
দুর্নীতি ও পারিবারিক প্রশ্রয়
সমাজ
৩১ মে ১৮ । ০০:০০
ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কিছুটা আক্ষেপ ও উদ্বেগ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, বহু নারী বিশেষত স্ত্রী বা নিকটাত্মীয়রা অনেক ক্ষেত্রে কিছু না জেনেই তাদের স্বামী বা অন্য নিকটজনের দুর্নীতির জন্য দায়ী হচ্ছেন। তিনি পাশাপাশি এও মন্তব্য করেছেন, অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীদের ভয়ে দুর্নীতিতে জড়াতে দ্বিধা করেন। তার দ্বিতীয় মন্তব্যটি কতটুকু সঠিক, সে ব্যাপারে হয়তো কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া দুস্কর। তবে এটি যদি সত্য হয়, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। শুধু ধারণা করা যায়, আমাদের মতো দেশে যেখানে পারিবারিক বন্ধন এখনও তুলনামূলক দৃঢ়, সেখানে এ ধরনের প্রবণতা আছে। কিন্তু তার প্রথম মন্তব্যটির বস্তুনিষ্ঠতা প্রশ্নসাপেক্ষ বা বড়জোর একে অতি সরলীকরণ বলা যায়। দুদক চেয়ারম্যানের মন্তব্যের মাধ্যমে কীভাবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় এবং দুর্নীতি ও পরিবারের সম্পর্ক; বিশেষত স্ত্রী বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের দুর্নীতিতে কী ধরনের ভূমিকা থাকতে পারে?
এ দেশে দুর্নীতিবাজ অনেক আমলা ও রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে বেনামে সম্পদ রাখার একটা প্রবণতা আছে। বিশেষত নিজের অবৈধভাবে আয় করা অর্থ-সম্পদ স্ত্রী বা অন্য নিকট আত্মীয়দের নামে রাখা নতুন কোনো প্রবণতা নয়। বছর কয়েক আগে বিশ্বব্যাংকের আংশিক অর্থায়নে ব্র্যাক ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে যা ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামে পরিচিত) খণ্ডকালীন পরামর্শক হিসেবে কাজ করার সময় ভূমি প্রশাসন মূল্যায়ন কাঠামো সম্পর্কিত প্রজেক্টের এক সেমিনারে একজন অংশগ্রহণকারী যিনি দীর্ঘদিন ভূমি প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত, তিনিও এ রকম একটি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে, অনেক দুর্নীতিবাজ মানুষই নিজের দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য বেনামে স্ত্রীর নামে জমির মালিক হয়ে থাকেন। আমি ওই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলাম যে- এমনও হতে পারে, এ দেশে অনেক রুই-কাতলারা তাদের স্ত্রীর প্রতি এত অনুরক্ত যে, তারা নিজের চেয়ে স্ত্রীর নামেই সম্পদ কিনতে ভালোবাসেন; হয়তো এই সবিশেষ ভালোবাসা আমাদের সাধারণ বোধের বাইরে।
ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নিয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই। ওই গবেষণা রিপোর্টের ওয়ার্কশপগুলোতে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের কেউও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেননি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বিবাহিত নারীর নামে থাকা ভূমি যে তার স্বামীর দুর্নীতিতে অর্জিত টাকায় কেনা, এ নিয়ে অনেকেই একমত হবেন। একইভাবে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা শেয়ার বা অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রেও মালিকানার একই ধরন থাকার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আসলেই এই স্ত্রীরা বা অন্য আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যারা সম্পদের কাগুজে মালিক, তারা কিছু না জেনেই পুরোপুরি অন্ধকারে থেকেই দুর্নীতির সহায়ক হন- এটা প্রায় অবিশ্বাস্য। খুব বড় কিছু মনীষী ছাড়া, আমরা বাদবাকি সবাই কমবেশি আত্মকেন্দ্রিক। তাই যখনই আমরা স্বেচ্ছায় নিজের সম্পদ অন্যের নামে রাখি, তখনই অন্য মানুষের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, এর কারণটি অবশ্যই সরল নয়, বরং গরল।
ব্রিটিশ আমলে আমাদের আইনে 'পর্দানশিন নারী' বলে এক বিশেষ টার্মের ব্যবহার করা হতো এবং তাদের সুরক্ষার জন্য কিছু বিধান রাখা হতো। এখানে পর্দানশিন নারী বলতে যারা ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন ধরনের পর্দাপ্রথা অনুসরণ করে থাকেন, ঠিক তাদেরকে বোঝানো হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে এমন নারীদের বোঝানো হতো, যারা পরিবারের বাইরে দিন-দুনিয়ার হাল-হকিকত সম্পর্কে কিছু জানতেন না। আমাদের কিছু আইনে এখনও এই টার্মের অস্তিত্ব থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে হালের বাংলাদেশে এ ধরনের নারী আদৌ আছেন কিনা, বিশেষত সমাজের সেই অভিজাত অংশে, যে অংশ বড় বড় দুর্নীতির সুবিধাভোগী, তা গুরুতর প্রশ্নের দাবি রাখে।
আর দিন-দুনিয়ার হাল-হকিকত জানুন বা না জানুন, প্রায় সব স্ত্রীই তার স্বামীর আয়-ব্যয় সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থাকার কথা। যদি তা নাও থাকে অর্থের ধর্মই হলো, কথা বলে। বিশেষত বিনা পরিশ্রমে বা খুব স্বল্প পরিশ্রমে পাওয়া অর্থ আরও বেশি করে কথা বলার কথা। যখন কোনো মানুষ অবৈধ অর্থবিত্তের মালিক হয়, প্রায় সবসময়ই তার এই অর্থবিত্তের কোনো না কোনো প্রতিফলন তার জীবনযাপনে পড়বে। এমনকি কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর অবৈধ আয় সম্পর্কে সরাসরি নাও জানেন, স্বামীর ব্যয়ের বহর থেকেই তার এ ব্যাপারে আঁচ করতে বিন্দুমাত্র বেগ পাওয়ার কথা নয়। তাই কোনো নারী না জেনেই অবৈধ সম্পত্তির মালিক হন- এটা সত্যের বড় অপলাপ বলেই মনে হয়। বরং এ ধরনের আলগাপটকা মন্তব্য দুস্কর্মের সহযোগীর অপরাধকে হালকা করে এবং সমাজকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল করতে পারে। দুর্নীতি করা যেমন অপরাধ, ঠিক একইভাবে দুর্নীতির অর্থ গোপনে সহায়তা করাও গুরুতর অপরাধ। কারণ এই দুই কাজ একে অন্যের পরিপূরক।
আমাদের সমাজে পরিবারের একটি খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই আমরা যতদিন পরিবার থেকে দুর্নীতিকে ঘৃণা করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারব, ততদিন আইন করে দুর্নীতি কমানো অত্যন্ত দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো ব্যক্তির দুর্নীতির সুবিধাভোগী সে একা নয়, বরং কমবেশি তার সব নিকটজনই। তাই কেউ যদি পরিবার-পরিজন থেকে প্রশ্রয় না পায়, তার দুর্নীতিতে জড়ানোটা, বিশেষত দুর্নীতিলব্ধ অর্থের মজা লোটা অনেক কঠিন ব্যাপার। আমরা এমনকি সামাজিকভাবে বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা ছেলের বেতনের চেয়ে 'উপরি' কত, সেই হিসাবটাই বেশি করে থাকি। এভাবে আমরা হবু স্ত্রীকে একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিই, তোমার স্বামীর আয় যতক্ষণ আছে, এটা বৈধ না অবৈধ, এ নিয়ে কোনো পরোয়া করো না।
আমরা এখানে বলছি না যে, কোনো ব্যক্তির দুর্নীতির দায় তার স্ত্রীর বা অন্যান্য পরিবার-পরিজনের। কাজ যার, দায় তার। কিন্তু দুর্নীতির পাশাপাশি দুর্নীতিলব্ধ সম্পদের মালিকানা নেওয়াও একই ধরনের একটা গুরুতর অপরাধ এবং এই দুটি পৃথক অপরাধ। আজ থেকে দুই দশক আগে এক কলেজ পড়ুয়া সাহসী তরুণের কথা জানতাম, যার বাবা ঘুষ নিতেন বলে সে নিজের টিউশনির উপার্জন করা টাকায় চলত, বাবার টাকাকে সে ঘৃণাভরে উপেক্ষা করত। ছেলেটির এই উপেক্ষা হয়তো তার বাবার দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেনি ঠিকই; কিন্তু তাকে যে অস্বস্তি ও অপমানের জ্বালায় ফেলত, তা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। কারণ অবশ্যই একজন দুর্নীতিবাজ বাবাও আর দশটা বাবার মতোই বাবা। আমাদের সবার মেরুদণ্ড সেই তরুণের মতো হওয়া সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে অনেক স্ত্রী দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষার জন্য স্বামীর অবৈধ অর্থের রক্ষী হতে বাধ্য হতে পারেন; কিন্তু আমরা যদি দুর্নীতির সহায়কদের (বিশেষ করে যখন এই সহায়তাটা বাধ্যতাবশত নয়) প্রতি অযাচিত সহানুভূতি দেখাই, তাহলে আমরা দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেই, যা সমাজে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করতে পারে।
সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
এ দেশে দুর্নীতিবাজ অনেক আমলা ও রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে বেনামে সম্পদ রাখার একটা প্রবণতা আছে। বিশেষত নিজের অবৈধভাবে আয় করা অর্থ-সম্পদ স্ত্রী বা অন্য নিকট আত্মীয়দের নামে রাখা নতুন কোনো প্রবণতা নয়। বছর কয়েক আগে বিশ্বব্যাংকের আংশিক অর্থায়নে ব্র্যাক ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে যা ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ নামে পরিচিত) খণ্ডকালীন পরামর্শক হিসেবে কাজ করার সময় ভূমি প্রশাসন মূল্যায়ন কাঠামো সম্পর্কিত প্রজেক্টের এক সেমিনারে একজন অংশগ্রহণকারী যিনি দীর্ঘদিন ভূমি প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত, তিনিও এ রকম একটি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে, অনেক দুর্নীতিবাজ মানুষই নিজের দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য বেনামে স্ত্রীর নামে জমির মালিক হয়ে থাকেন। আমি ওই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলাম যে- এমনও হতে পারে, এ দেশে অনেক রুই-কাতলারা তাদের স্ত্রীর প্রতি এত অনুরক্ত যে, তারা নিজের চেয়ে স্ত্রীর নামেই সম্পদ কিনতে ভালোবাসেন; হয়তো এই সবিশেষ ভালোবাসা আমাদের সাধারণ বোধের বাইরে।
ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নিয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই। ওই গবেষণা রিপোর্টের ওয়ার্কশপগুলোতে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের কেউও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেননি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বিবাহিত নারীর নামে থাকা ভূমি যে তার স্বামীর দুর্নীতিতে অর্জিত টাকায় কেনা, এ নিয়ে অনেকেই একমত হবেন। একইভাবে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা শেয়ার বা অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রেও মালিকানার একই ধরন থাকার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আসলেই এই স্ত্রীরা বা অন্য আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যারা সম্পদের কাগুজে মালিক, তারা কিছু না জেনেই পুরোপুরি অন্ধকারে থেকেই দুর্নীতির সহায়ক হন- এটা প্রায় অবিশ্বাস্য। খুব বড় কিছু মনীষী ছাড়া, আমরা বাদবাকি সবাই কমবেশি আত্মকেন্দ্রিক। তাই যখনই আমরা স্বেচ্ছায় নিজের সম্পদ অন্যের নামে রাখি, তখনই অন্য মানুষের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, এর কারণটি অবশ্যই সরল নয়, বরং গরল।
ব্রিটিশ আমলে আমাদের আইনে 'পর্দানশিন নারী' বলে এক বিশেষ টার্মের ব্যবহার করা হতো এবং তাদের সুরক্ষার জন্য কিছু বিধান রাখা হতো। এখানে পর্দানশিন নারী বলতে যারা ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন ধরনের পর্দাপ্রথা অনুসরণ করে থাকেন, ঠিক তাদেরকে বোঝানো হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে এমন নারীদের বোঝানো হতো, যারা পরিবারের বাইরে দিন-দুনিয়ার হাল-হকিকত সম্পর্কে কিছু জানতেন না। আমাদের কিছু আইনে এখনও এই টার্মের অস্তিত্ব থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে হালের বাংলাদেশে এ ধরনের নারী আদৌ আছেন কিনা, বিশেষত সমাজের সেই অভিজাত অংশে, যে অংশ বড় বড় দুর্নীতির সুবিধাভোগী, তা গুরুতর প্রশ্নের দাবি রাখে।
