জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব ইনকিলাব মঞ্চের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫ | ১৮:৩৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি বলেছেন, আমরা আবারও জাতীয় সরকারের দাবি করছি; যেখানে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে জাতীয় সরকার করতে হবে। আগামী একটা বছর, এখনো জাতীয় সরকার করার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়নি। এটাতে যদি বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কেউ অসহযোগিতা করে, তাহলে তাদেরকে জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
আজ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘দেশের চলমান সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য বিনির্মাণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে হাদি ড. ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদ, সেনাবাহিনী, বিএনপি, জুলাই সনদ নিয়ে কথা বলেন।
হাদি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জুলাই ঘোষণাপত্র জারি হবে; ততক্ষণ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কার্যকারিতা নাই। কালকে যদি নির্বাচিত কোনো সরকার এসে জুলাই ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে যুক্ত করা না হলে জুলাই শহীদ পরিবার কিংবা যারা এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে তাদেরকে ভারত আর আওয়ামী লীগ কচুকাটা করবে। জুলাই ঘোষণাপত্র হলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে উল্লেখ থাকবে আর কোনোদিন আওয়ামী লীগকে আর ফিরতে দেওয়া হবে না, দিল্লির প্রেসক্রিপশনে রাজনীতি চলবে না। জুলাই সনদের স্বীকৃতি না দিলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করবে; এমন বিচারক বাংলাদেশে নাই। আগামী ২৫ জুনের মধ্যে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শরীফ ওসমান হাদি আরও বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী এ মুহূর্তে মুখোমুখি অবস্থান করছে। সেনাপ্রধান দরবারে যে বক্তব্য দিয়েছেন; সেটি স্পষ্ট একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আপনি এই রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন না। সেনাবাহিনীর সদস্যদের জুলাইয়ে অংশীদারিত্ব রয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর অলমোস্ট সব জেনারেল- আপনারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, এইটা বলতে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। আওয়ামী লীগের গুম, খুন, হত্যার প্রতিবাদ আপনারা জেনেও করেননি। কোনো না কোনোভাবে আপনারাও সুবিধাভোগী।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন একটা ইচ্ছা জেগেছে। এটা খুবই স্পষ্টভাবে তারা চাচ্ছে, যেই দলই সামনে নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরুক, সেটা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, তাদেরকে সেনাবাহিনীর একটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেককে মেনেই তারপর ক্ষমতায় থাকতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের এই মুখপাত্র বলেন, আপাতত দেশের কিছু মানুষের কাছে একটু আনন্দদায়ক মনে হলেও- বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উন্নয়নের পথে, গণতান্ত্রিক যাত্রার পথে এটা বড় হুমকি। এটা বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবে মেনে নিতে পারে না এবং এটা নিতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের মধ্যে কেউ কেউ ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান। এইটাই বর্তমান সরকারের বড় দায়। উপদেষ্টাদের অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা ডক্টর ইউনূসকে ব্যবহার করে এগুলোর পরিত্রাণ চাচ্ছেন।
বিএনপিকে নিয়ে শরীফ ওসমান বিন হাদি বলেন, নির্বাচন করা সমস্যা না। বিএনপির প্রতি আমাদের প্রথম আক্ষেপ হলো, আপনারা কেন জুলাইয়ের রাজনীতিটা করলেন না। আপনারা (বিএনপি) যতবার নির্বাচনের কথা বলেছেন; আমাদের প্রত্যাশা-আপনারা প্রতিবার আগে বলবেন, বিচার করতে হবে, সংস্কার করতে হবে, নির্বাচন দিতে হবে। তারা সংস্কার এবং বিচারের কথা না বলে শুধুই নির্বাচনের কথা বলছে। আমরা তার পক্ষে কীভাবে দাঁড়াব?
শরীফ ওসমান হাদি আরও বলেন, এই সরকারের তিনটা কাজ ছিল। তারা ফোকাস ছাড়িয়ে কতক্ষণ নদীনালা খনন করেন, কতক্ষণ খাল খনন করেন, করিডোর নিয়ে কথা বলেন। তার প্রধান ফোকাস ছিল জুলাই গণহত্যার বিচার। তার দ্বিতীয় ফোকাস- মৌলিক সংস্কার, তৃতীয় ফোকাস-কত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া যায়।
- বিষয় :
- অন্তর্বর্তী সরকার