ডা. শফিকুরের সংবাদ সম্মেলন
নির্বাচনের জন্য তিন শর্ত জামায়াতের

লোগো
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৩০
সংস্কার, জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক সহাবস্থান– সংসদ নির্বাচনের জন্য এই তিন শর্ত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী এসব ‘ম্যান্ডেটরি’ দাবি পূরণ হলে আগামী রমজানের আগে নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইউরোপ সফর শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন তিনি।
আগের দিন তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে ঝড়-বর্ষা আসবে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তখন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাতের পর জামায়াত আমিরের এ বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছিল, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে কাছাকাছি এসেছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিরোধে জড়ানো দল দুটি।
আগের দিনের অবস্থান বদলে গতকাল শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘রমজানের আগেই নির্বাচন হতে হবে– বলিনি। বলেছিলাম, নির্বাচন হতে পারে রোজা শুরু হওয়ার আগে। আবারও বলছি, নির্বাচন তখনই হতে পারে, যখন এই শর্তগুলো পূরণ হবে। শর্ত পূরণ ছাড়া ওই মার্চ-ফেব্রুয়ারি কোনো কিছুই ঠিক থাকবে কিনা– আল্লাহই ভালো জানেন।’ শর্ত পূরণ হলে ফেব্রুয়ারির আগে বা পরে নির্বাচনে জামায়াত আপত্তি করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির প্রধান।
ইউরোপ সফরের বিস্তারিত জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা জানতে চেয়েছেন, নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে? তাদের বলেছি, তিনটি ম্যান্ডেটরি দাবি রয়েছে। প্রথম হলো– দৃশ্যমান, গ্রহণযোগ্য, মৌলিক সংস্কার। সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গা জাতির সামনে পেশ করে যাচ্ছি। এ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব কমিশনগুলোর কাছে জমা দিয়েছি। সংস্কার না করে যে নির্বাচন হবে, তা গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনা করতে পারবে না। বরং অতীতে যেসব নির্বাচন দেশ ও জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, হয়তো সেরকম আরেকটা খারাপ নির্বাচন হবে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘হাজার প্রাণের বিনিময়ে দেশে পরিবর্তন এসেছে। তাই সংস্কার করতেই হবে। সংস্কারের প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দল। দলগুলো যত তাড়াতাড়ি ও আন্তরিকতার সঙ্গে সংস্কারে সহযোগিতা করবে, তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। সংস্কার যদি না হয়, দায় নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারে সহযোগিতা করতে হবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘দ্বিতীয় দাবি হলো, জুলাই হত্যার দায়ীদের বিচার দৃশ্যমান করা, যাতে খুনিদের বিচারের বিষয়ে জাতির আস্থা ফিরে আসে।’ নির্বাচনের জন্য বিচারের শর্ত আদালতের ওপর চাপ কিনা– প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, ‘কিছু বিচার হতে হবে দৃশ্যমান, যাতে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয়। আমরা বলে দিতে পারি না যে, এত তারিখের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তা হবে বিচারের ওপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। মজলুম জনগণ হিসেবে দাবি করতে পারি।’
তৃতীয় দাবির বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরকে সম্মান করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। জিতে গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু আর হেরে গেলে দুষ্ট– এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন এমন হতে হবে, যে নিয়ে কেউ সহজে প্রশ্ন তুলতে না পারে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘বিদেশিরা নির্বাচনের সময় জানতে চেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে বারবার বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি, সংস্কার, বিচারের জন্য এ সময়টা গ্রহণযোগ্য। এ সময়ের সীমা যাতে অতিক্রম না হয়।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে কথা বলে সমাজে কিছু অস্থিরতা তৈরি করে ফেলেন। ধারণা করি, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর কথার মর্যাদা রক্ষা করবেন।’ বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়– এ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, ‘এভাবে সময় বেঁধে দিয়ে বলতে চাচ্ছি না। আমরা দাবি করতে পারি। কিন্তু সময় বেঁধে দিতে পারি না।’
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে রাজনীতি নিয়ে আলোপ হয়েছে কিনা– প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কখন কীভাবে নির্বাচন হবে, বিচার কীভাবে হবে– এসব নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে।’
বিএনপি-জামায়াতের বিরোধ সম্পর্কে শফিকুর রহমান বলেন, ‘রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে রাজনীতিবিদরা অন্ধ হয়ে যাবেন। কিন্তু তা যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়।’
ইউরোপীয়রা আওয়ামী লীগসহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন কিনা– প্রশ্নে শফিকুর বলেন, ‘অবশ্যই এ আলোচনা হয়েছে। তাদের বলেছি, একটি গণহত্যা হয়ে গেছে, শহীদের স্বজনরা এখনও কান্নাকাটি করছেন। আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছিল। তারা তো নির্বাচনের জান কবজ করেছে। সেই রকম একটা দলকে দেশের মানুষ গ্রহণ করবে কিনা, তা দেখতে হবে। এগুলো বলার পর ইউরোপীয়রা আর কিছু বলেনি। জামায়াত শিগগির নিবন্ধন ফিরে পাবে বলেও আশাবাদ জানিয়েছেন দলটির আমির।
এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে দলটি তৈরি হোক। দেখতে চাই, তারা কীভাবে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, আনম শামসুল ইসলামসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
- বিষয় :
- জামায়াত