সাদেক খানের নেশাই ছিল দখলবাজি!
সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাদেক খান। সমকাল
অমরেশ রায়
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৩:৩৪ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০:৩৭
ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাদেক খান। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও সংলগ্ন এলাকায় দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারসহ বহু অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এলাকায় তাঁর পরিচিতি দখলবাজ হিসেবে। সরকারি জমি, হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি, অন্যের জায়গা দখল করেছেন দেদার। বাদ যায়নি কবরস্থান, শ্মশানও। দখল করা জায়গায় নিজের নামে করেছেন আবাসন প্রকল্প, পেট্রোল পাম্প, মার্কেট কিংবা বস্তি।
এমপি হওয়ার আগে চার মেয়াদে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন সাদেক খান। তখনই তাঁর দখলবাজির হাতেখড়ি। এলাকার লোকজনের মতে, সাদেক খান বংশগতভাবেই ‘দখলবাজ’। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়ে তা পূর্ণতা পায়। দখল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী আর কিশোর গ্যাং। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে কঠোরভাবে শায়েস্তা করা হতো।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ আগস্ট রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদেক খান। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা মামলা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত ট্রাকচালক মো. সুজনসহ (২৪) তিনটি হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন তিনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর অবৈধ সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অনুসন্ধানেও তাঁর দেশ-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং নিজ নামে পেট্রোল পাম্প, বস্তি, মার্কেট, কাঁচামালের আড়তসহ অঢেল সম্পদের খোঁজ মিলেছে।
পারিবারিকভাবেই দখলবাজ
মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে জানা গেল, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে হিন্দু অধ্যুষিত মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজারসহ পশ্চিম ধানমন্ডি এবং আশপাশের এলাকা ছিল খালবিল, নদী ও কৃষিজমিতে পূর্ণ। সেই সময় সাদেক খানের বাবা প্রয়াত মেকাপ খানসহ পূর্বপুরুষরা এখানে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসতেন। বর্তমান মিরপুরের টেকনিক্যাল থেকে নীলক্ষেত এলাকা পর্যন্ত নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইউনূস খানের (১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন) জমি ও বাড়িতে কাজ করার সুবাদে তিনিই এলাকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য জায়গা দেন সাদেক খানের পূর্বপুরুষদের।
কয়েকজন প্রবীণ জানান, এই পরিবারের দখলবাজির কারণে বহু হিন্দু পরিবার জমিজমা হারিয়ে কিংবা নামমাত্র টাকায় সম্পত্তি বিক্রি করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে সাদেক খান, তাঁর ভাইরাসহ পরিবারের অন্যদের মাধ্যমে দখলবাজি চলে। পর্যায়ক্রমে সাদেক খানের ছেলে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফাহিম খানসহ পরবর্তী প্রজন্মও তাদের সহযোগী হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বয়োবৃদ্ধ একজন সমকালকে বলেন, ৬০ বছর ধরে এলাকায় বাস করছেন তিনি। একসময় হিন্দুদের প্রচুর জমিজমা ও সম্পদ ছিল। কিন্তু সাদেক খান ও তাঁর পরিবারের দখলবাজির কারণে অনেককেই সব হারিয়ে এলাকা ছাড়তে হয়েছে।
যেভাবে উত্থান সাদেক খানের
১৯৭৩ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন সাদেক খান। এর পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ১৯৯২ সালে দলটির মোহাম্মদপুর থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ও ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মোহাম্মদপুর থানার সভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে চার দফায় অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমান উত্তর সিটির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর ছাড়াও দু’দফায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কারাবন্দি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে সাড়ে ৪ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে দলীয় প্রধানসহ নীতিনির্ধারক নেতাদের নজরে আসেন সাদেক খান। ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েও দখলবাজি, চাঁদাবাজি, পদ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়ান। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-১৩ আসনের এমপি হলে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
