ঢাবিতে শিবির সন্দেহে ৪ শিক্ষার্থীকে মারধরের পর পুলিশে দিল ছাত্রলীগ

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০ । ২২:০৮ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০ । ২২:১৯

বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদাতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে হলের গেস্টরুমের ওই চার শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে আহত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ এনে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়।

মারধরের শিকার চার শিক্ষার্থী হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানোয়ার হোসেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মনিনুল হক চৌধুরী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মিনহাজ উদ্দিন এবং আরবি বিভাগের আফসার উদ্দিন। পরে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুমিন ও সানোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত মিটিং চলছিল। তখন মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজাসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রথমে  মুকিমকে মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকে। এতে কিছু স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে তারা। পরে তার ফোন থেকে ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটলিস্ট দেখে সানোয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে ডেকে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধরের এক পর্যায়ে তারা মেঝেতে শুয়ে পড়ে। এর একটু পর মিনহাজ উদ্দীন ও আফসার উদ্দীনকে গেস্টরুমে ধরে আনা হয়। সেখানে রাত দুইটা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ নেতারা।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের ভিপি সাইফুলতাহ আব্বাসী বলেন, আমাদের কাছে স্ক্রিনশট আছে যে তারা শিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এজন্য আমরা তাদের ডেকে আনি ও স্যারকে জানাই। আমরা প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলে হলের জিএস আমাদের আবাসিক শিক্ষক বিলতাল স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা তো আর বিচার করতে পারি না। পরে স্যার এসে তাদের থানায় সোপর্দ করে। মারধর ও নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিলতাল স্যার ছিলেন। কোনো মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।

জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ বিলতাল হোসেন বলেন, শুধু আমি নই, এখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক ছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করার দায়িত্ব তাদের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের মারধর করা হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না। আমার সামনে কোনো মারধর বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, তাদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে প্রক্টরিয়াল টিম থানায় দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে যদি কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। মারধর ও নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলের বিষয় আমরা দেখি না।

শাহবাগ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করেন। কিন্তু তারা কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই তাদের অভিভাবকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরা এখন কিছু বলতে পারব না। তদন্ত করে বলতে পারবো। আরো সময় লাগবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com