পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিজয় দিবস উদযাপন

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ১৯ । ২২:৩৬

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ হাইকমিশন গত সোমবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে।

হাইকমিশন প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। ইসলামাবাদে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন।

এ উপলক্ষে চান্সারি প্রাঙ্গণ লাল-সবুজের সজ্জিত করা হয়। তাছাড়া, বিজয় দিবসের ব্যানার, পোস্টার ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়েও প্রাঙ্গনের শোভাবর্ধণ করা হয়।

হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসীদের উপস্থিতিতে চান্সারি প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার তারিক আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। পতাকা উত্তোলনের পর হাইকমিশনার একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন, যাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক চিত্র প্রদর্শিত হয়।

বিকেলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হাইকমিশনার ও হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।

আলোচনা পর্বে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথাসহ সংশ্লিষ্টদের অবদানের কথা বর্ণনা করেন। সংক্ষিপ্ত  বক্তব্যকালে হাইকমিশনার তারিক আহসান দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বলেন, তার আহ্বানে, অনুপ্রেরণা ও নেতৃত্বে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আবেগ ও আনন্দের মিশ্র অনুভূতির দিন, কারণ এই দিন একাধারে মুক্তির আনন্দ ও শোকের দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত একদশকে বাংলাদেশের উলেতখযোগ্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়ণের কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার জোর দিয়ে বলেন, বস্তুগত সাফল্য অর্জনই এ জাতির একমাত্র লক্ষ্য নয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অনুসারে একটি মানবিক, সমতাপূর্ণ ও সামাজিক ন্যায় বিচার বান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য। যেখানে সকল নাগরিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে। সমাজ থেকে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মাদক, দুর্নীতি ইত্যাদি অপশক্তি দূর করার উপর তিনি জোর দেন। সমাজের এ সকল অপশক্তির বিরম্নদ্ধে বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত অভিযানে সকলকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানান।

হাইকমিশনার এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত বাংলাদেশের পাকিস্ত্মানি বন্ধুদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি সত্য ও ন্যায় বিচারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধতা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসারই প্রতিফলন।

এ ছাড়া দেশটির বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী তাহিরা আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তানে প্রজন্মের পর-প্রজন্মকে যে ভুল ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। তিনি সেই বিকৃত ইতিহাসের বিষয়ে গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের জনগণের উপর ১৯৭১ সনে সংঘটিত অত্যাচারের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার মতে অনেক পাকিস্তানি আছেন ছিলেন যারা সত্য ইতিহাস জানেন। তিনি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানান।

এরপর জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। এরপর, বিজয় দিবস পর্যন্ত সময়ের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তীতে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পরিবেশিত হয়।

পরিবেশনায় ঐতিহাসিক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পরিবেশিত গানের ছন্দে নাচ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত কবিতা পরিবেশন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচির শেষে অতিথিদের দেশীয় সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com