ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

সাঈদীকে নিয়ে প্রবাসী ছেলের লেখালেখি, খুলনায় মা গ্রেপ্তার

সাঈদীকে নিয়ে প্রবাসী ছেলের লেখালেখি, খুলনায় মা গ্রেপ্তার

ফাইল ছবি

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:৪৯ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:৪৯

জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গবেষকের লেখালেখির জেরে খুলনায় তাঁর মাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশের দাবি, ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক করার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত তানজিলুর রহমানের অভিযোগ, সাঈদীকে নিয়ে তিনি লেখালেখি করেছেন। এ কারণে তাঁর মা আনিছা সিদ্দিকাকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

তবে খালিশপুর থানা পুলিশের দাবি, ধর্মীয় উগ্রপন্থি বইপুস্তক আনিছাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অপর দুইজন হলেন আনিছার ভাইয়ের মেসের ভাড়াটিয়া রকিবুল ইসলাম (২৪) ও তামিম ইকবাল (১৯)।

তানজিলুরের অভিযোগ, তিনি সাঈদীর জানাজায় সুখরঞ্জন বালীর উপস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে লেখেন। এরপর গত রোববার দুপুরে খুলনার বয়রা এলাকার হাজী ফয়েজ উদ্দিন সড়কে তাঁর নানাবাড়িতে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা পুলিশ নিয়ে হাজির হয়ে তাণ্ডব চালায় ও লুটপাট করে। দুটি ল্যাপটপ ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। তাঁর ছোট মামা সিদ্দিক শহীদকে বেদম মারধর করে। তাঁর মা আনিছা সিদ্দিকা প্রতিবাদ জানানোয় তাঁকে খালিশপুর থানায় ধরে নিয়ে যায়। দু’জন ভাড়াটিয়া এগিয়ে আসায় তাদেরও সঙ্গে নিয়ে গেছে। তাঁর মাকে সারারাত থানাহাজতে আটকে রেখে গোপন বৈঠকের অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

তবে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীরুল গিয়াস বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বড় বয়রা এলাকার হাজী ফয়েজ উদ্দিন রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার জন্য সমবেত হওয়া ৩ জনকে আটক করা হয়। ওই বাড়ি থেকে ধর্মীয় উগ্রপন্থি বিপুলসংখ্যক বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেজিস্টার ও অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার কাজে ব্যবহৃত তিনটি ল্যাপটপ, পাসপোর্ট এবং চারটি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালপত্র জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।’

ওসি বলেন, ‘লেখালেখি করায় তানজিলুরের মাকে গ্রেপ্তার করার অভিযোগ সঠিক নয়। অভিযানের সময় কেউ মারধর, লুটপাট করেনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত। অভিযানের সময় রাজনৈতিক দলের কোনো নেতাকর্মী ছিল না, তবে প্রতিবেশীরা এসেছিল।’

অভিযানের সময় সেখানে উপস্থিত মহানগর যুবলীগের সদস্য ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ওই বাড়ির মালিক সিদ্দিক হেলাল জামায়াত নেতা। তাঁর ছেলে ও বোনসহ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওই বাড়ির নিচতলার মেসে শিবিরের কর্মীরা থাকে এবং দোতলায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর প্রশিক্ষণ হয়। ভাঙচুর, লুট ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনি এই ওয়ার্ডের বিট পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক। পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।    

খুলনা মহানগর জামায়াত গতকাল বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে ‘অন্যায়ভাবে’ গ্রেপ্তার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখার এডিসি এ জেড এম তৈমুর রহমান জানান, ওই বাড়ি থেকে জামায়াতে ইসলামীর সব পর্যায়ের জনশক্তির প্রতি আমিরে জামায়াতের আহ্বান নামের বই, জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগরের ৭০ পিস প্যাড, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ বই জব্দ করা হয়েছে।

আনিছার স্বামী আলমগীর শিকদার জানান, ভাইয়ের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে শুনে তাঁর স্ত্রী ওই বাড়িতে যান। সেখানে মেসের দুই ছাত্রকে আগে থেকেই আটক করে রাখা হয়েছে। ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও পুলিশের সঙ্গে তর্ক করায় আনিছাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারেন তাঁকে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×