
আমি বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী: মুস্তফা কামাল
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০ । ২২:২৭
সমকাল প্রতিবেদক

সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল- ফাইল ছবি
দীর্ঘদিন পর সংসদের বৈঠকে বিলের ওপর আলোচনায় প্রাণবন্ত বিতর্কে একযোগে অংশ নিলেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এমপিরা। স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার সুযোগ তৈরিতে বিলটি উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলের এমপিরা। অর্থমন্ত্রী এর জবাব দিতে দাঁড়িয়ে তাকে 'ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী' বলায় উষ্মা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি নিজের 'বিশ্বের এক নম্বর' অর্থমন্ত্রীর খেতাব পাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন।
সংসদে বিলটি পাসের প্রতিবাদে বিএনপির সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। তবে জাপার সদস্যরা ওয়াকআউট না করলেও কণ্ঠভোটে অংশ নিয়ে তারা 'না' ভোট দেন। এর আগে উভয় দলের এমপিরা একে 'কালো আইন' আখ্যায়িত করে বিলের ওপর দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। তারা বলেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই আইন পাস করা হলে তার পরিণাম ভালো হবে না। এই আইনের ফলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে এবং রাষ্ট্রের অন্য সাংগঠনিক কাঠামোতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। শেয়ারবাজারে লুট, ব্যাংকের অর্থ পাচার এবং সরকারের মেগা প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ না করে অর্থমন্ত্রী এখন জনগণের পকেটে হাত দিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বিল নিয়ে সংসদে এতটা সময় ধরে আলোচনা হতে দেখা যায়নি। চলতি সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপিকে কোনো ইস্যুতে একযোগে সরকারের বিরোধিতা করতেও দেখা যায়নি।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। 'স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থার তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান বিল-২০২০' নামের বিলটি উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
গত ১৫ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়। ওইদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাষ্ট্রের স্বশাসিত সংস্থাগুলোর আর্থিক স্থিতির পরিমাণ বর্তমানে দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা আছে।
বিলে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। এ ছাড়া আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে।
বিলটি উত্থাপনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত-আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ অন্যান্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর শেষে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবের স্থিতি থেকে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমে আছে। তিনি বলেন, সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের এবং সে কারণে উদ্বৃত্ত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা সমীচীন।
বিলের সমালোচনা করে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার রাজস্ব আহরণ করে কেন উন্নয়ন করতে পারে না। শেয়ারবাজার, ব্যাংকিং খাত শেষ করে সরকারের চোখ গেছে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সীমাহীন লুটপাট হচ্ছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট ছিলেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রীও চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট। তবে নিজেকে বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী দাবি করায় তার প্রতি কটাক্ষ করে রুমিন ফারহানা বলেন, তিনি অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সাধারণ অবস্থা থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com