ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

ওয়েবিনারে আলোচকরা

নির্বাচন নিয়ে ভারতের নীরবতাও একটি বার্তা

নির্বাচন নিয়ে  ভারতের নীরবতাও একটি বার্তা

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ০৪:১৫

অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের তৎপরতায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়। তবে বন্ধু দেশ হলেও এই বার্তা অগ্রাহ্য করে তাদের শত্রু বানানো হয়। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের নীরবতাও একটি বার্তা।

গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি শক্তির প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত। সমাপনী বক্তৃতা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো তখনই হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে, যখন বিদেশিদের বার্তা নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। জাতীয় স্বার্থ ও উন্নতির জন্য বৈদেশিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি হয় মূল্যবোধে। বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা এবং এক ব্যক্তিকে শক্তিশালী করায় প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মূল্যবোধ থাকে না। ভেতর থেকে সুযোগ তৈরি করে না দিলে বিদেশিরা কথা বলে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাইরের প্রভাবের সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভারত। এবার নির্বাচন নিয়ে দেশটির নীরবতাও একটি বার্তা।

 বাংলাদেশে গণতন্ত্র যত সংকুচিত হবে, চীনের প্রভাব ততই বাড়বে। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তার কথা বলে বাংলাদেশ বিষয়ে নয়াদিল্লি যে অবস্থান নিয়েছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের আস্থা তৈরি করতে পারছে না– এটি ভারতের বোঝা উচিত। রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ এবং সংকট নিরসনে তাদের নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেছেন, ১৯৯৬, ২০০৬ ও ২০১৩ সালের অভিজ্ঞতা বলে, বিদেশিদের তৎপরতায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিষয়টি তুলে ধরেন দেশটির প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনীর বরাতে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে বিদেশিদের কথা শুনতে হচ্ছে। পারস্পরিক সহাবস্থান থাকলে তা হতো না। বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র চর্চা ও ন্যায়বিচারের দায় আছে। এগুলোতে ঘাটতি থাকায় বিদেশিরা পরামর্শ দিচ্ছে। একে হস্তক্ষেপ না বলে পারস্পরিক প্রত্যাশা বলা যায়। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে উৎসাহিত করতে এই চাপ। এর মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামো দাঁড়াবে, যার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন করা যাবে। গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র বারবার নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। ভিসা নীতি নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান অস্পষ্ট। তারা একবার বলছে, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির সমার্থক। আবার একে হস্তক্ষেপও বলছে।
ভারত ভিসা নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করে না– মন্তব্য করে দেশটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে ভারতের কথা না বলাও একটা অবস্থান। দিল্লিতে যে সরকারই থাকুক, তারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে একইভাবে কাজ করে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে ভারত অনিরাপদ বোধ করে। বাংলাদেশ সহায়তা করেছে বলেই উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। দুই দেশের সরকারের সম্পর্ক থাকলেও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক হারিয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ভোটাররা ভোট দিতে না পারায় প্রথমত রাগ আওয়ামী লীগের ওপর, এরপর ভারতের ওপর। অনেকেই মনে করে, আওয়ামী লীগ যাই করুক, ভারত সামাল দেবে; যা ভারতের জন্য ভালো নয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্ন মন্তব্য করে শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, ভারতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ থাকে, সেখানে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। আবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগের কাউকে আমন্ত্রণ করা যায় না। তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস নেই।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিদেশি চাপকে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেন না জানিয়ে সমাপনী বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটাধিকার মানবাধিকারের অংশ। মানবাধিকার অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এ বিষয়ে কথা বলার অধিকার সবার আছে। কিন্তু বন্ধু দেশের বার্তা না শুনে তাদের শত্রু বানানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন মানা হয়নি। নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে অসাংবিধানিকভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছে।


আরও পড়ুন