জৈষ্ঠের রসালো ফল লিচু অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু গত এক মাসে গলায় লিচুর বিচি আটকে অন্তত ৯ শিশুর মৃত্যুর যে খবর বুধবারের সমকালে প্রকাশ পেয়েছে, তা মর্মান্তিক। এসব শিশুর বেশিরভাগের বয়স ৬ মাস থেকে ৬ বছরের মধ্যে। মঙ্গলবার রাজধানীতে গলায় লিচুর বিচি আটকে বাকপ্রতিবন্ধী এক শিশুর মৃত্যু হয়। দেশে জাতীয়ভাবে যেখানে শিশু মৃত্যুহার কমে এসেছে, সেখানে গলায় লিচু, জাম বা কাঁঠালের বিচি কিংবা চকলেট, মার্বেল, ছোটখাটো খেলনা, ধাতব মুদ্রা ইত্যাদি আটকে মৃত্যুর অঘটন দুঃখজনক। শুধু শিশু নয়; অনেক সময় প্রবীণরাও গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে মারা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি ২ ঘণ্টায় একজন মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে দম বন্ধ হয়ে মারা যায় বলে এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে।

আমাদের দেশে জ্যৈষ্ঠ মধুমাস হিসেবেও পরিচিত। এ সময় গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে গাছে গাছে পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু দেখা যায়। গ্রাম-শহর সব জায়গার হাট-বাজার মৌসুমি ফলে সয়লাব থাকে। সামর্থ্য অনুযায়ী সব পরিবার ফল কেনে। এসব ফলের মধ্যে রসালো লিচুও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের ফল খেতে দেখে তারা খাওয়ার চেষ্টা করে। এ জন্য অভিভাবকের উচিত যেসব ফল মুখে নিলে গলায় আটকে যেতে পারে, তা শিশুর নাগালের বাইরে রাখা।

অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে শিশুরা লিচু খেলে অনেক সময় গলায় বিচি আটকে তাদের অপমৃত্যু হয়। এর মধ্যে শিশু যদি বাকপ্রতিবন্ধী হয়, আরও বিপদ। কারণ তারা এটি আটকানোর কথা বলতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আঙুল দিয়ে বিচি বের করার ব্যর্থ চেষ্টা করে পরিস্থিতি আরও সংকটময় করেন। বাকপ্রতিবন্ধী বাদেও ৬ মাসের কোনো শিশু কথা বলতে পারার কথা নয়। এমনকি লিচু খাওয়ার বয়সও তাদের হয়নি। এসব শিশু মুখে নিলে গলায় আটকে যেতে পারে এমন দ্রব্য বা বস্তু তাদের নাগালের মধ্যে রাখার দায় অভিভাবকরা এড়াতে পারেন না। সংবাদমাধ্যমে এক মাসে ৯ শিশুর লিচুর বিচি আটকে মারা যাওয়ার খবর প্রকাশ হলেও প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই সব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে না।

শিশুমৃত্যুর আরেকটি কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। কোনো শিশু যাতে অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুকুরে যেতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকতে হয়। অনেক গ্রামে বাড়ির উঠানে বেড়া দেওয়া হয়। শিশুর চলাফেরা দৃষ্টিতে রাখার জন্য কোমরে ঝুনঝুনি বেঁধে দেওয়া হয়। এতে শিশু চলাফেরা করলে শব্দ হয়। এসব উদ্যোগের পরও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু পুরোপুরি থামানো যাচ্ছে না।

লিচুর বিচি, খাবার বা কোনো কিছু গলায় আটকে গেলে তাৎক্ষণিক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করা সম্ভব। ব্যক্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে হবে। এর পর দু’হাত দিয়ে পেটের উপরের দিকে জোরে চাপ দেওয়ার মাধ্যমে আটকে যাওয়া বিচি বা খাবার বের হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া খুব ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে হাতের ওপর উপুড় করে পিঠে চাপড় দিলেও সুফল পাওয়া যায়। এর পরও না বেরুলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।

মিজান শাজাহান: সহসম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com