
শিক্ষক যখন 'মডেল'
১৯ আগস্ট ১৯ । ০০:০০
মাহফুজুর রহমান মানিক
সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা অনন্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানা সমস্যা ও চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও এখানকার শিক্ষকরা শিক্ষাদানসহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা দায়িত্ব পালনে নিরলস ভূমিকা পালন করে আসছেন। দেশের অনেক মেধাবীও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আগ্রহী হচ্ছেন। এমনকি বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারদের অনেকে এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তবে একই জাতীয় বিদ্যালয়ের মধ্যেও আমরা মানের দিক থেকে আকাশ-পাতাল ফারাক দেখি। এ কারণেই আমরা দেখছি, সরকার 'মডেল শিক্ষক' পুল তৈরি করতে যাচ্ছে। ১৬ আগস্ট সমকালে এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যেখানে বলা হচ্ছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষকদের নিয়ে মডেল শিক্ষক তৈরি করা হবে, যারা সংশ্নিষ্ট উপজেলার পিছিয়ে পড়া বিদ্যালয়গুলোর দুর্বল শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেবেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
বলা বাহুল্য, বিদ্যালয়ের এই যে পিছিয়ে পড়া কিংবা এগিয়ে যাওয়া বিষয়টি নির্ধারিত হচ্ছে ফলের ওপর। এখন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসির কারণে কোন বিদ্যালয় কেমন 'ফল' করছে, তা সহজেই বোঝা যায়। কেবল ফলের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাওয়া বা পিছিয়ে পড়া নির্ধারণ করা কতটা যৌক্তিক। ফলের ওপর যখন এই এগোনো-পেছানোর ব্যাপারটা নির্ভরশীল, তখন এটি কেবল বিদ্যালয় বা শিক্ষার্থীর ব্যাপার। এখানে শিক্ষকদের যোগ্যতার প্রশ্নে এগোনো-পেছানোর ব্যাপার নেই। কারণ সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা একই বলে আমরা মনে করি। মডেল শিক্ষক বিষয়টি বরং শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যই তৈরি করবে। এটা হয়তো ঠিক, ওই যোগ্যতার মধ্যেও একই বিদ্যালয়ে অধিক শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক যেমন রয়েছেন, তেমনি কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকও রয়েছেন। এটা ভালো কিংবা খারাপ উভয় ফলধারী বিদ্যালয়ের জন্যই সমান। কেবল 'ভালো' ফলধারী বিদ্যালয় থেকেই 'মডেল শিক্ষক' গ্রহণ করলে একই শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন 'খারাপ' ফলধারী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দোষ কোথায়।
এই দুটি বৈষম্য সামনে রেখে যখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় 'মডেল শিক্ষক' তৈরির প্রকল্প নিচ্ছে, তখন মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য 'সকল বিদ্যালয়ের মানের ইতিবাচক পরিবর্তন' কীভাবে হাসিল হবে, তা বোধগম্য নয়। এমনকি এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদও তৈরি হয়ে গেছে। খোদ প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই অনেক শিক্ষক এর বিরোধিতা করছেন। মন্ত্রণালয় যে পদ্ধতিতে 'মডেল শিক্ষক' নির্বাচনের কথা বলছে, সে পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে যেমন দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, তেমনি দুটি বিদ্যালয়েও পরস্পরের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হতে পারে। বরং শিক্ষকদের ধারাবাহিক দু'তিন বছরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে মডেল শিক্ষক নির্বাচন করা যেতে পারে। এ রকম প্রত্যেক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বাছাই করে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য পাঠানোই যথেষ্ট হবে।
এতেও সাময়িক ফলই আসবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ও বৈষম্য রোধে যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই। শুরুতেই বলা হয়েছে, এখন অনেক মেধাবী আগ্রহী হচ্ছেন, বিসিএস নন-ক্যাডার থেকেও এখানে আসছে। কিন্তু তারপরও তাদের বেতন বৈষম্য রয়ে গেছে। এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেক দিনের যে আন্দোলন, অন্তত ১১তম গ্রেডে বেতন প্রদান ও বৈষম্য নিরসনের দাবি মেনে নেওয়া দরকার। তাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপকৃত হবেন; মেধাবীরা আরও আকৃষ্ট হবে, একই সঙ্গে প্রাথমিক
শিক্ষার মানও বাড়বে। গুটিকয়েক নয় বরং প্রত্যেক শিক্ষকই মডেল শিক্ষক হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
mahfuz.manik@gmail.com
বলা বাহুল্য, বিদ্যালয়ের এই যে পিছিয়ে পড়া কিংবা এগিয়ে যাওয়া বিষয়টি নির্ধারিত হচ্ছে ফলের ওপর। এখন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসির কারণে কোন বিদ্যালয় কেমন 'ফল' করছে, তা সহজেই বোঝা যায়। কেবল ফলের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাওয়া বা পিছিয়ে পড়া নির্ধারণ করা কতটা যৌক্তিক। ফলের ওপর যখন এই এগোনো-পেছানোর ব্যাপারটা নির্ভরশীল, তখন এটি কেবল বিদ্যালয় বা শিক্ষার্থীর ব্যাপার। এখানে শিক্ষকদের যোগ্যতার প্রশ্নে এগোনো-পেছানোর ব্যাপার নেই। কারণ সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা একই বলে আমরা মনে করি। মডেল শিক্ষক বিষয়টি বরং শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যই তৈরি করবে। এটা হয়তো ঠিক, ওই যোগ্যতার মধ্যেও একই বিদ্যালয়ে অধিক শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক যেমন রয়েছেন, তেমনি কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকও রয়েছেন। এটা ভালো কিংবা খারাপ উভয় ফলধারী বিদ্যালয়ের জন্যই সমান। কেবল 'ভালো' ফলধারী বিদ্যালয় থেকেই 'মডেল শিক্ষক' গ্রহণ করলে একই শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন 'খারাপ' ফলধারী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দোষ কোথায়।
এই দুটি বৈষম্য সামনে রেখে যখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় 'মডেল শিক্ষক' তৈরির প্রকল্প নিচ্ছে, তখন মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য 'সকল বিদ্যালয়ের মানের ইতিবাচক পরিবর্তন' কীভাবে হাসিল হবে, তা বোধগম্য নয়। এমনকি এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদও তৈরি হয়ে গেছে। খোদ প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই অনেক শিক্ষক এর বিরোধিতা করছেন। মন্ত্রণালয় যে পদ্ধতিতে 'মডেল শিক্ষক' নির্বাচনের কথা বলছে, সে পদ্ধতিতে শিক্ষকদের মধ্যে যেমন দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, তেমনি দুটি বিদ্যালয়েও পরস্পরের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হতে পারে। বরং শিক্ষকদের ধারাবাহিক দু'তিন বছরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে মডেল শিক্ষক নির্বাচন করা যেতে পারে। এ রকম প্রত্যেক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বাছাই করে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য পাঠানোই যথেষ্ট হবে।
এতেও সাময়িক ফলই আসবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ও বৈষম্য রোধে যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই। শুরুতেই বলা হয়েছে, এখন অনেক মেধাবী আগ্রহী হচ্ছেন, বিসিএস নন-ক্যাডার থেকেও এখানে আসছে। কিন্তু তারপরও তাদের বেতন বৈষম্য রয়ে গেছে। এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেক দিনের যে আন্দোলন, অন্তত ১১তম গ্রেডে বেতন প্রদান ও বৈষম্য নিরসনের দাবি মেনে নেওয়া দরকার। তাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপকৃত হবেন; মেধাবীরা আরও আকৃষ্ট হবে, একই সঙ্গে প্রাথমিক
শিক্ষার মানও বাড়বে। গুটিকয়েক নয় বরং প্রত্যেক শিক্ষকই মডেল শিক্ষক হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
mahfuz.manik@gmail.com
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com