দলের কয়েকজন নেতা বলেন, ঢাকা-১৩ আসনের আগের দু’বারের এমপি ও আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানককে পেছনে ফেলে সাদেক খানের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়টি তাদের জন্য ছিল বিস্ময়কর। তেমনি পরের পাঁচ বছর এমপি থাকা অবস্থায় গোটা নির্বাচনী এলাকায় তাঁর দখল সাম্রাজ্যের বিস্তার এবং বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়টিতেও চোখ কপালে ওঠে সব মহলে।
যত দখল-চাঁদাবাজি
আশি ও নব্বই দশকেও বর্তমান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ও সংলগ্ন এলাকায় অনেক খালবিলের অস্তিত্ব ছিল। পরে সেসব খাল ভরাট করে ঢাকা উদ্যান, আবাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা গড়ে ওঠে। একইভাবে মোহাম্মদপুরের বছিলা, ৪০ ফিট এবং তিন রাস্তার মোড় থেকে আঁটিবাজার পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ দিয়েও বহমান সরকারি খাল ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে গড়ে তোলা হয় আবাসন প্রকল্প। এসবের নেপথ্যে কাজ করেছেন সাদেক খান। কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় খাল ভরাট করে বসতি গড়ায় সহযোগিতা করার বিনিময়ে প্রতিটি আবাসন কোম্পানির কাছ থেকে মাসোহারা হিসেবে ‘প্রটেকশন মানি’ নিয়েছেন তিনি। একইভাবে প্রভাব খাটিয়ে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বছিলা, কাটাসুর ও জাফরাবাদ এলাকার অনেকের জমি ও বাড়িঘর দখল করেছেন সাবেক এই এমপি।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে আরও জানা গেল, মোহাম্মদপুরের বর্তমান আজিজ খান রোডটিও নব্বইয়ের দশকে খাল ও ডোবা ছিল। সেখানকার প্রায় ১০ কাঠার ওপর জমি হিন্দুদের শ্মশানের জন্য দান করেছিলেন স্থানীয় দানবীর ইসমাইল খাঁ। তখন স্থানীয়রা জায়গাটিকে ‘চিতার পাড়’ বলেই জানতেন। শ্মশানের পাশেই ছিল একটি কবরস্থান। পর্যায়ক্রমে কবরস্থান ও শ্মশানটির পুরো জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন সাদেক খান। পরে বিক্ষোভের মুখে তিনি দুই কাঠা জমি ছেড়েও দেন শ্মশানের জন্য। শ্মশান ও কবরস্থানের বাকি জায়গায় বর্তমানে সাদেক খানের ভাই নাদের খানের বস্তি ও দোকানপাট রয়েছে।
শ্মশানটির একজন তত্ত্বাবধায়ক বলেন, দখলবাজির কারণে একসময়কার বিশাল আয়তনের শ্মশানটির জায়গা এখন দুই কাঠায় নেমেছে। এই দুই কাঠা জায়গার চারদিকে দেয়াল দিয়ে এটিকে কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছেন তারা।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের বাঁ দিকে বেড়িবাঁধ প্রধান সড়ক দিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে সাদেক খানের দখলবাজির বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। রায়েরবাজার বধ্যভূমি এলাকায় দুই বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘সাদেক খান কৃষি মার্কেট’। পরে আশপাশের পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সিটি করপোরেশনের প্রায় পাঁচ বিঘাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে গড়ে তোলেন বিভিন্ন স্থাপনা।
রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসংলগ্ন সড়কটির দু’পাশের দখলকৃত জমিতে সাদেক খানের নামে বিশাল বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে সাদেক খান কৃষি মার্কেট ছাড়াও রয়েছে সাদেক খান হাঁস-মুরগির আড়ত, সাদেক খান শুঁটকি মাছের আড়ত, সাদেক খান পেঁয়াজ-রসুন-আদার পাইকারি মার্কেট, সাদেক খান ফল মার্কেট, আলহাজ সাদেক খান মার্কেট, সাদেক খান ইট মার্কেট, সাদেক খান বালু মার্কেট, সাদেক খান বস্তিসহ অনেক স্থাপনা। আবার হাঁস-মুরগির আড়তের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার শেষে গিয়ে মিশেছে রায়েরবাজার ‘সাদেক খান ঘাট’ নামে একটি ঘাটও।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে একটু এগিয়ে রায়েরবাজার প্রধান সড়কের (সদরঘাট-গাবতলী সড়কসংলগ্ন) পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালের জমি দখল ও ভরাট করে সাদেক খান গড়ে তুলেছেন ‘সাদেক ফিলিং স্টেশন’ নামের পেট্রোল পাম্প। এর ঠিক পেছনে রয়েছে তাঁর মালিকানাধীন ‘সাদেক নগর মডেল টাউন’। পেট্রোল পাম্পের ভেতর দিয়ে মডেল টাউনের বহুতল ভবনগুলোতে যাওয়া-আসার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ রাস্তা। আবাসন প্রকল্পের ভবনগুলোতে যাওয়ার প্রবেশপথে এখনও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাইনবোর্ড টানানো দেখা গেছে।
সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার পতনের আগে এই এলাকার এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দুই দফায় অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু দু’বারই দেখা গেছে, উচ্ছেদের পরপর প্রভাব খাটিয়ে আবারও অবৈধ স্থাপনা বসানো হয়।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক রাস্তার নামকরণও করেছেন সাদেক খান। রায়েরবাজার মসজিদের পেছন থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তাটিকে ‘সাদেক খান রোড’ নামকরণ করেছেন তিনি। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন রাস্তা পরিবারের সদস্যদের নামে মিয়া চান খান সড়ক, আজিজ খান সড়ক, মুকিম খান রোড এবং হাসেম খান রোড নামকরণ করেছেন।
সাদেক খান তাঁর অবৈধভাবে স্থাপিত মার্কেট ও আবাসন থেকে প্রতি মাসে ২ কোটি টাকার ওপর ভাড়া পেতেন। বাজারের মার্কেট ও আড়তের প্রায় ৭০০টি দোকান ভাড়া বাবদ বছরে তুলতেন প্রায় ১১ কোটি টাকা। কেরানীগঞ্জ, সাভার ও বছিলা থেকে এই বাজারে আসা মাছ, ফল ও কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি বাবদ আসত কয়েক কোটি টাকা। সাদেক খান বস্তির ঘর ভাড়া বাবদ আসত কোটি টাকার ওপরে। মোহাম্মদপুর মোড়ের ছোট-বড় প্রায় ২০টি নার্সারি এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার ফল, ফার্নিচার, বাঁশ ও ইট কেনাবেচার দোকান আর বেশ কয়েকটি ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন তিনি। এভাবে অবৈধ স্থাপনার ভাড়া ও চাঁদাবাজি আদায় থেকেই বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আয় ছিল সাদেক খানের।
দুদকের অনুসন্ধান
দুদকের অনুসন্ধানে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাদেক খানের নামে-বেনামে একাধিক বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র বলছে, সাদেক খান মোহাম্মদপুর সংলগ্ন পশ্চিম ধানমন্ডির রায়েরবাজার গদিঘর এলাকার ৫৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের নিজস্ব বহুতল ভবনে বসবাস করলেও আশপাশের অনেক বাড়ি দখল করে ঘনিষ্ঠদের নামে লিখে রেখেছেন। একইভাবে সাদেক খান রোডেও তাঁর বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবন অন্য মানুষের নামে থাকলেও মূল মালিক তিনিই। এ ছাড়া রায়েরবাজারের বৈশাখী মাঠের পাশে এবং সুলতানগঞ্জ লেনেও তাঁর নিজ নামে দুটি বহুতল ভবন রয়েছে।
বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড় কেরানীগঞ্জেও সাদেক খানের ইটভাটা, বালুমহাল, আবাসন ব্যবসাসহ অনেক সম্পদ রয়েছে। এমপি থাকা অবস্থায় ২০১৯ সাল থেকেই মালয়েশিয়ায় বাড়ি-গাড়ি কিনেছেন। এ ছাড়া স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের নামেও দেশ-বিদেশে অঢেল সম্পদ রয়েছে তাঁর।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বলেন, সাদেক খানের অবৈধ সম্পদ অর্জন বিষয়ে আগে থেকেই দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট অনুসন্ধান চালিয়ে আসছিল। এই অনুসন্ধানের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
কারা সহচর
সাদেক খানের দখল সাম্রাজ্যের ভাড়া ও চাঁদাবাজির টাকা ওঠানোর কাজ করতেন তাঁর ছেলে ফাহিম খান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সাদেক খান ছেলেকে বানান দলের মোহাম্মদপুর থানা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। বাবা ও নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফাহিম খান নিজেও দখলবাজি ও চাঁদাবাজিতে কম যাননি।
এ ছাড়া সাদেক খান ও তাঁর পরিবারের টাকাপয়সা আদায়ের জন্য ৮-১০ জন ম্যানেজার নিয়োগ করা ছিল। এদের মধ্যে প্রধান ম্যানেজার ছিলেন জুলহাস বেপারি। তাঁর সঙ্গে ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন জাকিরসহ অন্যরা। তারা একেকজন একেক সাইড থেকে দৈনিক টাকা কালেকশন করে বুঝিয়ে দিতেন সাদেক খানের একসময়ের ড্রাইভার সুমনের হাতে। এই সুমনই প্রতিরাতে চাঁদার টাকা পৌঁছে দিতেন এমপিপুত্র ফাহিমের কাছে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন ফাহিমসহ সাদেক খানের প্রায় সব সহচরই।
মোহাম্মদপুর এলাকার অধিকাংশ কিশোর গ্যাংয়ের সৃষ্টি হয়েছিল ‘সাদেক খান বস্তি’ থেকে। এদের দিয়ে এলাকায় দখলদারি, চাঁদাবাজি ও মাদকের কারবার করাতেন সাদেক। কেউ তাঁর মতের বাইরে গেলে ক্যাডার বাহিনীর পাশাপাশি কিশোর গ্যাং দিয়ে শায়েস্তা করতেন। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতি-চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেলে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়েছে সেখানে। এই অভিযানে আটক হয়েছে সাদেক খানের কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্যই।
এখনও মুখ খুলতে ভয়
সরকার পতনের পর সাদেক খান গ্রেপ্তার ও তাঁর ছেলে ফাহিম খান আত্মগোপনে চলে গেলেও তাঁর দখলকৃত সাম্রাজ্য বহাল রয়েছে। এখনও পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা তাঁর বিভিন্ন স্থাপনা থেকে ভাড়া তুলে আসছেন। সাদেক খানের ভাই নাদের খানের ছেলে ও মোহাম্মদপুর থানার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুম খান রাজেশ এই দখল সাম্রাজ্যের দেখভাল করছেন।
এ কারণে মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দারা এখনও সাদেক খান ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান।
গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় সাদেক খানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আত্মগোপনে থাকায় তাঁর ছেলে ফাহিম খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাদেক খানের ভাতিজা মাসুম খান রাজেশের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।