
ঠিকানাবিহীন ৪০ লাখ মানুষ!
আসাম
০২ আগস্ট ১৮ । ০০:০০
পাণিনি আনন্দ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে যখন ৪০ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক চলছে, তখন আমার মনে পড়ছে রাজা উশিনারার ঘটনা। ঘটনাটি মহাভারতের, যেটি আসলে একটি চমৎকার উদাহরণ যে, আমরা কীভাবে পোস্ট অফিসহীন মানুষের সঙ্গে আচরণ করব এবং তাদের রক্ষা করব।
ঘটনা হলো, একদিন এক ঘুঘু পাখি রাজা উশিনারার আদালতে আশ্রয় প্রার্থনা করে। পাখিটিকে একটি বাজপাখি দৌড়াচ্ছিল। রাজা বাজপাখিকে বলল, ঘুঘু পাখি তার আশ্রয়ে রয়েছে। সুতরাং তার দায়িত্ব হলো পাখিটিকে রক্ষা করা। উত্তরে বাজপাখি বলল, ঘুঘু হলো তার খাদ্য, তাকে না খেলে উপোস থাকতে হবে, সেটা সম্ভব নয়। তখন রাজা বলল, ঘুঘুর বদলে যে কোনো কিছু খেতে পার। কিন্তু বাজপাখি সিদ্ধান্তে অনড়, ঘুঘুই তার চাই। অবশেষে বাজপাখি বলল, আপনি যদি ঘুঘু পাখিকে রক্ষা করতেই চান, তাহলে আপনার শরীর থেকে কিছু গোশত দিন; তা আমি খাব। রাজা উশিনারা এ শর্তে রাজি হলেন এবং তার শরীরের গোশত থেকে বাজপাখিকে খেতে বললেন।
এ ঘটনার এক গভীর তাৎপর্য আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আমরা বাংলাদেশি শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছিলাম। তারা হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষই ছিল। যদিও আমাদের কাছে তাদের বড় পরিচয় মানুষ, মানুষ হিসেবেই আমরা তাদের সংকটে আশ্রয় দিয়েছিলাম। আর আজ আসামে খাঁটি ভারতীয়দের বাস নিশ্চিত করার জন্য আমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি; তাতে ৪০ লাখ মানুষ এখন দেশে অবৈধ নাগরিক হয়ে গেছে।
৩০ জুলাই আসামে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তথা এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ হয়। সেখানে তিন কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে দুই কোটি ৮৯ লাখ আবেদনকারী নাগরিক হিসেবে বৈধতা পায়। বাদ পড়ে ৪০ লাখ মানুষ।
যখন বর্তমান সরকার আসামে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করছিল, তখন অনেকের মধ্যেই এক আতঙ্ক দেখা গেছে। সেটা যেমন ডিটেনশন ক্যাম্পের মানুষ থেকে বৃদ্ধ নারী পর্যন্ত; এমনকি স্কুলপড়ূয়া অনেক কিশোর যে দেশ-জাতিকে নিয়ে একটি উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখছিল, তার মধ্যেও দেখা গেছে আতঙ্ক।
সীমান্ত মানুষের তৈরি। নাগরিকত্বের ধারণাও মানুষেরই দেওয়া। সব মানুষ পৃথিবীতে একেক জায়গায় জন্মগ্রহণ করে। নানা কারণে ও জটিলতায়, জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে, এক জাতি থেকে অন্য জাতিতে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায়। সাগর, নদী, পাহাড়-পর্বত মাড়িয়ে যায়।
মুম্বাই, দিল্লির মতো শহরের বস্তিগুলোতে যে অনেক মানুষ বাস করে, তারা তেমন কোনো প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দাপ্তরিক বৈধতা নিয়ে কি থাকছে! মানুষ এসব শহরে এসে বাস করছে, নিজেদের ঘর উঠাচ্ছে। এসব মেগা সিটিতে অনেকে আমাদের উপকারী হিসেবে কাজ করছে। তারা আমাদের সব ধরনের কাজে সহযোগিত করে। আমাদের আরামপ্রদ ও উন্নত জীবনযাপনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ এর বিপরীতে তারা নোংরা পরিবেশে; যথাযথ পানি, পয়ঃনিস্কাশন সুবিধা না পেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছে। এদের অনেকেই হয়তো অভিবাসী, অনেক সময় বড় উন্নয়ন কাজে তাদের বস্তির জায়গাও ছাড়তে হয়।
প্রশ্ন হলো এই যে, বস্তি গড়ে উঠল, তার সূচনাতেই কেন প্রশাসন সক্রিয় হলো না কিংবা যখন কোনো অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে, তখনই কেন তাকে বাধা দেওয়া হলো না? তাহলে আমরা কি ধারণা করব, সীমান্ত বাহিনীকে ঘুষ দিয়ে তাদের যোগসাজশে এসব অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে? আর এখন এদেরই কেউ যদি অবৈধ ঘোষিত হয়ে থাকে, তার দায় কার?
