- বন্দর নগরী
- ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির রক্ষার ডাক ধর্মীয় নেতাদের
ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির রক্ষার ডাক ধর্মীয় নেতাদের

দুর্গাপূজার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষাপটে সব ধর্মের নেতারা একই মঞ্চে ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির ডাক দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় সম্প্রীতি বাড়াতে হবে। ধর্মীয় নেতাদের ঐক্য এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রোববার রাজধানীর গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এক সেমিনারে নেতারা এই সম্প্রীতির ডাক দেন। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের উদ্যোগে (বিটিএফ) ‘শান্তি ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে আন্তঃধর্মীয় ঐক্য’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজিত হয়।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়দায়িত্ব অন্যান্য ধর্মানুসারীদের হেফাজত করা। সংখ্যালঘু কথাটি সংবিধানসিদ্ধ নয়। এটা আমাদের আবিস্কার। আমাদের শপথ হবে একটাই, বাঁচার লড়াইয়ের জন্য সকল ধর্মীয় নেতারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে আগামী দিনের শান্তির জন্য।’
কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় ওসি কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে দেশ ও জাতির সামনে ঘটনাটিকে হাইলাইট করেছেন। ওসির দায়িত্ব ছিল বিষয়টিকে হাইড করা, যাতে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা না হয়। এটা কোরআন শরীফ অবমাননা। ওসির এই ঘটনাও সাম্প্রদায়িক উস্কানির মধ্যে পড়ে। তিনি দায়িত্বশীল হলে কুমিল্লার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটত না।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জঙ্গিবাদী মন-মানসিকতার লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু বিএনপি-জামায়াতের কথা বলে দায় এড়ানো যাবে না। সকল ধর্মের লোকদের যার যার ধর্ম পালন করার সুযোগ করে দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব।’
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ার সংস্কৃতির কারণে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। কুমিলল্গার ঘটনার বিচার না হলে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।’
তরিকত ফেডারেশনের ধর্মীয় ঐক্যের ডাক ‘অত্যন্ত প্রশংসনীয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনান্দপ্রিয় বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও উস্কানি সৃষ্টির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তাই ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
চার্চ অব বাংলাদেশের ভিশক সৌরভ ফলিও বলেন, ‘কোনো ধর্মেই প্রতিবেশীকে ঘৃণা করার কথা বলা হয়নি। অথচ দেশে সেটাই যেন ঘটে চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আমরা যা দেখেছি, তাতে সৃষ্টিকর্তাও খুশি হননি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিশুদের মধ্যে যে বীজ বপন করে দেব, সেভাবেই তারা গড়ে উঠবে। ধর্মীয় শিক্ষার বইয়ে সব শিশুর জন্য একই শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। সকল শিশুরা জানুক সৃষ্টিকর্তা এক, সব মানুষ এক, সবাইকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে।’
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, ‘দেশের ধর্মীয় শিক্ষা কারিকুলামে যেন সকল ধর্মের জন্য থাকে ৫০ মার্কস এবং নিজ ধর্মের জন্য থাকবে ৫০ মার্কস। তাহলে শিশুদের মধ্যে শৈশবকাল থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে উঠবে।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, ইসলামী চিন্তবিদ ড. আহসানুল হাদী, মহিলা পরিষদের নেত্রী জয়ন্তী রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান মিয়াজী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দীন আত-তাহেরী প্রমুখ। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন