সামান্য সতর্কতার অসামান্য অবদান

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০ । ০১:১২ | প্রিন্ট সংস্করণ

--

করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একটি দুঃসংবাদ ও সুসংবাদ পেয়েছি। বুধবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করে। আর বৃহস্পতিবারই জানা যায়, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র 'করোনা কিট' বা করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ সরঞ্জাম উৎপাদনের সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে আমরা অভিনন্দন জানাই। সরকারকেও সাধুবাদ জরুরি এই অনুমতির ক্ষেত্রে অহেতুক সময় ক্ষেপণ না করার জন্য। বস্তুত সব পক্ষের আন্তরিকতা ও সক্রিয়তাই পারে বৈশ্বিক এই দুর্যোগ থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখতে। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির পরিবার ও স্বজনদের জন্যও আমাদের গভীর সমবেদনা। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের আর কোনো নাগরিককে এভাবে প্রাণ দিতে হবে না।

এই প্রসঙ্গেই আসলে সর্বব্যাপ্ত সতর্কতা ও সবার সক্রিয়তার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা একাধিকবার বলেছি যে, সচেতন নাগরিকই হতে পারে করোনা সুরক্ষার উত্তম প্রহরী। ঘরে-বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ের সতর্কতাই এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত অবহেলা ও ঔদাসীন্য দেখা গেছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখেছি- প্রথম দিকে দেশে প্রবেশপথগুলোতে বিশেষত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। কেবল কারিগরি অসুবিধার কারণে নয়, দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলাও ছিল দৃশ্যমান। এখন আমরা বলছি, যদি প্রথম থেকেই উপযুক্ত পরীক্ষা করা হতো, তাহলে হয়তো বাংলাদেশে এই ভাইরাস বিস্তারের হার আরও কম হতো।

সবচেয়ে জরুরি ছিল, প্রবাসফেরত ব্যক্তি মাত্রই দুই সপ্তাহে স্বেচ্ছা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করা। কিন্তু বাস্তবে বিপুল অধিকাংশ প্রবাসফেরত পরিবার ও স্বজনের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছেন। আমরা আক্ষেপের সঙ্গে দেখছি, করোনাভাইরাসে দেশে প্রথম মৃত ব্যক্তি তার প্রবাসফেরত স্বজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এমনকি এ পর্যন্ত শনাক্ত সব করোনাভাইরাস আক্রান্তই হয় নিজে প্রবাসে ছিলেন অথবা প্রবাসফেরত ব্যক্তির স্বজন। আরও উদ্বেগের বিষয়, এ ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা ও প্রচার সত্ত্বেও অনেকে এখনও বিষয়টি মেনে চলছেন না। বরং লুকোচুরি করতে দেখা গেছে অনেককে। করতে হয়েছে জরিমানা। হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ শনাক্ত হওয়ার পর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা মনে করি, এই বিপজ্জনক প্রবণতা পরিহার করতেই হবে। তাদের বুঝতে হবে, তার সামান্য সতর্কতা স্বজন ও দেশবাসীর ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে দিতে পারে। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের এই মুহূর্তে দেশে না ফেরার ব্যাপারে প্রচার চালাতে পারে।

স্বেচ্ছা সঙ্গনিরোধ নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগেরও বিকল্প নেই। স্পষ্টতই প্রচার ও আবেদন-নিবেদন বহুলাংশে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা যাতে সমাজে আতঙ্ক না ছড়ায় বা হেনস্তার ঝুঁকি তৈরি না করে- এ ব্যাপারেও সতর্ক যে থাকতে হবে, আমরা আগেও বলেছি। আমরা এও বলেছিলাম যে, জনসমাগমমূলক কর্মসূচিগুলো পরিহার করা হোক। বৃহস্পতিবার সব ধরনের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কর্তৃপক্ষীয় সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রয়োজনে কোনো এলাকা সাময়িক অবরুদ্ধ বা 'লকডাউন' করে দেওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, এসব সাময়িক সতর্কতা মাত্র। ব্যক্তি বা পরিবারবিশেষের সাময়িক 'কষ্ট' বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি লাঘব করবে। ব্যক্তিবিশেষের সামান্য সতর্কতা সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য অসামান্য অবদান রাখতে পারে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com