এখন আমাদের সীমান্ত নিরাপদ আছে ঠিক আছে; তবে প্রয়োজন অনুপ্রেবেশ রোধে ব্যবস্থা করা। যা হোক, অভিবাসীদের পরিচয় শনাক্ত করা জরুরি ঠিক আছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের নিজেদের নাগরিকই অবৈধের তালিকায় পড়ে যায়, তার সমাধান কী? এখানে কিছু বিষয় রয়েছে। কিংবা নানা কারণেও ভারতীয় নাগরিকরাই অবৈধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মধ্যে যেমন বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়-আশয় কিংবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া বা কাজ সংক্রান্ত অভিবাসন এবং সাক্ষরতা জ্ঞান না থাকার কারণে সঠিক কাগজপত্র না থাকা কিংবা সামাজিক জাত, ধর্ম ও ভাষাগত কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে ভারতীয় নাগরিকেরও এ অবস্থায় নাগরিকত্ব নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে।
যদিও এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় বাদপড়া ৪০ লাখ মানুষ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ বা কাগজপত্রের ভিত্তিতে পুনরায় আবেদন জানাতে পারবেন। ততদিন পর্যন্ত কাউকেই অবৈধ অভিবাসী বলে ঘোষণা করা যাবে না। আবেদন করার জন্য প্রত্যেক জনগণকে পর্যাপ্ত এবং যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে। বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
তারপরও বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারতের দুই রাজ্যের দুই প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে শঙ্কা, উদ্বেগ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম, যাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে; তাদের আসাম রাজ্যের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
ছয়টি কারাগারে অবৈধ অভিবাসীদের আটক রাখার জন্য যে ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে উপচে পড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ডিটেনশন সেন্টার খোলার জন্য বড় আকারের বরাদ্দ দিয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কয়েক দশক ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ এ অঞ্চলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে। যদিও দেশটির এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। তবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে বাংলাদেশের যারা আসামে রয়েছে, হিসাব অনুযায়ী তারা বৈধ নাগরিক। এর পরে যারা এসেছে, তারা অবৈধ।
এমতাবস্থায় কোনো সরকারেরই উচিত হবে না, ভারতীয় কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব হরণ করা। এটা বাস্তব যে, অভিবাসী বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের বিজয়ী ফ্রান্স দলে অভিবাসী রয়েছে, শ্রীলংকার তামিলরাও অভিবাসী। অভিবাসী একটি বাস্তবতা। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে মানবিক ও সম্মানের আচরণ করা প্রয়োজন। কারণ তারাও মানুষ।
সব অভিবাসী যেমন অপরাধী নয়, তেমনি সব নাগরিকও রাষ্ট্রের আইন মেনে চলে না। সীমান্ত রাজ্য আসামের এনআরসি এক আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। আমরা মনে করি, গৃহযুদ্ধ উস্কে দেওয়ার পরিবর্তে এ সমস্যার সম্মানজনক ও দায়িত্বশীল সমাধান প্রয়োজন।
ডেইলি ও ডট আইএন থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক
ঘটনা হলো, একদিন এক ঘুঘু পাখি রাজা উশিনারার আদালতে আশ্রয় প্রার্থনা করে। পাখিটিকে একটি বাজপাখি দৌড়াচ্ছিল। রাজা বাজপাখিকে বলল, ঘুঘু পাখি তার আশ্রয়ে রয়েছে। সুতরাং তার দায়িত্ব হলো পাখিটিকে রক্ষা করা। উত্তরে বাজপাখি বলল, ঘুঘু হলো তার খাদ্য, তাকে না খেলে উপোস থাকতে হবে, সেটা সম্ভব নয়। তখন রাজা বলল, ঘুঘুর বদলে যে কোনো কিছু খেতে পার। কিন্তু বাজপাখি সিদ্ধান্তে অনড়, ঘুঘুই তার চাই। অবশেষে বাজপাখি বলল, আপনি যদি ঘুঘু পাখিকে রক্ষা করতেই চান, তাহলে আপনার শরীর থেকে কিছু গোশত দিন; তা আমি খাব। রাজা উশিনারা এ শর্তে রাজি হলেন এবং তার শরীরের গোশত থেকে বাজপাখিকে খেতে বললেন।
এ ঘটনার এক গভীর তাৎপর্য আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আমরা বাংলাদেশি শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছিলাম। তারা হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষই ছিল। যদিও আমাদের কাছে তাদের বড় পরিচয় মানুষ, মানুষ হিসেবেই আমরা তাদের সংকটে আশ্রয় দিয়েছিলাম। আর আজ আসামে খাঁটি ভারতীয়দের বাস নিশ্চিত করার জন্য আমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি; তাতে ৪০ লাখ মানুষ এখন দেশে অবৈধ নাগরিক হয়ে গেছে।
৩০ জুলাই আসামে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তথা এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ হয়। সেখানে তিন কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে দুই কোটি ৮৯ লাখ আবেদনকারী নাগরিক হিসেবে বৈধতা পায়। বাদ পড়ে ৪০ লাখ মানুষ।
যখন বর্তমান সরকার আসামে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করছিল, তখন অনেকের মধ্যেই এক আতঙ্ক দেখা গেছে। সেটা যেমন ডিটেনশন ক্যাম্পের মানুষ থেকে বৃদ্ধ নারী পর্যন্ত; এমনকি স্কুলপড়ূয়া অনেক কিশোর যে দেশ-জাতিকে নিয়ে একটি উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখছিল, তার মধ্যেও দেখা গেছে আতঙ্ক।
সীমান্ত মানুষের তৈরি। নাগরিকত্বের ধারণাও মানুষেরই দেওয়া। সব মানুষ পৃথিবীতে একেক জায়গায় জন্মগ্রহণ করে। নানা কারণে ও জটিলতায়, জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে, এক জাতি থেকে অন্য জাতিতে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায়। সাগর, নদী, পাহাড়-পর্বত মাড়িয়ে যায়।
মুম্বাই, দিল্লির মতো শহরের বস্তিগুলোতে যে অনেক মানুষ বাস করে, তারা তেমন কোনো প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দাপ্তরিক বৈধতা নিয়ে কি থাকছে! মানুষ এসব শহরে এসে বাস করছে, নিজেদের ঘর উঠাচ্ছে। এসব মেগা সিটিতে অনেকে আমাদের উপকারী হিসেবে কাজ করছে। তারা আমাদের সব ধরনের কাজে সহযোগিত করে। আমাদের আরামপ্রদ ও উন্নত জীবনযাপনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ এর বিপরীতে তারা নোংরা পরিবেশে; যথাযথ পানি, পয়ঃনিস্কাশন সুবিধা না পেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করছে। এদের অনেকেই হয়তো অভিবাসী, অনেক সময় বড় উন্নয়ন কাজে তাদের বস্তির জায়গাও ছাড়তে হয়।
প্রশ্ন হলো এই যে, বস্তি গড়ে উঠল, তার সূচনাতেই কেন প্রশাসন সক্রিয় হলো না কিংবা যখন কোনো অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে, তখনই কেন তাকে বাধা দেওয়া হলো না? তাহলে আমরা কি ধারণা করব, সীমান্ত বাহিনীকে ঘুষ দিয়ে তাদের যোগসাজশে এসব অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে? আর এখন এদেরই কেউ যদি অবৈধ ঘোষিত হয়ে থাকে, তার দায় কার?
