
বড়াল নদী এখন প্রভাবশালীদের দখলে
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০ । ১৯:৩২
রাজশাহী ব্যুরো

এভাবেই একটু পরপর বাঁধ দিয়ে নদী দখল করে মাছচাষ করছেন প্রভাবশালীরা -সমকাল
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বড়াল নদী ৫৪ জন প্রভাবশালীর দখলে চলে গেছে। তারা নদীতে বাঁধ দিয়ে পুকুরের মত আয়তন করে মাছ চাষ করছেন। অথচ এই নদীর মাছ বিক্রি করেই চলতো দুপাড়ের জেলে পরিবারগুলোর সংসার। কিন্তু এখন তারা আর নদীতে নামতে পারেন না। এতে পরিবার নিয়ে জেলেরা অসহায় জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, দখলদারদের সবাই প্রভাবশালী। প্রভাব খাটিয়ে তারা উপজেলার বড়ালের উৎস মুখ থেকে অনুপমপুর ও মুংলি হয়ে কালুহাটি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৪০টি ভাগে ভাগ করে মাটি দিয়ে ভরাট করাসহ বাঁশের চাটাই, কচুরিপানা, জালসহ বিভিন্নভাবে বাঁধ দিয়ে জবরদখল করে মাছ চাষ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার শাখা নদী বড়ালের উৎস মুখ থেকেই শুরু হয়েছে দখল। রুস্তমপুর কালুহাটি পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার নদী এভাবে দখল করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটির বাঁধ দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আবার কোথাও বাঁশের চাটাই ও জাল দিয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ ছাড়া হয়েছে। দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন সারদা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধুর অনুসারী ও দেহরক্ষী ঝিকরা গ্রামের দুলা মাঝি ওরফে লাঠিয়াল, বাহাদুর আলী, নজীব উদ্দীন। এদের দখলে থাকা নদীতে মাছ ধরতে গেলে নদীপাড়ের মৎস্যজীবি বাসিন্দা অনুপমপুর গ্রামের এজারুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী ও মিয়াপুরের আশকান আলীর ছেলে পিন্টুকে কয়েকমাস আগে মারপিট করা হয়। দখলদারদের বাঁধায় সাধারণ মানুষও নদীতে নামতে পারে না।
সরেজমিন নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর যেখানেই পানি কমেছে সেখানেই বাঁধ দেওয়া হয়েছে। আধা কিলোমিটার থেকে শুরু করে এক কিলোমিটার বা তার কিছু কমবেশি পরিমাণের আয়তন নিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বড়ালের উৎসমুখ থেকে রুস্তমপুর পর্যন্ত অন্তত ৪০টি বাঁধ রয়েছে। বড়ালের উৎসমুখে বাবর আলী শুকটা নামের এক ব্যক্তি বাঁধ দিয়ে মাছ ছেড়েছেন।
চারঘাট উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদশা জানান, এখন পুরো বড়াল নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীকে পুকুরের মত করে ফেলা হয়েছে। মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা রকম রাসায়নিক সার দিয়ে পানি নষ্ট করা হয়েছে। দখলদাররা নদীতে কাউকে নামতেও দিচ্ছে না। পানিতে নামার মত কোন পরিবেশও রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় দখলদারদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারেন না। গোটা নদীতে এখন ৫৪ জন দখলদার রয়েছেন। এদের তালিকা চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও রয়েছে।
সাইফুল ইসলাম বাদশা অভিযোগ করেন, ঝিকরা এলাকায় সারদা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধুর অনুসারীরা নদী দখল করেছে। আর নদীর উৎসমুখে বাবর আলী শুকটা নামের এক ব্যক্তি দখলে নিয়েছেন। তারা সবাই প্রভাবশালী। তাই সবাই তাদের ভয় পায়।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সারদা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু বলেন, আমার অনুসারীরা নদী দখলে নিয়েছে এটা ঠিক নয়। ওদের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ নেই। মাছ ছাড়া হয়েছে কিনা তাও জানি না। গরীব মানুষেরা হয়তো মাছ চাষ করে খাচ্ছে। এ বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নাই।
চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, একবার নদীর বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো। আবারো দখল হলে আবারো ভেঙে দেওয়া হবে। এটা উপজেলা পরিষদের সভাতেও সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, আইন ভেঙে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় বড়াল নদীর সাধারণ প্রবাহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হবার উপক্রম হয়েছে। এজন্য উপজেলা মৎস্য অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, নদী কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এ বিষয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com