুর রশীদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন। হাঁটাচলা করতে পারতেন না। মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর তাঁর স্বজনরা বলছেন, আব্দুর রশীদকে সম্ভবত তাঁর ছোট ছেলে আজিমপুর কবরস্থানের পাশে ফেলে গেছে। এর দুই দিন পরই তাঁর মৃত্যু হয়।

পরিণত বয়সে যে কারও মৃত্যু স্বাভাবিক। কিন্তু এইভাবে স্বজন ও পরিবার-পরিজনহীন অবস্থায় অবহেলাজনিত মৃত্যু কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব নির্ধারণে ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’ করেছিল। সেটির আলোকে ২০১৮ সালে ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা’ তৈরি করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তান পিতা-মাতাকে নিজের সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করবে। সন্তান একাধিক হলে মা-বাবা কার কাছে থাকবেন, সে বিষয়ে তাঁদের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সন্তান একজন হলে এবং কোনো উপযুক্ত কারণে একত্রে বসবাস করা সম্ভব না হলে আলোচনার মাধ্যমে বা ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ কমিটি’ নির্ধারিত অর্থ মা­-বাবাকে দিতে হবে। আবার, একাধিক সন্তান থাকলে এবং উপযুক্ত কারণে তারা একত্রে বসবাস না করলে পিতা-মাতার দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থ নির্ধারণ করে প্রত্যেক সন্তান সম্মিলিতভাবে তা পিতা-মাতাকে দেবে। কোনো মা-বাবার সন্তান জীবিত না থাকলে কিংবা ভরণ-পোষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে সংশ্লিষ্ট সহায়ক কমিটি তাদের পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠাতে পারবে।

আইন বা বিধি তৈরি করলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাই বাবা-মার ভরণ-পোষণ বিষয়ক আইনটি জনগণকে অবহিত করাও সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এতে বয়স্ক বাবা-মা নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবেন; প্রয়োজনে আইনটির আশ্রয় নিতে পারবেন। সন্তান-সন্ততিরাও বাবা-মার প্রতি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশপাশি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিণাম বিষয়েও সতর্ক থাকবেন। এ বিষয়গুলো যে কতটা প্রয়োজনীয়; আজিমপুর কবরস্থানের পাশে বৃদ্ধ রশীদ খাঁর মৃত্যুর ঘটনা তা আবারও মনে করিয়ে দিল।

এখনও বাংলাদেশে যে পারিবারিক মূল্যবোধ টিকে আছে, তাতে সন্তানরা যদি এক বেলা না খেয়েও থাকে, এর পরও মা-বাবাকে ত্যাগ করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে না। এই সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সেদিক থেকে আজিমপুরের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবেই দেখতে চাই। তবে এসব ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবশ্যই তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে হবে; তবেই আইনটি প্রণয়নের যথার্থতা শুধু নয়, এ ধরনের অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে। আমরা যেন ভুলে না যাই– আজকে যে সন্তান তার বাবা-মায়ের প্রতি এহেন অবহেলা করছে, একদিন তাকেও বৃদ্ধ বাবা-মা হতে হবে। তখন হয়তো তাকেও সন্তানের সামনে অনুরূপভাবে অসহায় হয়ে থাকতে হবে। 

এহ্‌সান মাহমুদ: সহ-সম্পাদক, সমকাল