এখন আমাদের সীমান্ত নিরাপদ আছে ঠিক আছে; তবে প্রয়োজন অনুপ্রেবেশ রোধে ব্যবস্থা করা। যা হোক, অভিবাসীদের পরিচয় শনাক্ত করা জরুরি ঠিক আছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের নিজেদের নাগরিকই অবৈধের তালিকায় পড়ে যায়, তার সমাধান কী? এখানে কিছু বিষয় রয়েছে। কিংবা নানা কারণেও ভারতীয় নাগরিকরাই অবৈধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মধ্যে যেমন বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়-আশয় কিংবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া বা কাজ সংক্রান্ত অভিবাসন এবং সাক্ষরতা জ্ঞান না থাকার কারণে সঠিক কাগজপত্র না থাকা কিংবা সামাজিক জাত, ধর্ম ও ভাষাগত কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে ভারতীয় নাগরিকেরও এ অবস্থায় নাগরিকত্ব নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে।
যদিও এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় বাদপড়া ৪০ লাখ মানুষ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ বা কাগজপত্রের ভিত্তিতে পুনরায় আবেদন জানাতে পারবেন। ততদিন পর্যন্ত কাউকেই অবৈধ অভিবাসী বলে ঘোষণা করা যাবে না। আবেদন করার জন্য প্রত্যেক জনগণকে পর্যাপ্ত এবং যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে। বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
তারপরও বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারতের দুই রাজ্যের দুই প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে শঙ্কা, উদ্বেগ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম, যাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে; তাদের আসাম রাজ্যের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
ছয়টি কারাগারে অবৈধ অভিবাসীদের আটক রাখার জন্য যে ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে উপচে পড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ডিটেনশন সেন্টার খোলার জন্য বড় আকারের বরাদ্দ দিয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কয়েক দশক ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ এ অঞ্চলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে। যদিও দেশটির এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। তবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে বাংলাদেশের যারা আসামে রয়েছে, হিসাব অনুযায়ী তারা বৈধ নাগরিক। এর পরে যারা এসেছে, তারা অবৈধ।
এমতাবস্থায় কোনো সরকারেরই উচিত হবে না, ভারতীয় কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব হরণ করা। এটা বাস্তব যে, অভিবাসী বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের বিজয়ী ফ্রান্স দলে অভিবাসী রয়েছে, শ্রীলংকার তামিলরাও অভিবাসী। অভিবাসী একটি বাস্তবতা। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে মানবিক ও সম্মানের আচরণ করা প্রয়োজন। কারণ তারাও মানুষ।
সব অভিবাসী যেমন অপরাধী নয়, তেমনি সব নাগরিকও রাষ্ট্রের আইন মেনে চলে না। সীমান্ত রাজ্য আসামের এনআরসি এক আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। আমরা মনে করি, গৃহযুদ্ধ উস্কে দেওয়ার পরিবর্তে এ সমস্যার সম্মানজনক ও দায়িত্বশীল সমাধান প্রয়োজন।
ডেইলি ও ডট আইএন থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com