
বিএসএফের বাধায় পবায় পদ্মা পারাপার বন্ধ
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০ । ২০:৪৩ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০ । ২০:৪৭
রাজশাহী ব্যুরো

পবা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি সদস্যরা। ছবি: সমকাল
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধায় রাজশাহীর পবা উপজেলার খানপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে উপজেলার চরখিদিরপুর, চরতারানগর ও নবীনগরে সরাসরি খেয়ানৌকা যাতায়াত করতে পারছে না। এখন বহু পথ ঘুরে নৌকায় রাজশাহী শহর থেকে চরে যেতে হচ্ছে। এতে চরবাসী কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
এর আগে বিএসএফের বাধার কারণে পবার চরমাঝারদিয়াড়ে সরাসরি খেয়ানৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিএসএফের দাবি, পদ্মা নদীটি দক্ষিণে সরে গিয়ে ভারতের সীমানার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিরাপত্তার কারণেই তারা বাংলাদেশের নৌকাগুলো ভারতের ভেতর দিয়ে চলাচলে বাধা দিচ্ছে।
রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, আগে বিএসএফ এসব ছোটখাটো বিষয়ে নজর দেয়নি। গত অক্টোবরে রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তের বড়াল নদের মোহনায় বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে গুলিবিনিময়ে বিএসএফের এক সদস্য মারা যান। এরপর থেকেই বিএসএফ রাজশাহী সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু করেছে।
গত ৩০ জানুয়ারি বিএসএফ বাংলাদেশের গোদাগাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। প্রথম দিন বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে। পরের দিন দু'দফা পতাকা বৈঠকের সময় পরিবর্তন করে। পরে তাদের মুর্শিদাবাদ থানায় সোপর্দ করে। এই পতাকা বৈঠকে বিজিবি গুগল মানচিত্র দেখিয়ে প্রমাণ করে দেয় যে বিএসএফ বাংলাদেশের সীমানার ভেতর থেকে তাদের ধরে নিয়ে গেছে। তারপরও তারা মানতে চায়নি। একপর্যায়ে বিএসএফ বিজিবিকে জানিয়েছে, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তারা দুঃখিত।
গত ২২ জানুয়ারি রাজশাহীর পবা উপজেলার ১০ নম্বর চর এলাকা থেকে বিএসএফ ৪০০ বাংলাদেশি গরু ও ভেড়া ধরে নিয়ে যায়। এর চার দিন পর তিন দফা পতাকা বৈঠক শেষে তারা সেগুলো ফিরিয়ে দেয়। এর আগে বিএসএফ গোদাগাড়ীর খরচাকা এলাকা থেকে ১৮টি মহিষ ধরে নিয়ে যায়। চার দিন পর পতাকা বৈঠক শেষে সেগুলো ছেড়ে দেয়। এর কিছুদিন আগে বাঘা সীমান্ত থেকে দুই দফায় চারজনকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। পতাকা বৈঠকের পর দু'জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্য দু'জনকে ভারতের থানায় সোপর্দ করা হয়।
পবার চরখিদিরপুরে প্রতিদিন খেয়ানৌকায় যাত্রী পারাপার করেন মাঝি আলমগীর হোসেন। তার বাড়ি চরখিদিরপুর গ্রামেই। তিনি বলেন, নদীভাঙনের কারণে চরতারানগরের বিরাট অংশ পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে কয়েকটি সীমানা পিলারও ভেঙে পড়েছে। নদী খানিকটা ভারত সীমানায় ঢুকে পড়েছে। এবার নদীর মধ্যে একটু বেশি চর পড়ার কারণে ভারতীয় সীমানার ওই জলসীমা দিয়েই এত দিন তারা খেয়ানৌকা পারাপার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এত দিন বিএসএফ কোনো আপত্তি করেনি। তবে গত শনিবার বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের গ্রামে মাইকিং করে ওই এলাকা দিয়ে নৌকা না নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিজিবি রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, খানপুর সীমান্ত পিলারটিতেই নৌকা রাখা হতো। নদী চলে গেছে ভারতের ভেতরে। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী সেখানে চলাচলে কোনো বাধা নেই। কিন্তু বিএসএফ একটি পত্র দিয়ে তাদের জানিয়েছে, খেয়ানৌকা তাদের ক্যাম্পের খুব কাছ দিয়ে পার হচ্ছে। তাদের দেশের জলসীমার ভেতর দিয়ে তারা কোনো বাংলাদেশের নৌকা চলাচল করতে দেবে না। একেবারে বিএসএফ ক্যাম্পের পাশ দিয়ে নৌকা যাওয়ার কারণে ওরা একটু ভয়ও পাচ্ছে। এ কারণে বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে পত্রালাপ করে বিষয়টি মীমাংসার আগেই বিজিবি চাইছে না, কেউ সেখানে গিয়ে বিপদে পড়ূক। তিনি আরও জানান, সীমান্তে বিজিবিও সতর্ক রয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com