আর দিন-দুনিয়ার হাল-হকিকত জানুন বা না জানুন, প্রায় সব স্ত্রীই তার স্বামীর আয়-ব্যয় সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থাকার কথা। যদি তা নাও থাকে অর্থের ধর্মই হলো, কথা বলে। বিশেষত বিনা পরিশ্রমে বা খুব স্বল্প পরিশ্রমে পাওয়া অর্থ আরও বেশি করে কথা বলার কথা। যখন কোনো মানুষ অবৈধ অর্থবিত্তের মালিক হয়, প্রায় সবসময়ই তার এই অর্থবিত্তের কোনো না কোনো প্রতিফলন তার জীবনযাপনে পড়বে। এমনকি কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর অবৈধ আয় সম্পর্কে সরাসরি নাও জানেন, স্বামীর ব্যয়ের বহর থেকেই তার এ ব্যাপারে আঁচ করতে বিন্দুমাত্র বেগ পাওয়ার কথা নয়। তাই কোনো নারী না জেনেই অবৈধ সম্পত্তির মালিক হন- এটা সত্যের বড় অপলাপ বলেই মনে হয়। বরং এ ধরনের আলগাপটকা মন্তব্য দুস্কর্মের সহযোগীর অপরাধকে হালকা করে এবং সমাজকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল করতে পারে। দুর্নীতি করা যেমন অপরাধ, ঠিক একইভাবে দুর্নীতির অর্থ গোপনে সহায়তা করাও গুরুতর অপরাধ। কারণ এই দুই কাজ একে অন্যের পরিপূরক।
আমাদের সমাজে পরিবারের একটি খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই আমরা যতদিন পরিবার থেকে দুর্নীতিকে ঘৃণা করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারব, ততদিন আইন করে দুর্নীতি কমানো অত্যন্ত দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো ব্যক্তির দুর্নীতির সুবিধাভোগী সে একা নয়, বরং কমবেশি তার সব নিকটজনই। তাই কেউ যদি পরিবার-পরিজন থেকে প্রশ্রয় না পায়, তার দুর্নীতিতে জড়ানোটা, বিশেষত দুর্নীতিলব্ধ অর্থের মজা লোটা অনেক কঠিন ব্যাপার। আমরা এমনকি সামাজিকভাবে বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা ছেলের বেতনের চেয়ে 'উপরি' কত, সেই হিসাবটাই বেশি করে থাকি। এভাবে আমরা হবু স্ত্রীকে একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিই, তোমার স্বামীর আয় যতক্ষণ আছে, এটা বৈধ না অবৈধ, এ নিয়ে কোনো পরোয়া করো না।
আমরা এখানে বলছি না যে, কোনো ব্যক্তির দুর্নীতির দায় তার স্ত্রীর বা অন্যান্য পরিবার-পরিজনের। কাজ যার, দায় তার। কিন্তু দুর্নীতির পাশাপাশি দুর্নীতিলব্ধ সম্পদের মালিকানা নেওয়াও একই ধরনের একটা গুরুতর অপরাধ এবং এই দুটি পৃথক অপরাধ। আজ থেকে দুই দশক আগে এক কলেজ পড়ুয়া সাহসী তরুণের কথা জানতাম, যার বাবা ঘুষ নিতেন বলে সে নিজের টিউশনির উপার্জন করা টাকায় চলত, বাবার টাকাকে সে ঘৃণাভরে উপেক্ষা করত। ছেলেটির এই উপেক্ষা হয়তো তার বাবার দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেনি ঠিকই; কিন্তু তাকে যে অস্বস্তি ও অপমানের জ্বালায় ফেলত, তা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। কারণ অবশ্যই একজন দুর্নীতিবাজ বাবাও আর দশটা বাবার মতোই বাবা। আমাদের সবার মেরুদণ্ড সেই তরুণের মতো হওয়া সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে অনেক স্ত্রী দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষার জন্য স্বামীর অবৈধ অর্থের রক্ষী হতে বাধ্য হতে পারেন; কিন্তু আমরা যদি দুর্নীতির সহায়কদের (বিশেষ করে যখন এই সহায়তাটা বাধ্যতাবশত নয়) প্রতি অযাচিত সহানুভূতি দেখাই, তাহলে আমরা দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেই, যা সমাজে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করতে পারে।
সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com